করোনা মহামারিতে ঈদবাজারেও খুলছে না বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্স
ব্যবসায়ীদের চাপে করোনাভাইরাসের মহামারির মধ্যেও সারাদেশের মার্কেট ও অন্যান্য দোকানপাট খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। যা নিয়ে তীব্র সমালোচনা হচ্ছে সর্বত্র। শর্ত দিয়ে মার্কেট খোলার কথা বলা হলেও এতে করোনার ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
তবে সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিলেও করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে মানুষের জীবনের কথা চিন্তা করে ঈদ বাজারে খুলবে না বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্স। দেশের সর্ববৃহৎ ও অাধুনিক মার্কেটটিতে সবসময়ই ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় থাকে। ঈদের কেনাকাটাকে ঘিরে সেই ভিড় থাকে রাতভর।
মার্কেট বন্ধ রাখার বিষয়টি উল্লেখ করে বসুন্ধরা গ্রুপের পত্রিকা দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
গত ২৫ মার্চ থেকে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সারাদেশে অদ্যাবধি সাধারণ ছুটি চলছে। চলছে সবখানে লকডাউন। ফলে লাখ লাখ দোকানির ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। তাই ঈদের আগে দোকান খুলে দেয়ার ব্যবস্থা করতে সরকারের কাছে দাবি করে দোকান মালিক সমিতি।
এরই প্রেক্ষিতে গত ৪ মে সরকার দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলাগুলোতে অভ্যন্তরীণভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য, দোকানপাট ও শপিং মল আগামী ১০ মে থেকে সীমিত আকারে চালুর সিদ্ধান্ত দেয়।
এতে শর্ত দেয়া হয়, হাট-বাজার, ব্যবসাকেন্দ্র, দোকানপাট ও শপিং মল সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টার মধ্যে সীমিত রাখতে হবে। তবে ফুটপাতে বা প্রকাশ্যস্থানে হকার, ফেরিওয়ালা ও অস্থায়ী দোকানপাট বসতে দেওয়া যাবে না। প্রতিটি শপিংমলে প্রবেশের ক্ষেত্রে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারসহ স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে হবে। মাস্ক পরিধান ছাড়া কোনও ক্রেতা দোকানে প্রবেশ করতে পারবেন না। সব বিক্রেতা ও দোকান কর্মচারীকে মাস্ক ও হ্যান্ড গ্লাভস পরতে হবে। প্রতিটি শপিংমল ও বিপণী বিতানের সামনে সতর্কবাণী হিসেবে ‘স্বাস্থ্যবিধি না মানলে মৃত্যুঝুঁকি আছে’-লেখা ব্যানার টানাতে হবে।
তবে এসব নির্দেশনার কিছু বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলেও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতের সম্ভাবনা মোটেও নেই বলে মনে করছেন খোদ ব্যবসায়ীরা। এ অবস্থায় ঝুঁকি বাড়বে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিজেও একথা বলেছেন।
এ অবস্থায় বসুন্ধরা কর্তৃপক্ষের মার্কেট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তের প্রশংসা করছেন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। সম্পাদক নঈম নিজামের স্ট্যাটাসের নিচে সাধুবাদ জানিয়ে মন্তব্য করছেন। মহিউদ্দিন খান মোহন লিখেছেন, বসুন্ধরা সব সময় এক ধাপ এগিয়ে। সময়োচিত এবং বিজ্ঞজনোচিত সিদ্ধান্তের জন্য বসুন্ধরা কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ। সেই সঙ্গে শপিং মল খোলার সিদ্ধান্তদাতাদের প্রতি এত গুচ্ছ নিন্দা।
মেহেদি হাসান পলাশ পোস্টির নিচে লিখেছেন, অত্যন্ত দৃষ্টান্তমূলক ও সাহসী সিদ্ধান্ত । এই সিদ্ধান্তের কারণে বসুন্ধরা মার্কেট কর্তৃপক্ষ ও দোকান মালিকদেরকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। আশা করি অন্যান্য শপিং সেন্টারগুলো এই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করবে।
সুমাইয়া আফরিন লিখেছেন, বসুন্ধরা গ্রুপকে নতুন করে চিনলাম করোনা পরিস্থিতিতে। কৃতজ্ঞতা তাদের প্রতি।
করোনার প্রকোপ শুরুর পর বসুন্ধরা তাদের আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে হাসপাতাল নির্মাণ করছে। সোমবার যার উদ্বোধন করা হবে। এটা চালু হলে করোনায় আক্রান্ত রোগিদের চিকিৎসা দেয়া সহজ হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
হাসপাতালে মোট আইসোলেশন বেড হবে দুই হাজার ১৩টি। ট্রেড সেন্টারে ছয় ক্লাস্টারে এক হাজার ৪৮৮টি বেড বসবে। এছাড়া তিনটি কনভেনশন হলে থাকবে আরও পাঁচশ ২৫টি বেড। এর বাইরে চার নম্বর হলে হবে ৭১ বেডের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র। যতদিন করোনা থাকবে ততদিন ব্যবহৃত হবে এটি।