এ বছরেও ট্যানারি সরছে না হাজারীবাগ থেকে

শিল্প মন্ত্রণালয়ের আল্টিমেটাম, হাইকোর্টের জরিমানা কোন কিছুই সরাতে পারেনি হাজারীবাগের ট্যানারি। এখনও আগের মতই কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে হাজারীবাগে।
শনিবার (২৯ অক্টোবর) রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকার ট্যানারি পল্লী ঘুরে দেখা যায় প্রায় প্রতিটি ট্যানারিতেই কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াজাত হচ্ছে। ট্রাক ভর্তি কাঁচা চামড়া ঢুকতে দেখা গেল কয়েকটি ট্যানারিতে।
হাজারীবাগ ট্যানারি মোড়ে ঢুকতেই প্রথমে চোখে পড়ে ক্রিসেন্ট ট্যানারি। ভেতরে ঢুকতে দেখা যায় হাজার হাজার লবণযুক্ত কাঁচা চামড়াকে স্তূপ আকারে রেখে দেয়া হয়েছে। এগুলোর এখন ‘প্রসেসিং’ হবে।
ক্রিসেন্ট ট্যানারিতে কর্মরত মো.আব্দুল কুদ্দুস জানান, ‘আমাদের দুটি ব্রয়লার মেশিন (ড্রাম) আছে। প্রতি ড্রামে ৬০০ থেকে ৮০০ পিছ কাঁচা চামড়ার হোয়াইট ব্লুর কাজ করা যায়। এই মুহূর্তে প্রায় ১২ হাজার পিছ চামড়া রয়েছে বলেও জানান তিনি।
হাজারীবাগ থেকে সাভারে ট্যানারি স্থানান্তরের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘মনে হয় না এই বছরে সব ট্যানারি যেতে পারবে। শুনেছি আরও এক বছর সময় চেয়েছেন আমাদের মালিক।’
একইভাবে কাঁচা চামড়া প্রসেসিং হতে দেখা যায় সারোয়ার ট্যানারি, আবুল খায়ের ট্যানারি, ইস্টার্ন ট্যানারি, এমআই ট্যানারি, ইব্রাহিম লেদার, দি ঢাকা ট্যানারি, বে-ট্যানারিসহ শতাধিক ট্যানারিতে।
এমআই ট্যানারিতে সাব কন্ট্রাক্টে কাজ করেন মো. তসলিম। তিনি জানান, ‘সাভারেও কাজ চলছে, এখনও চালিয়ে নিতে হচ্ছে। যতদূর জানি সাভারে সব ট্যানারি স্থানান্তরে আরও এক বছর লাগবে। এর জন্য ট্যানারি মালিকরা সময় চেয়েছেন।
হাজারীবাগ ট্যানারি পল্লীর মধ্যে পূবালী ট্যানারিতে গিয়ে দেখা যায় প্রায় ২০টি ড্রামে একযোগে চলছে। প্রতিদিন এই ট্যানারিতে কয়েক হাজার পিছ চামড়া প্রক্রিয়াজাত করে ব্যবহার উপযোগী করা হয়।
ট্যানারিতে ব্যবহৃত কেমিক্যাল ড্রেনের পানিকে বিভিন্ন রংয়ে রঞ্জিত করছে। কোথাও সাদা, কোথাও নীল। কোথাও আবার লাল রং। আর এসব নানা রংয়ের কেমিক্যাল মিশ্রিত পানি গিয়ে মিশছে পাশ্ববর্তী নদীতে। প্রতিদিনই হাজারীবাগের পরিবেশ দূষণ করেই চলছে ট্যানারি পল্লী।
তবে ট্যানারি স্থানান্তরের আশার বাণী শোনালেন ট্যানারি মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ট্যানারস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ) সভাপতি শাহিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিনই দুই একটি করে ট্যানারি সাভারে স্থানান্তর হচ্ছে। আশা করি এই ডিসেম্বরের মধ্যেই সকল ট্যানারি সাভারে কাজ শুরু করতে পারবে।’
অন্যদিকে সারোয়ার ট্যানারির ম্যানেজার আলী আশরাফ জানান, ‘এই ডিসেম্বরের মধ্যে অধিকাংশ ট্যানারির হোয়াইট ব্লুর কাজ সাভারে করা সম্ভব হবে। তবে পুরো ট্যানারি সাভারে স্থানান্তর আরও এক বছর লাগবে।’
জনস্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে ২০০৩ সালে রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি শিল্প সরিয়ে সাভারে একটি ট্যানারি শিল্প নগরীতে স্থানান্তরের চিন্তা ভাবনা করে সরকার। পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দেখভাল করছে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)।
এর অংশ হিসেবে সাভারের বলিয়াপুরে ২০০ একর জায়গাজুড়ে পরিবেশবান্ধব চামড়া শিল্পনগর গড়ে তোলা হচ্ছে। এর মধ্যে সাড়ে ১৭ একর জায়গায় নির্মাণ করা হচ্ছে শুধুমাত্র সিইটিপি। ২০০৩ সালের ১৬ আগস্ট একনেকে চামড়া শিল্পনগর প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। এর কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০০৫ সালে। কিন্তু কাজ শেষ না হওয়ায় দফায় দফায় সময় ও ব্যয় বাড়ে। এই শিল্পনগরে ২০৫টি প্লটে ১৫৫টি কারখানা স্থাপন করা হবে।