সচল তবু অচল কয়েন!

প্রকৌশলী আবু নোমান। সন্ধ্যায় একটি খাওয়ার দোকানে আসেন। একটা পিঠা নিয়ে কাগজে মুড়িয়ে নেন। বিনিময়ে দোকানি আলাউদ্দিনের হাতে পাঁচ টাকার একটি ধাতব মুদ্রা বা কয়েন তুলে দেন। কিন্তু দোকানি কয়েন নিতে অস্বীকৃতি জানান। এ নিয়ে তাদের মধ্যে তর্কবিতর্ক শুরু হয়।
প্রকৌশলী দোকানিকে বলেন, ‘কয়েন কি চলে না। এটি কি অচল হয়ে গেছে। এটি কি টাকা না। এর কি কোনো মূল্য নেই। না থাকলে ফেলে দিস। শেষে মহাজনকে দেওয়ার পরামর্শ দেন’ -এসব প্রশ্ন শুনে দোকানিও কিছুটা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে বলেন, স্যার আপনে তো দিয়েই খালাস। কিন্তু আমি তো ছোট দোকানি। আমার কাছ থেকে কয়েন কেউ নিতে চায় না। মহাজনদের দিলেও ছিটকে ফেলে দেন। এরপরও ক্রেতা সেই কয়েন ফেরত নিতে নারাজ। উপায় না পেয়ে মন খারাপ করেই দোকানি কয়েনটি রেখে দেন।এক থেকে পাঁচ টাকার ধাতব মুদ্রাগুলোই মানুষের কাছে কয়েন হিসেবে পরিচিত। এক সময় মানুষের কাছে কয়েনের জনপ্রিয়তা ছিল অনেকটা আকাশচুম্বী। বাড়ির ছোটরা কয়েন হাতে পেলে তাদের আনন্দের সীমা থাকতো না। গৃহকর্তীরা গৃহকর্তার পকেট থেকে কয়েন নিয়ে ছোট-বড় মাটির ব্যাংকবন্দি করতেন।
কিন্তু কোথায় যেন একটু সমস্যা দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক কয়েনগুলো বাতিল ঘোষণা না করলেও মানুষ এগুলো আর নিতে চাচ্ছেন না। প্রায় সবখানেই এই কয়েনগুলো দেওয়া-নেওয়া নিয়ে প্রকট সমস্যা চলছে।
হাটবাজারসহ ছোট-বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কয়েন দেখলেই ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে লেগে যায় বাকবিতণ্ডতা। কোনো পক্ষই এসব ধাতব মুদ্রা নিতে রাজি নয়। এমনকি ব্যাংকগুলো গ্রাহককে এসব ধাতব মুদ্রা সরবরাহ করলেও সিংহভাগ ব্যাংকই সেই মুদ্রা বা কয়েন গ্রহণ করছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। অবস্থা দেখে মনে হয়, সচল তবু কয়েনগুলো অচল!
সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে এক থেকে পাঁচ টাকার ধাতব মুদ্রা বা কয়েন সম্পর্কে কথা হলে এমনই সব তথ্য উঠে আসে।
আবু সাঈদ, সজীব ও আলমসহ একাধিক মুদি দোকানি জানান, ধাতব মুদ্রা বা কয়েন নিয়ে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় রয়েছেন তাদের মতো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। কয়েন নিতে বাধ্য হওয়া সম্পর্কে এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা জানান, অসংখ্য পণ্য রয়েছে যেগুলো বিক্রি করতে হলে এক থেকে পাঁচ টাকার কয়েন ছাড়া বেচাকেনা করা সম্ভব নয়। কিন্তু এ বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের নজর নেই।
সোলায়মান, ইব্রাহিম হোসেন, আব্দুল মালেক, রফিকুল ইসলাম, ফজলুল হকসহ একাধিক চা-দোকানি জানান, তাদের কপালে নোট টাকা মিলতেই চায় না। কেননা এক কাপ রং চা ৫ টাকা ও দুধ চা ৬ টাকা দামে বিক্রি করতে হয়। ফলে চা পান শেষে সিংহভাগ ক্রেতা মূল্য হিসেবে কয়েন দেন। অথচ তারা চিনি, দুধ, লাকড়িসহ চা তৈরির মসলাপাতি কিনতে গেলে পাইকাররা এসব ধাতব মুদ্রা বা কয়েন নিতে চান না।