সেরা প্রবৃদ্ধিতে থাকা পাঁচ ব্যাংক

পর্যাপ্ত তারল্য সত্ত্বেও প্রত্যাশিত হারে ঋণ বিতরণ না হওয়ায় টান পড়েছে ব্যাংকগুলোর নিট মুনাফায়। এছাড়া খেলাপি ঋণের অব্যাহত বৃদ্ধিও ভুগিয়েছে খাতটিকে। এর মধ্যেওবেশকিছু ব্যাংক উচ্চ মুনাফা করেছে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৩০টি ব্যাংকের মধ্যে ২০টিরই চলতি বছরের তিন প্রান্তিকে মুনাফায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছে বেসরকারিখাতের পাঁচ ব্যাংক— এক্সিম, মার্কেন্টাইল, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, ব্র্যাক ও সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক। ব্যাংকগুলোর তিন প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনাকরে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে শেয়ারবাজারে নিবন্ধিত ৩০টি ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মুনাফা প্রবৃদ্ধি করেছে এক্সপোর্ট ইম্পোর্ট ব্যাংক অব বাংলাদেশ লিমিটেড (এক্সিম)। ১৯৯৯সালের ২ জুন তৃতীয় প্রজন্মের ব্যাংক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় এক্সিম ব্যাংক। প্রতিষ্ঠার প্রায় পাঁচ বছর পর ২০০৫ সালের ১ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গইসলামী ব্যাংকে রূপান্তরিত হয় এটি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ধারাবাহিকভাবে ভালো মুনাফা করছে ব্যাংকটি।
২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নয় মাসে এক্সিম ব্যাংকের মুনাফা ছিল ৪৩ কোটি ৭২ লাখ টাকা। চলতি বছরের একই সময়ে ব্যাংকটির মুনাফা ২০৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে১৩২ কোটি ৬১ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। ২০১৫ সালে ২০৮ কোটি ৬৫ লাখ, ২০১৪ সালে ২৪৬ কোটি ৫৬ লাখ, ২০১৩ সালে ১৮৮ কোটি ৫৬ লাখ, ২০১২ সালে ২০৮ কোটি ৩০লাখ ও ২০১১ সালে ২০১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা নিট মুনাফা করেছিল ব্যাংকটি।
২ হাজার কোটি টাকার অনুমোদিত মূলধনের ব্যাংকটির বর্তমানে পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ১ হাজার ৪১২ কোটি ২৫ লাখ টাকা। চলতি বছরের জুন শেষে এক্সিম ব্যাংকেরবিতরণকৃত ঋণের স্থিতি ২০ হাজার ৩৫৬ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনা, লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি কৃষিঋণ বিতরণ ও শতভাগ আদায় এক্সিম ব্যাংকের মুনাফা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন ব্যাংকটিরব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মোহাম্মদ হায়দার আলী মিয়া। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কৃষি খাতে ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে তিন বছর ধরে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে এক্সিম ব্যাংকপ্রশংসাপত্র পেয়েছে। আমরা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২০১৫ সালে ২০, ২০১৪ সালে ২২ ও ২০১৩ সালে ৩০ শতাংশ বেশি কৃষিঋণ বিতরণ করেছি। এ খাতের ঋণ থেকে শতভাগই এক্সিমব্যাংক আদায় করতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়া ডাউন পেমেন্ট নিয়ে পুনঃতফসিল করা ঋণের কারণে ব্যাংকের নিট মুনাফা বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমান সময়ে ব্যাংকিং খাতে মুনাফা করতেহলে রিটেইল ব্যাংকিংয়ের বিকল্প নেই বলে তিনি মন্তব্য করেন।
মার্কেন্টাইল ব্যাংক: ১৯৯৯ সালের ২ জুন প্রতিষ্ঠিত হয় তৃতীয় প্রজন্মের মার্কেন্টাইল ব্যাংক। প্রতিষ্ঠার পর থেকে কখনো বেশি, কখনো কম মুনাফা অর্জন করলেও চলতি বছরের প্রথমনয় মাসে নিট মুনাফায় উল্লম্ফন হয়েছে ব্যাংকটির। ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকটির নিট মুনাফা ছিল ৪৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। আর চলতি বছরের একইসময়ে ব্যাংকটির নিট মুনাফা প্রবৃদ্ধি ১৭৩ শতাংশ বেড়ে ১৩০ কোটি ১২ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে, যা দেশের শেয়ারবাজারে নিবন্ধিত ব্যাংকগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি।
২০১৫ সালে ১৪০ কোটি, ২০১৪ সালে ১১৬ কোটি ৯১ লাখ, ২০১৩ সালে ১৯৭ কোটি ৫২ লাখ, ২০১২ সালে ১৩৬ কোটি ৮০ লাখ ও ২০১১ সালে ১৭৫ কোটি ৩৯ লাখ টাকার নিটমুনাফায় ছিল মার্কেন্টাইল ব্যাংক। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ব্যাংকটির ঋণের স্থিতি ছাড়িয়েছে ১২ হাজার ৮৮৯ কোটি টাকা।
নিট মুনাফা বৃদ্ধির বিষয়ে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী মসিহুর রহমান বলেন, বছরের শুরু থেকেই আমরা ব্যাংককে সামগ্রিকভাবে গুছিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রানিয়ে কাজ করেছি। এর মধ্যে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ
কমিয়ে আনা হয়েছে। ফলে খেলাপির বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণের হারও কমেছে। এ কারণে ব্যাংকের নিট মুনাফা বৃদ্ধি পেয়েছে। ঋণের ক্ষেত্রে আমরা সুদহার কমিয়ে এনেছি। এতেকরে ব্যাংকের স্প্রেড ৪ শতাংশে নেমে এসেছে।
ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক: ১৯৯৯ সালে যাত্রা করা ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের মুনাফায় চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে ১৬৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ২০১৫ সালেরজানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নয় মাসে ব্যাংকটির নিট মুনাফা ছিল ৪০ কোটি টাকা। চলতি বছরের একই সময়ে ব্যাংকটির মুনাফা হয়েছে ১০৫ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। প্রতিষ্ঠারপর থেকে এটি ব্যাংকটির সর্বোচ্চ আয়, যা শেয়ারবাজারে নিবন্ধিত ব্যাংকগুলোর মধ্যে চলতি বছরে তৃতীয় সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি।
২০১৫ সালে ৮৫ কোটি ৩৫ লাখ, ২০১৪ সালে ৬৭ কোটি ২২ লাখ, ২০১৩ সালে ৭৭ কোটি ২৮ লাখ, ২০১২ সালে ৭৬ কোটি ২২ লাখ ও ২০১১ সালে ৫৭ কোটি ৯৯ লাখ টাকা নিটমুনাফা করেছে ব্যাংকটি। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের বিতরণকৃত ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলী বলেন, ব্যাংকের উচ্চ মুনাফার আমানত কমিয়ে আনার কারণে আমাদের কস্ট অবফান্ড কমে এসেছে। আগের বছরগুলোয় আমাদের ধারণা ছিল, আমানত কম থাকায় ব্যাংকের মুনাফা কম হচ্ছে। যার কারণে উচ্চ মুনাফায় আমরা আমানত সংগ্রহ করেছি। এছাড়াখেলাপি ঋণের হার কমিয়ে আনার কারণে ব্যাংকের মুনাফা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ব্র্যাক ব্যাংক: ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বেসরকারি খাতের ব্র্যাক ব্যাংক। প্রতিষ্ঠার পর থেকে নিট মুনাফায় ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি করছে ব্যাংকটি। চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে ৭২শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ব্র্যাক ব্যাংকের নিট মুনাফায়। ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নয় মাসে ব্যাংকটির আয় ছিল ১৫৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। চলতি বছরের একইসময়ে ব্যাংকটির নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ২৬৫ কোটি ৬০ লাখ টাকায়।
২০১৫ সালে ২৩২ কোটি ৩৩ লাখ, ২০১৪ সালে ২০৫ কোটি ১৩ লাখ, ২০১৩ সালে ১৪১ কোটি ৯৩ লাখ, ২০১২ সালে ৬৭ কোটি ২১ লাখ ও ২০১১ সালে ১৭৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকারনিট মুনাফা করে ব্যাংকটি।
সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক: ১৯৯৫ সালের ২২ নভেম্বর যাত্রা করে সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক। ইসলামী ধারায় পরিচালিত এ ব্যাংকটির নিট মুনাফায় চলতি বছরে ৬১ শতাংশ প্রবৃদ্ধিহয়েছে। ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নয় মাসে ব্যাংকটির নিট মুনাফা ছিল ৪৭ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। চলতি বছরের একই সময়ে ব্যাংকটির নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে৭৬ কোটি ৭০ লাখ টাকায়।
২০১৫ সালে ২০৪ কোটি ৬৩ লাখ, ২০১৪ সালে ১৯২ কোটি ৮৩ লাখ, ২০১৩ সালে ১২৫ কোটি ২১ লাখ, ২০১২ সালে ১৪৬ কোটি ৫২ লাখ ও ২০১১ সালে ১০৩ কোটি ২৪ লাখটাকার নিট মুনাফায় ছিল ব্যাংকটি।