চুয়াত্তরে পা মহিউদ্দিনের

৭৪ বছরে পা দিচ্ছেন বর্ষীয়ান রাজনীতিক ও চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) মহিউদ্দিনের ৭৩ বছর পূর্ণ হয়েছে।
প্রতিবছর জন্মদিনে লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠে মহিউদ্দিনের বাসভবন। শুভেচ্ছা জানাতে নিজের অনুসারী এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি এবং সাধারণ লোকজনের ভিড় জমে মহিউদ্দিনের বাসায়।
কিন্তু এবার অসুস্থ অবস্থায় ঢাকায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন মহিউদ্দিন। এজন্য মহিউদ্দিনের জন্মদিনে এবার পারিবারিকভাবে কোন আয়োজন নেই। তবে অনুসারীরা বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন।
জানতে চাইলে মহিউদ্দিনের সহধর্মিণী ও চট্টগ্রাম মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হাসিনা মহিউদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, উনাকে (মহিউদ্দিন) সুস্থ করে তোলাই এখন আমাদের সবচেয়ে বড় কাজ। জন্মদিনে এবার কিছু করতে পারছি না। চট্টগ্রামবাসীর কাছে আমি দোয়া কামনা করছি।
মহিউদ্দিনের অনুসারী নগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদ বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, পারিবারিকভাবে খতমে কোরআন, দোয়া মাহফিল এবং মাদ্রাসায় তবরুক বিতরণ করা হবে।
এছাড়া ফরিদ মাহমুদ নগরীর চশমা হিল জামে মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেছেন। সেখানে এতিম, অসহায়দের মাঝে খাবার বিতরণের কর্মসূচিও আছে তার।
চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী গত ১১ নভেম্বর নিজ বাসায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর তাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকার স্কয়ার হাসপাতাল হয়ে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। ১১ দিনের চিকিৎসা শেষে ২৬ নভেম্বর তিনি দেশে ফিরেন এবং তাকে আবারো স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মহিউদ্দিন কিডনিজনিত এবং হৃদরোগে ভুগছেন।
১৯৪৪ সালের ১ ডিসেম্বর রাউজানের গহিরায় জন্ম নেন এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। মুক্তিযুদ্ধেও রয়েছে মহিউদ্দিনের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা।
মুক্তিযুদ্ধের পর শ্রমিক লীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন মহিউদ্দিন। পঁচাত্তরের পটপরিবর্তনের পরএবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী
বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ নিতে ভারতে গিয়ে সামরিক প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন করে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন তারা। দীর্ঘ সামরিক শাসনের সময় মহিউদ্দিনকে বেশ কয়েকবার কারাবরণ করতে হয়েছিল।
স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, চট্টগ্রাম বন্দর রক্ষার আন্দোলন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলনে চট্টগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন মহিউদ্দিন। অসহযোগ আন্দোলনের সময় মহিউদ্দিনকে গ্রেফতার করা হলে পুরো চট্টগ্রাম দাবানলের মতো জ্বলে উঠে।
মহিউদ্দিন এখনও সক্রিয় রাজপথে। বিএনপি কিংবা জামায়াত ইসলামী হরতাল ডাকলে এখনও মহিউদ্দিন নিজের অনুসারী নেতাকর্মীদের নিয়ে নগরীতে হরতাল প্রতিরোধে নেমে যান। এছাড়া চট্টগ্রামের স্বার্থসংশ্লিষ্ট যে কোন ইস্যুতে আন্দোলনের অগ্রভাগে থাকেন মহিউদ্দিন।
বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী মহিউদ্দিন টানা ১৭ বছর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১০ সালে হেরে গেলেও চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের রাজনীতির বড় অংশের নিয়ন্ত্রক তিনি। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে মহিউদ্দিন তৈরি করেছেন হাজার হাজার অনুসারী।