শিরোনাম

South east bank ad

জীবন নিয়ে হতাশা কেন?

 প্রকাশ: ০৬ এপ্রিল ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   ভিন্ন খবর

জীবন নিয়ে হতাশা কেন?

রিয়াজুল হক:
আমাদের অনেকের মধ্যে এক ধরণের হাহাকার বিরাজ করে। আমি সাধারণত যাদের সাথে চলাফেরা করি কিংবা যাদের সাথে বিভিন্ন সময় কথাবার্তা হয়, তারা মোটামুটি সবাই সুস্থ, ভালো আয় করে, বাসস্থানের সমস্যা নাই। তারপরেও তাদের মধ্যে বিভিন্ন রকমের কষ্ট দেখি। যেমন, কবে যে বাড়িটা তিন তলা থেকে চার তলা করতে পারবো?/ কবে যে চতুর্থ গ্রেডে প্রমোশন পাবো?/ কবে যে বাগান বাড়ি করতে পারবো?/ ড্রয়িং রুমে ১টন থেকে ২টনের এসি কবে যে লাগাতো পারবো?/ খুব নিঃসঙ্গ লাগে/ খুব ডিপ্রেশনে আছি/ ব্যাংকের সুদের হার কেন যে ০.৫% কমে গেল ইত্যাদি ইত্যাদি।

পুরানো সেই গল্পটির কথা মনে পড়ে গেল।
"একদিন এক রাজা তার উজিরকে বললো, আচ্ছা বলো তো, দুনিয়াতে অধিকাংশ মানুষ অসুখী কেন? এই যে দেখো,আমার কর্তৃত্বে এতোবড় রাজ্য। কোন কিছুর অভাব নেই। তবুও কেমন জানি আমি মনের দিক থেকে সেই শান্তিটা পায় না। সবসময় অশান্তিতে কেন থাকি?

উজির কিছুক্ষন নীরব থেকে বলল, এই প্রশ্নের উত্তরের জন্য আপনাকে ছোট একটি কাজ করতে হবে।
রাজা বললেন, বলো কী কাজ?

উজির বলল, আপনি একটি থলেতে নিরানব্বইটি দিনার রাখুন। আর থলেটির উপরে লিখে দিন একশত দিনার। এরপর রাত্রিতে সেটা আপনার খাদেমের ঘরের সামনে ফেলে রাখুন।

উজিরের নির্দেশনা মতো রাজা সব কিছু করলেন। রাতে সেই খাদেম বের হল। দেখল একটি থলে পড়ে আছে। ঘরে নিয়ে দেখল তাতে গুণে গুণে নিরানব্বইটি চকচকে দিনার রয়েছে। এরপর লক্ষ্য করল সেই থলের উপরে লেখা আছে ‘একশত দিনার’।

এক দিনার না পেয়ে বেচারা ঘরের সবাইকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুলে ওই একটি দিনার খুঁজতে লাগিয়ে দিল। সারারাত চলল খোঁজাখুজি। কিন্তু পাওয়া গেল না।

এদিকে রাজা আর উজির আড়ালে দাঁড়িয়ে সব দেখল।

সকালে সেই খাদেম যখন রাজ দরবারে আসল রাজা দেখল, খাদেমের চেহারা মলিন। কোন বিরাট কিছু হারিয়ে যাওয়ার দুঃখে জর্জরিত খাদেমের মন।

এবার উজির রাজাকে বলল, রাজা মশাই! ওই একের জন্যই আমরা এতো অসুখী। আল্লাহ আমাদেরকে যত নেয়ামত দিয়েছেন, তা হলো নিরানব্বইটি দিনারের মতো। আমরা সেগুলো নিয়ে তুষ্ট থাকি না। শোকরিয়া আদায় করি না। কি পেয়েছি, সেই হিসাব আমরা ততটুকু করি না, যতটুকু না পাওয়া মনের আশা অপূরণের হিসাবটুকু করি। ওই অপুর্ণতার দিকে মনোনিবেশ আমরা এত কঠিন ভাবে করে ফেলি যে, পাওয়ার হিসাব আর মনেই থাকে না। যার কারনে সব দিকে শুধু বারবার অপূর্ণতাই চোখে পড়ে। এ কারণেই দুনিয়ার মানুষ অসুখী"।

আমি যখন হতাশার কথা শুনি, নিজের মধ্যে হাসি পায়। নিজে নিজে ভাবি, আল্লাহর রহমতে দুটি চোখ দিয়ে দেখতে পাচ্ছি, হাত-পা সচল আছে, অসুস্থতা নেই, লেখাপড়া করতে পেরেছি, সম্মানের সাথেই সমাজে চলাচল করছি, পরিবারের মধ্যে আছি, বন্ধু-বান্ধব আছে। সবই আল্লাহর রহমত। এতো রহমতের মধ্যে বেঁচে থেকে আমাদের উচিত প্রতিনিয়ত আল্লাহকে ধন্যবাদ দেওয়া। তাকে স্মরণ করা। একবার ভাবুন তো, দুই মিনিটের জন্য যদি অক্সিজেন বন্ধ হয়ে যেত, তাহলে কি করতেন? সকল ধরণের চাওয়া পাওয়া বাদ দিয়ে শুধু বেঁচে থাকতেই চাইতেন। হ্যাঁ, সুস্থ হয়ে বেঁচে থাকাটাই সবচেয়ে বড় চাওয়া হওয়া উচিত।

আসলে আমরা লোভের মধ্যে বেঁচে থাকতে চাই। কোন কিছুতেই আমাদের সন্তুষ্টি নেই। সবসময় উপরের দিকে তাকিয়ে থাকি। একবার নিচের দিকে তাকান। একবার একজন অন্ধ মানুষের কথা ভাবুন। যদি আপনার দুইটি চোখের বিনিময়ে একটা রাষ্ট্র লিখে দেওয়ার কথা বলা হয়, তবু আপনি রাজি হবেন না। অন্তত আমার ব্যাপারটা বলতে পারি, আমি হবো না।

আমাদের যা আছে, তাই নিয়েই সন্তুষ্ট হওয়া উচিত। দেখবেন খারাপ লাগবে না। ভালো থাকবেন, সুখে থাকবেন।

লেখকঃ রিয়াজুল হক, যুগ্ম পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক।

BBS cable ad

ভিন্ন খবর এর আরও খবর: