শিরোনাম

South east bank ad

তারা ছিল দুই প্রাণ এক আত্মা

 প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   ভিন্ন খবর

তারা ছিল দুই প্রাণ এক আত্মা

রনি ইমরান (পাবনা):

হাতে হাত রেখেই যুগ যুগ কেটেছে , জীবনের পড়ন্ত বেলায় একসাথেই পথ হেঁটেছেন তাঁরা দুজনে। ব্যস্ত শহরে শত মানুষের ভীরে শামসুল আলম কখনো হাত ছাড়েননি তাঁর প্রিয়তম সঙ্গী রওশন আরার ।হঠাৎ সেই সঙ্গীকে একা রেখে গতকাল চলে গেলেন তিনি না ফেরার দেশে। সঙ্গীকে এভাবে একা রেখে তার চলে যাওয়াতে শোকাবহ পাবনা শহরের বাসিন্দারা।

পাবনা শহরের প্রবীণ এই যুগলের গল্পটা খুব অসাধারণ। তাদের মধ্যে প্রেম, মায়া,ভালোবাসা,বিশ্বাস আর বন্ধুত্বের সর্ম্পক অমর এক নির্দশন হিসেবে দেখেছে মানুষ।

যেনো তারা দুই প্রাণ এক আত্মা, একজন যেনো অন্যজনের জন্যই এসেছিল প্রেমহীন নগরীতে ভালোবাসার মহান বার্তা নিয়ে।

এই দম্পতির একমাত্র নাতনি সুরঞ্জনা আহম্মেদ তাঁর নানার মৃত্যুর খবর গণমাধ্যমকে জানিয়ে বলেন, নানুর মৃত্যুতে নানি খুব একা হয়ে পড়েছেন। তিনি নিজেও বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন। নিষঙ্গী হয়ে অপলক চেয়ে আছেন চুপচাপ।

পাবনা শহরের শালগাড়িয়া এলাকায় থাকতেন শামসুল আলম ও সহধর্মিণী রওশন আরা।শহরেই দেখা মিলতো তাদের। কখনো দুইজনে একসাথে আড্ডা দিতো কোনো খাবারের দোকানে। কখনো দেখা যেতো দুজন হাতে হাত রেখে রাস্তা পারাপার হতে। এক সাথে বাজার সদাই করে বাসায় ফিরতো। সংসারের কাজ,চিকিৎসার কাজ,বাজার করা,দু’জনএকসাথেই বেড়াতেন সবখানে।

জানা যায়, শামসুল আলমের জন্ম ১৯৪১ সালে। পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৭৩ সালে প্রথম বিসিএসে উত্তীর্ণ। কলেজে শিক্ষকতা করেছেন। আর রওশন আরা এসএসসি পাস করা গৃহিণী। দুজনেরই বাড়ি পাবনা সদর উপজেলার ভাঁড়ারা ইউনিয়নের ভাঁড়ারা গ্রামে। ১৯৬২ সালে তাঁদের পরিচয়। তখন থেকেই তাঁদের ভালোবাসার শুরু, ১৯৬৩ সালে বিয়ে। এরপর থেকে কেউ কাউকে ছেড়ে থাকেননি কখনো। কোনো ক্লান্তিও স্পর্শ করেনি দুজনের মনে।১৯৯৮ সালে কর্মজীবন শেষ করে এতিমখানা পাড়ায় নিজের বাড়িটি তৈরি করেন শামসুল আলম। কিছুদিন পর মেয়ের বিয়ে দেন। কিছুটা একা হয়ে পড়েন রওশন আরা। তখন থেকে আর একটি বেলার জন্যও আলাদা হননি দুজন। ঘরে-বাইরের প্রতিটি কাজে দুজন দুজনের সঙ্গেই ছিল।

স্মৃতির পাতা থেকে হারিয়ে গেছে বহু গল্প। কিন্তু ভালোবাসা হারায়নি এক ফোঁটাও বলতেন, শামসুল আলম। তাদের সর্ম্পকের বিষয়ে তিনি বলতেন, ভালোবাসা যে কী, তা বুঝিনি। তবে জীবনে একে অপরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকার চেষ্টা করেছি।

একই কথা রওশন আরাও বলতেন,তিনিও জানেন না ভালোবাসা আসলে কী। তবে বিশ্বাস রেখেছেন, সারা জীবন একে অপরের হাতটি ধরে চলার চেষ্টা করেছেন। মনে হয়েছে এটাই ভালোবাসা। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এভাবে চলবে বলে মনে করেতেন তিনি।

ভাষাসৈনিক ও একুশে পদকপ্রাপ্ত পাবনার সাংবাদিক রণেশ মৈত্রের বাল্যকালের বাল্যকালের বন্ধু ছিলেন শামসুল আলম। তাঁরা এক সাথে দীর্ঘ দিন ছাত্র ইউনিয়ন রাজনীতি করেছেন পাবনায়। । সাংবাদিককে রণেশ মৈত্র জানান, শমাসুল অনেক ভালো মনের মানুষ ছিলেন। তাঁদের দাম্পত্য জীবন এবং পড়ন্ত সময়ে তাঁরা একে অপরের প্রতি আস্থা বিশ্বাস রেখে প্রেমের এক অপূর্ব নির্দশন রেখে গেছেন। তাঁদেরকে ভালোবাসাকে শ্রদ্ধা জানাই।

সকলের প্রিয় প্রবীণ যুগল শামসুল আলম (৮০) ও তার জনম সঙ্গী সহধর্মিণী রওশন আরা (৭২)কে আর এই শহরে খুঁজে পাবেনা। তাঁদের ভেবে হয়ত আর অনুপ্রাণিত হবেনা অনেক তরুণী তরুনীর ঠুকনো সম্পর্কগুলো। জীবনের এই দীর্ঘসময় আস্থা, বিশ্বাস, ভালোবাসা নিয়ে একসাথে হাতে হাত রেখে পথ চলাই ভালোবাসার অনন্য নির্দশন হয়ে উঠবে সকল প্রেমিক মনের সকলের এই প্রত্যাশা।

BBS cable ad

ভিন্ন খবর এর আরও খবর: