মির্জা আলী বেহরুজ ইস্পাহানির পরলোকগমন

দেশের অন্যতম প্রাচীন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ইস্পাহানি গ্রুপের চেয়ারম্যান মির্জা আলী বেহরুজ ইস্পাহানি আর নেই। গতকাল ভোর সাড়ে ৫টায়ঢাকার এ্যাপোলো হসপিটালসে চিকিত্সাধীন অবস্থায় তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি ... রাজিউন)। বাণিজ্য ও শিল্পাঙ্গনের নিভৃতচারী এউদ্যোক্তার মৃত্যুতে চট্টগ্রামসহ সারা দেশের ব্যবসায়িক মহলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
শতাব্দীপ্রাচীন ইস্পাহানি গ্রুপের প্রাণপুরুষ মির্জা আলী বেহরুজ ইস্পাহানি। শিল্পপতি মির্জা আহমদ (সাদরী) ইস্পাহানির পাঁচ পুত্রের মধ্যে তিনি তৃতীয়।মির্জা আলী বেহরুজ ইস্পাহানি আমৃত্যু এমএম ইস্পাহানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান ছিলেন। তার ভাই মির্জা সালমান ইস্পাহানি এ শিল্প গ্রুপেরব্যবস্থাপনা পরিচালক। তাদের অন্য দুই ভাই মির্জা সাকির ইস্পাহানি ও সাজিদ ইস্পাহানি কোম্পানির পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এমএমইস্পাহানি লিমিটেডের আরেক পরিচালক মির্জা ইমরান ইস্পাহানি দীর্ঘদিন ধরে লন্ডনে অবস্থান করছেন। ১৯৫০ সালে জন্মগ্রহণকারী মির্জা আলীবেহরুজ ইস্পাহানি ছিলেন নিঃসন্তান।
বনেদি ব্যবসায়ী মির্জা আলী বেহরুজ ইস্পাহানির মৃত্যুর খবরে গতকাল সকালে চট্টগ্রামের ব্যবসায়িক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে। চট্টগ্রাম থেকেঅনেক ব্যবসায়ী সকালেই ঢাকায় পৌঁছান মির্জা আলী বেহরুজ ইস্পাহানির জানাজায় অংশ নিতে। তবে বেলা ১১টার পর বিমানের কোনো ফ্লাইট নাথাকায় ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেকে ঢাকায় পৌঁছতে পারেননি।
বাংলাদেশসহ পূর্ব ভারতে ব্যবসা-বাণিজ্যের অন্যতম পুরোধা ইস্পাহানি পরিবার। বর্তমানে বাংলাদেশে ইস্পাহানি গ্রুপ চায়ের (চা ট্রেডিং, ব্র্যান্ডিং ওচাষ) সূত্র ধরে বেশি পরিচিত। কিন্তু সুতা ও বস্ত্র, খাদ্যসামগ্রী ও ভোক্তাপণ্য, পানীয়, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ, তথ্যপ্রযুক্তি, আতিথেয়তা, জ্বালানি, প্যাকেজিং,রিয়েল এস্টেট, শিপিং, পাট, রেস্তোরাঁ ও বেকার্স এবং পোলট্রি খাতেও ইস্পাহানি গ্রুপের বিনিয়োগ রয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে শতবছরের পুরনো ও সফলট্রেডিং ব্যবসা।
দেশীয় শিল্প ও বাণিজ্য উদ্যোগের সূতিকাগার বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সঙ্গে ইস্পাহানি গ্রুপের বিশেষ যোগ রয়েছে। প্রয়াত মির্জা আলী বেহরুজইস্পাহানির পিতা মির্জা আহমদ ইস্পাহানি ১৯৪৭ সালে কলকাতা থেকে চট্টগ্রামে এমএম ইস্পাহানি লিমিটেডের কার্যালয় স্থানান্তর করেন। সেই থেকেইস্পাহানি গ্রুপ নানাভাবে চট্টগ্রামে শিল্প-বাণিজ্যের প্রসারে ভূমিকা রেখেছে। পাকিস্তানের প্রথম উড়োজাহাজ সংস্থা পরিচালনার মাধ্যমে ইস্পাহানি গ্রুপপঞ্চাশের দশকে চট্টগ্রামকে অনন্য বনেদিয়ানার স্তরে নিয়েছিল। চট্টগ্রামভিত্তিক বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠান নানা প্রতিকূলতার কারণে ঢাকায় প্রধানকার্যালয় সরিয়ে নিলেও ইস্পাহানি গ্রুপের প্রধান কার্যালয় এখনো চট্টগ্রামেই।
ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বর্ণপ্রসূ উদ্যোক্তা হলেও ইস্পাহানি গ্রুপের কর্ণধাররা নিজেদের শুধু অর্থ আয়ের কাজেই সীমিত রাখেননি। দেশের বিভিন্ন জেলায়সুখ্যাত ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল-কলেজ, চিটাগং গ্রামার স্কুলসহ বেশকিছু স্বনামধন্য বিদ্যাপীঠ তারা প্রতিষ্ঠা করেছেন। ইস্পাহানি গ্রুপের এমডি মির্জাসালমান ইস্পাহানি বাংলাদেশ টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও টি বোর্ডের সদস্য। এছাড়া চিটাগং বোট ক্লাবসহ বিভিন্ন সামাজিকউদ্যোগে তিনি সক্রিয় রয়েছেন।
মির্জা আলী বেহরুজ ইস্পাহানি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সদস্য ছিলেন। এছাড়া তিনি ইসলামিয়া চক্ষু ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ইস্পাহানি পাবলিক স্কুলঅ্যান্ড কলেজের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটির (আইইউবি) ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য ও আরো কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতাছিলেন।
প্রয়াত মির্জা আলী বেহরুজ ইস্পাহানিকে গতকাল বাদ আসর গুলশানের আজাদ মসজিদ এবং মাগরিবের পর হোসেনি দালানে দুই দফা জানাজা শেষেসমাহিত করা হয়। হোসেনি দালানের আলী কবরস্থানে পিতার সমাধির পাশে শেষ শয্যা নিয়েছেন তিনি।