‘ন্যাশনাল সার্ভিস’ কর্মসূচি আরও ৬৪ উপজেলায়

বেকার তরুণ-তরুণীদের অস্থায়ী কর্মসংস্থানে দেশের আরও ৬৪ উপজেলায় ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি সম্প্রসারণের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে সরকার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এই কর্মসূচি সম্প্রসারণের প্রস্তাব অনুমোদন পায়।
সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, পঞ্চম থেকে সপ্তম পর্যায়ে ২০টি করে ৬০ উপজেলায় এই কর্মসূচি চালু হবে। এর সঙ্গে খাগড়াছড়ির দুটি এবং রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানের একটি করে উপজেলা যোগ হয়ে মোট ৬৪ উপজেলায় এ কর্মসূচি সম্প্রসারিত হবে।
সচিব জানান, কোন কোন উপজেলায় নতুন করে এ কর্মসূচি চালু হবে- তা এখনও ঠিক হয়নি। পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপ অনুযায়ী দেশের সবচেয়ে দারিদ্র্যপীড়িত উপজেলাগুলোকেই নির্বাচন করা হবে।
নতুন করে ৬৪ উপজেলার কতজনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে- তাও ঠিক হয়নি বলে জানান তিনি।
আওয়ামী লীগের ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি ছিল, ২০১০ সালে ৬ মার্চ এ কর্মসূচি কুড়িগ্রাম থেকে শুরু হয়।
এ কর্মসূচির আওতায় ১৮ থেকে ৩৫ বয়স বয়সী বেকার নারী ও পুরুষদের তিন মাসের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষণের সময় তাদের প্রতিদিন ১০০ টাকা করে ভাতা দেওয়া হয়।
প্রশিক্ষণ শেষে তাদের ২ বছরের জন্য বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে অস্থায়ী নিয়োগ দেওয়া হয়, তখন তারা ২০০ টাকা করে প্রতিদিন পান, এরপর তারা দক্ষতা অর্জন করে পরবর্তী পর্যায়ে কাজে লাগাতে পারে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, প্রথম পর্যায়ে কুড়িগ্রাম, বরগুনা ও গোপালগঞ্জের ১৯টি উপজেলায় ৫৬ হাজার ৮০১ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এদের মধ্যে ৫৬ হাজার ৫৪ জনকে অস্থায়ী নিয়োগ পেয়েছিলেন।
দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ পর্যায়ে দেশের ৩৭টি উপজেলায় ১ লাখ ১১ হাজার ১১৬ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তাদের মধ্যে ১ লাখ ৮ হাজার ৭৮২ জন কাজ পেয়েছেন।
পঞ্চম থেকে সপ্তম পর্যায়ে এ কর্মসূচি সম্প্রসারণের কাজ ২০১৬-১৭ অর্থ বছর থেকে শুরু হবে জানিয়ে শফিউল বলেন, ২০১৭ সালের ৩০ জুনের আগেই তা শুরু হবে।
দ্বাদশ পর্যন্ত বিদ্যালয়
যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা হয় সেগুলোকে বিদ্যালয় হিসেবে গণ্য করতে আইন হচ্ছে।
‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড অধ্যাদেশ’ বদলে ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড আইন ২০১৬’ করার প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ১৯৮৩ সালের অধ্যাদেশ দিয়ে এতোদিন এনসিটিবি চলছিল। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী সামরিক শাসন আমলের সেই অধ্যাদেশ ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করে ‘সামান্য পরিবর্তন’ করে নতুন আইন করা হচ্ছে।
আইনের খসড়ায় দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বিদ্যালয় হিসেবে গণ্য করার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি জাতীয় শিক্ষানীতি অনুযায়ী প্রাথমিক শিক্ষার স্তর অষ্টম শ্রেণিতে এবং মাধ্যমিক স্তর দ্বাদশ শ্রেণিতে উন্নত করতে কাজ শুরু করেছে সরকার।
