অর্থনীতিতে আগামী ৬ মাস বড় চ্যালেঞ্জ হবে জ্বালানিসংকট: সালমান এফ রহমান

বিডিএফএন টোয়েন্টিফোর.কম
অর্থনীতিতে নানা সমস্যা থাকলেও বর্তমানে জ্বালানিসংকট বড় চ্যালেঞ্জ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) দাম যেভাবে বেড়েছে, তাতে বাংলাদেশ বেকায়দায় আছে, তবে আমরা আশা করছি, এর দাম অচিরেই কমে আসবে। যদি দাম না কমে তা হলে সংকট আরও বাড়বে।
গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) সম্মেলনকক্ষে দেশে কর্মরত বিদেশি সংবাদমাধ্যমগুলোর সংগঠন ওভারসিজ করেসপনডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ওকাব) সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সালমান এফ
রহমান বলেন, জ্বালানিসংকট মোকাবিলা করাই হবে আগামী ছয় মাস অর্থনীতির বড় চ্যালেঞ্জ। রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল আমদানির বিষয়ে আলোচনা চলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫ সেপ্টেম্বর ভারত সফরে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল শিগগিরই রাশিয়া সফরে যাচ্ছে। এসব আলোচনায় একটা সমাধান বেরিয়ে আসবে বলে আমি আশা করছি।
ওকাবের সভাপতি কাদির কল্লোলের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি ও ওকাবের সদস্যসচিব নজরুল ইসলাম মিঠু। এ ছাড়া ওকাবের জ্যেষ্ঠ সদস্যরাও আলোচনায় অংশ নেন।
ব্যাংকের সুদের হার নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সালমান বলেন, সুদের হার ৯ শতাংশ বেঁধে দেওয়ার কারণেই উচ্চ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। সুদহার বাড়ালে শিল্পের খরচ বেড়ে যাবে। তবে এটা ঠিক, সুদহারের সীমা অনেক বছর ধরে বেঁধে রাখা ঠিক না। কোভিডের অভিঘাত ভালোভাবে মোকাবিলা করতে পেরেছি আমরা; কিন্তু যুদ্ধের কারণে সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেল। করোনাপরবর্তী অর্থনীতি যেভাবে এগোচ্ছিল, যুদ্ধ না হলে সুদের হারের সীমা তুলে দেওয়া যেত।
প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা বলেন, ‘জানুয়ারিতে আমাদের এলসি খোলা হয়েছিল ৯ বিলিয়ন ডলারের। নানা ধরনের পদক্ষেপের কারণে আগস্টে কমে দাঁড়াতে পারে ৫ থেকে ৬ বিলিয়ন ডলারে।’ আমদানি কমার ফলে আগামী দিনে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। একই সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়হার স্থিতিশীল হবে বলেও মত দেন তিনি।
রাশিয়া ছাড়া অন্য কোনো দেশ থেকে বিকল্প পন্থায় তেল আমদানির চিন্তা করা হচ্ছে কিনাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কাতার থেকে আনার বিষয়ে আলোচনা চলছে। তারা যদি স্পট মার্কেটের বাইরে তেল বিক্রি করতে চায় তাতে আমরা রাজি। ভারত থেকেও আনার চেষ্টা চলছে।
সালমান বলেন, বিশ্ববাজারে ডিজেলের দাম বাড়লেও সেটি আমরা আনতে পারছি; কিন্তু সমস্যা হচ্ছে গ্যাস। দেশের বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৮০ শতাংশ চালিত হয় গ্যাসে। আন্তর্জাতিক বাজারে স্পট মার্কেটে গ্যাসের দাম এত বেশি যে, আমদানি করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই এখন থেকে দেশের ভেতরে গ্যাস উত্তোলনের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিদেশি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে গ্যাস উত্তোলনের বিষয়ে চুক্তি করতে হলে বিদ্যমান প্রোডাকশন শেয়ারিং কনটাক্ট বা পিএসসি সংশোধন করতে হবে। কারণ এটি অনেক পুরনো হয়ে গেছে। এরই মধ্যে সরকার পিএসসির খসড়া চূড়ান্ত করেছে। এটা হয়ে গেলে আমরা বিদেশি কোম্পানিগুলোর সঙ্গে নতুন করে দরপত্র ডাকতে পারব।
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা আরও বলেন, বাংলাদেশের বিদেশি ঋণের অনুপাত জিডিপির তুলনায় এখনো অনেক সহনীয়। কারণ আমাদের নেওয়া ঋণের ৯০ শতাংশই নমনীয় ও কম সুদের। বাংলাদেশ সাধারণত বাণিজ্যিকভাবে ঋণ নেয় না, যেটি বিশ্বের অনেক দেশই নিয়ে থাকে।
কাজেই ঋণ নিয়ে অহেতুক আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে। আমি মনে করি, বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতি এখনো অনেক দেশের তুলনায় ভালো। অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগের কোনো কারণ দেখছি না।