শীতকালীন সবজির আগাম চাষে কৃষকের মুখে হাসি

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলায় শীতকালীন সবজির আগাম চাষ শুরু করেছেন চাষিরা। আর উৎপাদিত সবজি বাজারে তুলে ভালো দাম পেয়ে বেজায় খুশি তারা।
বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের কৃষকরা আগাম শীতকালীন সবজি চাষে ব্যস্ত রয়েছেন বলে জানিয়েছে সাটুরিয়া কৃষি বিভাগ।
উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকের মাঠে গিয়ে বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন। এতে আগাম সবজি চাষ করে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা।
আবহাওয়া অনুকূল থাকায় উপজেলায় শীতের সবজির বাম্পার ফলনের আশা করছেন তারা।
সরেজমিন দেখা গেছে, সাটুরিয়া সদর, ধুল্ল্যা, জান্না, হরগজ, গোপালপুর, তিল্লী, বালিয়াটি, দিঘুলিয়া, দরগ্রাম, ধারকোড়াসহ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের চাষিরা ব্যস্ত শীতকালীন সবজি চাষে। অন্যান্য ফসলের তুলনায় সবজি চাষ লাভবান হওয়ায় কৃষকরা এদিকেই ঝুঁকে পড়ছেন। শীতের আগেই বাজারে বিক্রি করে বেশি টাকা আয়ের আশায় চাষিরা এখন জমিতে শীতকালীন শাকসবজির চারা বপন ও পরিচর্যার কাজ করছেন। অনেকে আবার সবজির দাম বেশি থাকায় ছোট অবস্থায়ই তা তুলে বাজারে বিক্রি করছেন।সাটুরিয়ায় যেসব শাকসবজি চাষ হচ্ছে সেগুলোর মধ্যে আলু, মূলা, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, ঢেঁড়স, লালশাক, পালংশাক, পুঁইশাক, লাউ অন্যতম। বর্তমানে খুচরা বাজারে নতুন সবজির চাহিদা বেশ ভালো আর দামও বেশি।
এদিকে, স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে সাটুরিয়ার কৃষকদের উৎপাদিত এসব সবজি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যাচ্ছে।
শুক্রবার সকালে সরেজমিন সাটুরিয়া উপজেলার জান্না গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, করিম মিয়া তার স্ত্রী এবং ৬ জন শ্রমিক নিয়ে বাঁধাকপির চারা রোপণ করতে ব্যস্ত।
তিনি জানান, বন্যার পানিতে খেতটি ডুবে ছিল, পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে মাঠে চাষ দিয়ে চারা রোপণের উপযোগী করেছেন। তারপর বাঁধাকপির বীজ কিনে তা রোপণ করার ২২-২৩ দিন পর তুলে চারা রোপণ করছেন। তিনি ৪৫ শতাংশ জমিতে বাঁধাকপির চারা রোপণ করবেন।তিনি আরো জানান, বিক্রির দিন সকাল পর্যন্ত সব মিলিয়ে প্রতি চারায় খরচ হবে ৫-৬ টাকা করে। এ কপি খেত থেকেই পাইকারি ১৫-১৭ টাকায় বিক্রি করবেন, তার হিসাব মতে মাত্র ৩ মাসে এ কপি চাষ করে সব খরচ বাদ দিয়ে ৩০-৪০ হাজার টাকা আয় হবে তার।
উপজেলার পাড়াগ্রামের কৃষক মঞ্জুর রহমান জানান, তিনি কড়াই কারখানায় কাজের পাশাপাশি বাড়তি আয়ের জন্য জমি বর্গা নিয়ে চাষ করেন। এবারো চাষ করেছেন। দুই বছর ধরে শীতের আগাম সবজি হিসেবে লাউ ও ফুলকপি চাষ করছেন তিনি। এবার ৫২ শতাংশ জায়গা বর্গা নিয়ে ফুলকপির চাষ করেছেন। ছোট থাকতেই কপি তুলে ৫৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। ২০-২৫ দিন পরে পরিচর্যা করে বড় করে বিক্রি করতে পারলে দাম পেতেন ৮০ থেকে ৮৫ হাজার টাকা।
সাটুরিয়ার সবজি বিক্রেতা হারুন জানান, এবার ভালো দামে বিক্রি হচ্ছে সবজি। তবে দাম বাড়তি থাকলেও চাহিদাও রয়েছে প্রচুর। ছোট ফুলকপি ও বাঁধাকপি কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা, মূলা বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা কেজি দরে, আর মাঝারি সাইজের লাউ বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকা করে।চর সাটুরিয়া এলাকার চাষি আব্দুল কাদের বলেন, শীতের আগেই শাকসবজি জমিতে লাগিয়ে সেগুলো এখন বাজারে বিক্রি করছি। আগাম শীতকালীন সবজি বিক্রি করে ভালো লাভ হচ্ছে। এখান থেকে সবজি কিনে ট্রাকে করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে পাইকারি বিক্রির জন্য নিয়ে যায় পাইকাররা।
চলতি বছর অধিকাংশ কৃষক শীতের সবজি আবাদ করেছেন। কেউ ফসল তুলে বাজারে আনছেন। কেউ আবার খেত পরিচর্যায় ব্যস্ত।
সাটুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. এমদাদুল হক জানান, সাটুরিয়া উপজেলার হরগজ ইউনিয়ন সবজি চাষে বিখ্যাত। এছাড়াও ৮টি ইউনিয়নে চলতি বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষকরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন আগাম শীতকালীন সবজি চাষ করার জন্য। বাঁধাকপি, ফুলকপি, টমেটো, গাজর, সিম, বরবটি, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, মূলার আগাম চাষ করার জন্য আমাদের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকের মাঠে গিয়ে বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন। আগাম সবজি চাষ করে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা।