জীবন-জীবিকার বিষয়টি মাথায় রেখে লকডাউন’ তুলে দিয়ে আসছে ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’

আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে অনেকেই কেনাকাটার উদ্দেশ্যে মার্কেট ও শপিংমলে যাবেন। তবে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার ঘোষিত চলমান বিধিনিষেধে ‘বাড়ি থেকে বের হলে যেমন সবাইকে মুভমেন্ট পাস দেখাতে হচ্ছে, একইভাবে কেনাকাটা করতে গেলেও ‘মুভমেন্ট পাস’ দেখাতে হবে। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে দেশব্যাপী সরকার ঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধ চলমান রয়েছে। যা আগামী ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে। এ সময় দেশের সব সরকারি বেসরকারি অফিস-আদালত, গণপরিবহন এবং দোকানপাট ও শপিংমল বন্ধ ঘোষণা করা হলেও আগামী ২৫ এপ্রিল থেকে দোকানপাট ও শপিংমল খুলে দেওয়ার বিষয়ে নতুন করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
মানুষের জীবন-জীবিকার বিষয়টি মাথায় রেখে কঠোর বিধি-নিষেধ বা ‘লকডাউন’ তুলে দিয়ে ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ ফর্মুলার দিক যাচ্ছে সরকার। আগামী রোববার (২৫ এপ্রিল) থেকে দোকানপাট ও শপিংমল খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তের পর এমনটাই ভাবা হচ্ছে। এসময়ে মাস্ক ছাড়া কেউ কোনো ধরনের সেবা নিতে বা দিতে পারবেন না।
পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, ‘লকডাউন’ চলাকালীন সময় জরুরি প্রয়োজনে ঘরের বাইরে চলাচলের জন্য ১৪টি ক্যাটাগরিতে দেওয়া হচ্ছে ‘মুভমেন্ট পাস’। এগুলোর মধ্যে-, মুদি দোকানে কেনাকাটা, কাঁচা বাজার, ওষুধপত্র, চিকিৎসা কাজে নিয়োজিত, কৃষিকাজ, পণ্য পরিবহন ও সরবরাহ, ত্রাণ বিতরণ, পাইকারি বা খুচরা ক্রয়, পর্যটন, মরদেহ সৎকার, ব্যবসা ইত্যাদি। এছাড়া যাদের বাইরে চলাফেরা প্রয়োজন কিন্তু কোনো ক্যাটাগরির সঙ্গে মিল নেই, তাদের অন্যান্য ক্যাটাগরিতে পাস দেওয়া হচ্ছে। সেই ক্ষেত্রে ‘লকডাউনে’ কেনাকাটা করতে মার্কেটে যাবেন, নিয়মানুযায়ী তাদেরও ‘মুভমেন্ট পাস’ দেখাতে হবে।
এবিষয়ে পুলিশ সদর দফতরের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের সহকারী উপ-মহাপরিদর্শক (এআইজি) মো. সোহেল রানা বলেন, ‘লকডাউন’ চলাকালীন সময়ে জরুরি প্রয়োজনে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গাতে যেতে সবাইকে ‘মুভমেন্ট পাস’ নিতে হবে। ক্যাটাগরি অনুযায়ী ‘মুভমেন্ট পাস’ দেওয়া হবে।
এদিকে, মানুষের জীবন-জীবিকার বিষয়টি মাথায় রেখে আগামী রোববার (২৫ এপ্রিল) থেকে দোকানপাট ও শপিংমল খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে কেউ যেন মাস্ক ছাড়া কেনাকাটা না করে সে বিষয়টি অবশ্যই নিশ্চিত করার কথা জানিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এর আগে গত ১৮ এপ্রিল রাজধানীর নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি ২২ এপ্রিল থেকে দোকান ও শপিংমল খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন।
এদিকে, প্রথম দফা ‘লকডাউনে’ ৫ এপ্রিল থেকে এখন পর্যন্ত দেশে গণপরিবহনের চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে মাঝে সীমিত আকারে সিটি করপোরেশন এলাকায় গণপরিবহন চালাচল করা হলেও দূরপাল্লার সব পরিবহন বন্ধ রাখা হয়েছে। এরপর ‘কঠোর লকডাউনে’ আবার সব গণপরিবহন বন্ধ ঘোষণা করে মন্ত্রিপরিষদ। এদিকে, আগামী ২৫ এপ্রিল মার্কেট ও শপিং মল সীমিত আকারে খুলে দেওয়ার ঘোষণার পর পরিবহন মালিকরা আগামী ২৯ এপ্রিল থেকে বাস চালুর দাবি জানিয়েছে।
‘লকডাউন‘ ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত অব্যাহত থাকছে উল্লেখ করে শুক্রবার বিকেলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, মানুষের জীবন ও জীবিকার কথা বিবেচনায় রেখে দোকানপাট ও শপিংমলে দেওয়া হচ্ছে। ২৮ এপ্রিলের পরে আর কঠোর লকডাউন নয়, চলাচলে বিধিনিষেধ শিথিল করা হবে। তবে নিশ্চিত করা হবে ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’। তবে গণপরিবহন চলাচলের বিষয় আগামী ২৮ এপ্রিল থেকে সিদ্ধান্ত জানা যাবে।
সাধারণ মানুষ বলছে, গত বছর করোনাকালে মানুষের কাছে জমানো কিছু টাকা-পয়সা ছিলো। গত বচর সবাই সীমিত আকারে চলতে পেরেছে। তবে এবছর বেশির ভাগ মানুষের হাতে সঞ্চিত অর্থ নেই। ‘লকডাউন’ শিথিল না হলে মানুষ না খেয়ে মারা যাবে।
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় (২৩ এপ্রিল) দেশে আরও ৮৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মোট মৃত্যু হয়েছে ১০ হাজার ৮৬৯ জনের। একদিনে নতুন করে করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৬২৯ জন। এপর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৩৯ হাজার ৭০৩ জনে।