শত বাঁধা সত্বেও ঢাকা ব্যাংক গ্রাহকদের পাশে থাকবে, ঢাকা ব্যাংকের ২৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এমডি ও সিইও এমরানুল হক এর বার্তা
দেশের বেসরকারি খাতে ব্যাংকিং জাগরণের নতুন দিগন্তে সম্ভাবনার উজ্জ্বল তারকা হয়ে যে ব্যাংকটির আবির্ভাব তার প্রায় শুরু থেকে গ্রাহক সেবার উৎসুক কারিগর হয়ে দেখেছি এর দুর্বার জয়যাত্রা। বলার অপেক্ষা রাখে না, উৎকর্ষের নতুন উচ্চতায় বসা সেই ব্যাংকটি আমাদের প্রিয় ঢাকা ব্যাংক। তাই ব্যাংকের ২৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মাইলফলক উৎসবে একটি সুন্দর অভিভাষণ মনের ভিতরে লুকিয়ে রাখা কঠিন। দীর্ঘদিনের সঙ্গী হয়ে হৃদয়ে প্রেরণার স্রোত ঢেলে যে ব্যাংকিং অভিাযানে অংশ নিয়েছি, আজ তার পরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে এ কথা বলতে পারি।
প্রারম্ভেই বলা যায়, গত শতকের প্রায় শেষ ভাগে দেশের ব্যাংকিং পরিমন্ডলে ঢাকা ব্যাংকের আবির্ভাব ঘটেছিল গণমানুষের প্রত্যাশাকে ঘিরে। এটি অত্যন্ত মর্যাদার যে আমাদের প্রিয় ঢাকা ব্যাংক বাংলাদেশের উদীয়মান অর্থনীতিতে ব্যাংকিং সেবায় সুদীর্ঘ পঁচিশ বছরের এক যুগান্তকারী পথ অতিক্রম করে দেশে একটি প্রতিষ্ঠিত, জনপ্রিয় ও পরিপক্ক ব্যাংকের গৌরবময় আসনে আসীন। গ্রাহক অঙ্গীকারের প্রতি ব্যাংকটির দায়বদ্ধতা ও বিধিবিধানের চর্চায় ব্যাংকটির স্বতঃস্ফূর্ততা একে কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ সকল নিয়ন্ত্রকদের আস্থার জায়গায় বসিয়েছে।
এই সুমহান মুহুর্তে, আমি একদল উদ্যোক্তার দৃঢ় সংকল্পের কথা স্মরণ করছি যারা জাতির জন্য একটি আর্থিক অভিযাত্রার স্বপ্ন দেখেছিলেন যা প্রযুক্তির গতিতে ও উৎকর্ষের সৌন্দর্য্য নিয়ে বাংলা সংস্কৃতির বুক চিড়ে প্রবাহিত হবে। বিস্ময়ের সোপানে দাঁড়িয়ে অভিভূত হয়ে দেখছি সেই স্বপ্ন আজ লাখো গ্রাহকের পদচারণায় মুখরিত ২৫ বছরের এক সুদীর্ঘ ব্যাংকিং কক্ষপথে মানুষের অজস্র ভালবাসায় সিক্ত একটি অতি পরিচিত ও পছন্দের ব্যাংকিং ব্রান্ড। দ্বিধাহীন গৌরবের সাথে এবং আমাদের আস্থাশীল গ্রাহক, শেয়ারহোল্ডার ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের উচ্ছ্বাসের মাঝে আমরা আজ উদযাপন করছি সেই প্রিয় ব্যাংকিং ব্র্যান্ডের ২৫তম জন্মদিন।
দেশজুড়ে শাখা-প্রশাখার নিরন্তর বিস্তার, বৈশ্বিক ব্যাংকিং নেটওয়ার্কের সাথে ধারাবাহিক সংযুক্তি আর গ্রাহকের জন্য নিত্যনতুন পণ্যসম্ভার ব্যাংকটিকে করেছে দেশের অন্যতম অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে প্রভাবশালী একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। জাতীয় অঙ্গীকারে সাড়া দিয়ে ঢাকা ব্যাংক কৌশলগত অগ্রাধিকার দিয়েছে উদ্যোক্তার ক্ষমতায়নে, ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বৃহৎ শিল্পের বিকাশে, কৃষি ও সবুজ অর্থনীতির উন্নতি সাধনে, গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় অবকাঠামোর উন্নয়নে এবং দেশব্যাপি আর্থিক অন্তর্ভূক্তির প্রসারণে।
আমি ঢাকা ব্যাংককে খুব কাছে থেকে দেখেছি এবং এর ব্যাংকিং উৎকর্ষ উপভোগ করেছি। আমার ব্যক্তিগত আবেগের একটি বড় স্থান জুড়ে আছে এই ব্যাংকটি। ১৯৯৮ সালে একটি বিদেশী ব্যাংকের আফ্রিকান অপারেশনস্ থেকে আমি ঢাকা ব্যাংকে যোগদান করি। আমার প্রথম সন্তানের বয়স তখন মাত্র ২ বছর। মুগ্ধতায় অভিভূত হয়ে আমি দেখেছি ব্যাংকটির পরিচ্ছন্ন মনোরম পরিবেশ, উপভোগ্য কালচার, কর্মীদের উৎসাহ, গ্রাহকের আস্থা ও প্রাণময় হাসি এবং জীবনের সানন্দ উদযাপন। দক্ষ জনবলের আকর্ষণীয় বেতন ও পারিতোষিক কর্মের সুবর্ন স্বীকৃতিহয়ে বাজারে পেশাদার ব্যাংকারদের career goal হয় ব্যাংকটি। শীর্ষ নির্বাহীগণের চৌকষ কর্মকৌশল আর নৈপুণ্য, পরিচালনা পর্ষদের চমৎকার বোঝাপড়া ও বলিষ্ঠ নেতৃত্ব লক্ষ্যজয়ের কর্পোরেট আকাঙ্ক্ষায় ভীষণ উদ্দীপ্ত করে ব্যাংক টীমকে।
পেশাদারিত্ব ও আত্মপ্রত্যয়ের অবিচল যাত্রায় ব্যাংক পর্ষদের আশীর্বাদ এবং সর্বোপরি স্রষ্টার অসীম অনুগ্রহেআমি আজ ব্যাংকটির homegrown ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও। অনন্য ঢাকা ব্যাংক কালচারের প্রেরণায় ব্যাংককে ভালবেসে বিকশিত হয়েছে আমার পরিবার। দেশে-বিদেশে তাদের বিস্তার আর জীবনগল্পের অনেকখানিই জুড়ে আছে এই ব্যাংক। ব্যাংকের এমডি হিসেবে আমিও চাইব, পরিবর্তনের ঝটকায় ঐকতানের সুর যতই প্রবল হোক, টিকে থাক অসাধারণ এই ব্যাংকিং কালচার। কর্মের যান্ত্রিক রুপান্তর কখনও হৃদয়ের আবেগ ও উষ্ণতাকে কেড়ে নেবে না আমার বিশ্বাস।
আমরা উদ্বিগ্ন প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব একটি বৈশ্বিক সংকট ডেকে এনেছে। জীবনহানির মারাত্মক ঝুঁকি একদিকে যেমন বেড়েই চলেছে, তেমনি পূর্বাভাস রয়েছে সম্ভাব্য অর্থনৈতিকমন্দার। থমকে যাওয়া ব্যবসিায়িক পরিবেশ ও স্থবির জনজীবন ব্যাংকিং মুনাফার লক্ষ্য পূরণে প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শত বাঁধা সত্বেও ঢাকা ব্যাংক গ্রাহকদের পাশে থাকবে ব্যাংকের উপর তাঁদরে আস্থা আর বিশ্বাসের সম্মান রেখে।
ব্যাংকের এই শুভলগ্নে, ব্যাংক ব্যবস্থাপনার পক্ষ থেকে ব্যাংকের সম্মানিত চেয়ারম্যান ও পরিচালনা পর্ষদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। অবশ্যই আমি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ আমার ব্যাংকের সহকর্মীদের কাছে, যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমব্যাংকের আজকের এই সম্মান বয়ে এনেছে। আমাদের ব্যাংকিং স্বপ্নের বাস্তবায়নে ও এর ধারাবাহিক স্থিতিশীলতায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিরলস প্রচেষ্টাকে আমি কৃতজ্ঞতা ভরে স্মরণ করি। এছাড়াও, ব্যাংকিং কার্যক্রমের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল নিয়ন্ত্রক তথা গ্রাহকদের মূল্যবান পরামর্শ ও সহযোগিতার প্রতি আমরা বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ।