বিদ্যালয়ের সংজ্ঞা পরিবর্তন করে খসড়ায় লেখা হয়েছে, যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা দেওয়া হয়, সেগুলো বিদ্যালয় হিসেবে গণ্য হবে।
“এছাড়া টেক্সটবুকের সংজ্ঞা স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত যে কোনো পাঠ্যপুস্তক এর অন্তর্ভুক্ত হবে,” বলেন সচিব।
নতুন আইনে এনসিটিবিতে একজন চেয়ারম্যানের সঙ্গে আটজন সদস্য রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে জানিয়ে শফিউল বলেন, “চারজন সদস্য উপস্থিত থাকলে কোরাম হবে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন চেয়ারম্যান। চেয়ারম্যান না থাকলে জ্যেষ্ঠ সদস্য সভাপতিত্ব করবেন।”
‘জৈব কৃষি নীতি’
জাতীয় কৃষি নীতির আওতায় জাতীয় জৈব কৃষি নীতি অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, পৃথিবীর ১৭২টি দেশে জৈব চাষাবাদ হচ্ছে। এর মধ্যে ৮৭টি দেশ জৈব কৃষি নীতি প্রবর্তন করেছে। তাদের অনুসরণ করে এই নীতি করা হয়েছে।
“রাসায়নিক সারের অসম ব্যবহারের ফলে ভূমির যে ক্ষয় হয় ও উর্বরত হ্রাস পায়, তা জৈব ও সুষম সারের ব্যবহারের মাধ্যমে কীভাবে কমানো যায় সেটাই এখানে ফোকাস করা হয়েছে।”
মাটির গুণাগুণ ও কৃষি পরিবেশের ওপর যেন কোনো নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে সে আঙ্গিকে কীভাবে কাজ করা যায় সে বিষয়েও এই নীতিতে দিকনির্দেশনা রয়েছে বলে জানান শফিউল।
বিমসটেক: ভাগাভাগি হবে বিদ্যুৎ
বিমসটেকভুক্ত সদস্য দেশগুলোর মধ্যে অভিন্ন গ্রিড চালুর বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারকে সই করার প্রস্তাবে সায় দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
শফিউল বলেন, “বিমসটেক নিয়ে কার্যকর আলাপ হচ্ছে। এখন বিদ্যুৎখাতে কীভাবে সহযোগিতা করতে পারি সেজন্য এই এমওইউ তৈরি করা হয়েছে।”
বিমসটেকের সদস্যভুক্ত সব দেশ এমওইউতে সমর্থন জানিয়েছে জানিয়ে শফিউল বলেন, “আমাদের এমওইউ মন্ত্রিসভা অনুমোদন করায় আমরা একই চুক্তিতে আবদ্ধ হব।
“এটার মধ্যে গুরুত্ব পাবে মিয়ানমার থেকে জলবিদ্যুৎ ও গ্যাস আমদানি, বিমসটেক সংযোগ স্থাপন হলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ঋতু-বৈচিত্রগত কারণে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সুবিধা হবে।”
থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, নেপাল ও শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে ১৯৯৭ সালে বে অফ বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি সেক্টোরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কোঅপারেশন- বিমসটেক গঠিত হয়।
পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক আইন
একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের সঙ্গে কখন একীভূত হবে- সেই সময় নির্ধারণ করবে সরকার। এজন্য পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক আইন সংশোধনের প্রস্তাবে নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল বলেন, পল্লী সংঞ্চয় ব্যাংক আইনে ২০১৬ সালের ৩০ জুনের পরে ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পটি একীভূত হয়ে যাওয়ার কথা ছিল।
“কিন্তু আসলে সে প্রস্তুতি সম্পন্ন না হওয়ায় সময়ের বাধা উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। সরকার যখন সময় নির্ধারণ করবে- তখন প্রকল্পগুলো ব্যাংকে চলে আসবে।”
পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক আইনের সংশোধনী ২০১৬ সালের ৩০ জন থেকে কার্যকর ধরা হয়েছে জানিয়ে শফিউল বলেন, সংসদ অধিবেশন না থাকায় সংশোধনীটি অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হবে।