রেমিটেন্সের অর্ধেকই আনছে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক ও বেসরকারি ইসলামী ব্যাংক
মোট ৫৭টি ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে রেমিটেন্স এলেও এর অর্ধেকই আনছে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ও বেসরকারি ইসলামী ব্যাংক। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসের (জুলাই-অগাস্ট) রেমিটেন্সের চিত্র বিশ্লেষণে এই তথ্য পাওয়া যায়। এই দুই মাসে মোট ৪৫৬ কোটি ২১ লাখ (৪.৫৬ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
তার মধ্যে ইসলামী ও অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ২১২ কোটি ৭২ লাখ ডলার, যা মোট অঙ্কের ৪৬ দশমিক ৬২ শতাংশ। বাংলাদেশে ব্যাংকের তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, দেশি-বিদেশি মোট ৫৭টি ব্যাংকের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী এক কোটিরও বেশি বাংলাদেশি দেশে অর্থ পাঠান।
বরাবরই ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স আসে। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকত অগ্রণী ব্যাংক। সাম্প্রতিক সময়ে অগ্রণী ব্যাংক রেমিটেন্সে সরকারের ২ শতাংশ প্রণোদনার সঙ্গে বাড়তি আরও ১ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়ায় এই ব্যাংকটির মাধ্যমে আরও বেশি রেমিটেন্স আসছে।
গত বছরের জুলাই থেকে অর্থনীতির অন্যতম প্রধান সূচক প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। অর্থাৎ কোনো প্রবাসী ১০০ টাকা দেশে পাঠালে তার স্বজন ১০২ টাকা পাচ্ছেন।
তার সঙ্গে আরও এক শতাংশ প্রণোদনা যোগ করায় অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিটেন্স বেড়েছে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম।
তিনি বলেন, মহামারীকালে রেমিটেন্স প্রবাহ কমে যাওয়ার শঙ্কা থেকে গত রোজায় বাড়তি ১ শতাংশ প্রণোদনা দেন তারা। তাতে রেমিটেন্স বেড়ে যাওয়ায় এখন থেকে বছরের বড় তিন উৎসবকে (দুই ঈদ ও বড়দিন) সামনে রেখে রেমিটেন্সে বাড়তি ১ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অগ্রণী ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, অগাস্টেও প্রায় ২ বিলিয়ন ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। বরাবরের মতোই ইসলামী ও অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে বেশি রেমিটেন্স দেশে আসছে।
অগ্রণী ব্যাংকের মতো অন্যান্য ব্যাংকও বাড়তি প্রণোদনা দিলে আরও বেশি রেমিটেন্স দেশে আসবে বলে মনে করেন তিনি৷ করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে গত এপ্রিলে রেমিটেন্স কমলেও তারপর থেকে ঊর্ধমুখী এবং তা একের পর এক রেকর্ড ভেঙে চলছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, জুলাই-অগাস্ট সময়ে রেমিটেন্সে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫০ শতাংশ। অর্থাৎ এই দুই মাসে গত বছরের একই সময়ে চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি রেমিটেন্স দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
বাংলাদেশের ইতিহাসে দুই মাসে এত বেশি রেমিটেন্স কখনই আসেনি। আর এত বেশি প্রবৃদ্ধিও কখনও হয়নি। অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে নতুন অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ২৬০ কোটি ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। সদ্য সমাপ্ত অগাস্ট মাসে এসেছে ১৯৬ কোটি ৩৯ লাখ ডলার।
জুলাইয়ে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে ৭৭ কোটি ৭৮ লাখ ডলার রেমিটেন্স এসেছে। অগাস্ট মাসে ব্যাংকটি এনেছে ৫৯ কোটি ৮৬ লাখ ডলার। অন্যদিকে জুলাইয়ে অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছিল ৪২ কোটি ৩১ লাখ ডলার। অগাস্টে এসেছে ৩২ কোটি ৭৭ লাখ ডলার।
গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে সরকারি ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে যে রেমিটেন্স এসেছিল, তার ৪০ শতাংশই এসেছিল অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে। আর চলতি অর্থবছরের জুলাই-অগাস্ট সময়ে এই ছয় ব্যাংকের রেমিটেন্সের ৫৭ শতাংশই এসেছে অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে।
গত ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট এক হাজার ৮২০ কোটি ৩০ লাখ (১৮.২০ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। ওই অঙ্ক ছিল আগের ২০১৮-১৯ অর্থবছরের চেয়ে ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ বেশি।
এই রেমিটেন্সের মধ্যে ১৭৬ কোটি ২৮ লাখ ডলার এসেছিল অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে। আর ৩০০ কোটি ডলারের কিছু বেশি এসেছিল ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে।
শতাংশ হিসাবে গত অর্থবছরের মোট রেমিটেন্সের প্রায় ১০ শতাংশ এসেছিল অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে। ২০ শতাংশের মতো এনেছিল ইসলামী ব্যাংক। গত অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে ৪৩৫ কোটি ৪৬ লাখ ডলার রেমিটেন্স দেশে এসেছে।