আইসিএবি আয়োজিত ‘এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন: চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ’ শীর্ষক ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত
স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশের সামনে বেশকিছু চ্যালেঞ্জ আসবে। তৈরি হবে অনেক সম্ভাবনাও। তবে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। এজন্য বৈদেশিক বাণিজ্যে নিজেদের প্রতিযোগিতা করার সক্ষমতা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি বাইরের দেশগুলোর সঙ্গে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি করতে হবে। দি ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্স অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) আয়োজিত এক ওয়েবিনারে সোমবার ২৬ জুলাই এসব কথা বলেন বক্তারা।
‘এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন: চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ’ শীর্ষক এ ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। এ ওয়েবিনার অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য (সচিব) শরীফা খান। ওয়েবিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আইসিএবি প্রেসিডেন্ট মাহমুদুল হাসান খসরু। সভাপতিত্ব করেন আইসিএবির সদস্য কাউন্সিল ও সাবেক প্রেসিডেন্ট মো. হুমায়ুন কবির। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইসিএবির সিইও শুভাশীষ বসু।
প্যানেল স্পিকার হিসেবে ওয়েবিনারে অংশ নিয়ে ছিলেন বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিসি) সদস্য মোস্তফা আবিদ খান, বিএসআরএমের চেয়ারম্যান আলী হুসেন আকবর আলী, এপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর এবং এফবিসিসিআইয়ের উপদেষ্টা মনজুর আহমেদ।
ওয়েবিনার অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, এলডিসি থেকে স্থায়ীভাবে উত্তরণ হলে দেশের বাস্তব উন্নয়ন ও জনগণের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধির একটি স্বীকৃতি মিলবে। যদিও এর ফলে বাংলাদেশকে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। তবে বাংলাদেশের বাণিজ্য দক্ষতা ও অভিযোজনযোগ্যতার ব্যাপক বিকাশ লাভ করেছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের জিএসপি প্রত্যাহার করার পরও দেশে টেক্সটাইল ও পোশাক শিল্পের সাফল্য প্রশংসনীয়।
ওয়েবিনার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন আমাদের নতুন কিছু বাস্তবতা সামনে নিয়ে আসবে। দেশ বৈশ্বিক বাণিজ্যে কিছু সুবিধা হারাতে পারে।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার অধীনে শুল্কমুক্ত সুবিধা আর কার্যকর না থাকায় রফতানিতে বাংলাদেশ নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে উল্লেখ করে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বড় আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর শুল্ক বৃদ্ধি ও আমাদের ঋণের দায়বদ্ধতা বাড়বে।
পরিকল্পনামন্ত্রী তার বক্তব্যে আরও বলেন, স্বাধীনতার সুখ অনেক বেশি। স্বাবলম্বী হওয়া অনেক বেশি সম্মানজনক। উন্নয়নকে অর্থবহ করতে হবে। তবে আরো এগিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা তৈরি করতে হবে। অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী দেশে পরিণত করতে হবে জনসংখ্যা অনুপাতে। এজন্য সবাইকে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানান মন্ত্রী।
মন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, আমাদের বেসরকারি খাত অনেক বেশি শক্তিশালী। আমরা অনেক বেশি এগিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা রাখি। তবে কিছু বাধা থাকতে পারে। তা দূর করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবকিছু বিকেন্দ্রীকরণ করছেন। সুশাসনের জন্য দেশে বিনিয়োগ অবশ্যই আসবে। সরকার সবার জন্য সমান সুযোগের ক্ষেত্র তৈরি করতে বদ্ধপরিকর।
বেসরকারি ও সরকারি উভয় ক্ষেত্রেই এলডিসি-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত হওয়া উচিত বলে মনে করেন আইসিএবির প্রেসিডেন্ট। স্বাগত বক্তব্যে তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীদের চাহিদা মেটাতে সরকার ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও দুই ডজনেরও বেশি হাই-টেক পার্ক উন্নয়ন করছে। বাংলাদেশ বোর্ড অব ইনভেস্টমেন্ট বিনিয়োগকারীদের জন্য ওয়ান স্টপ সার্ভিস সরবরাহ করছে। তবে রফতানির গতি বজায় রাখতে দেশকে দ্বিপক্ষীয় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বেছে নিতে হবে।
এলডিসি-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব কমাতে মূল প্রবন্ধে বেশকিছু সুপারিশ তুলে ধরেন শুভাশীষ বসু। যার মধ্যে রয়েছে জিএসপি থেকে জিএসপি প্লাস সুবিধাপ্রাপ্তির জন্য অন্তর্ভুক্ত করা, বাজারের প্রবেশাধিকার বাড়িয়ে তোলা, পণ্য ও বাজারের বৈচিত্র্যকরণ, উৎপাদন পর্যায়ে প্রয়োজনীয়তার ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে কাঠামোগত বাধা দূর করা। এর বাইরে আরও বেশকিছু সুপারিশ তুলে ধরেন তিনি।