এসএমই ও ভোক্তা ঋণে আগ্রহ বেশি

নারী উদ্যোক্তা হাফিজা খাতুন ব্যাংকিং মেলায় এসেছিলেন খিলগাঁও থেকে। বেশ কয়েকজন কর্মী নিয়ে পুঁতির তৈরি নকশা করা ব্যাগ, টিস্যু বক্সসহ নানা সামগ্রী তৈরি করেন তিনি। বর্তমানে বেসরকারি একটি ব্যাংক থেকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতের (এসএমই) আওতায় কিছু ঋণ নিয়েছেন। ব্যবসা বাড়াতে এখন আরও ঋণ নিতে চান এ উদ্যোক্তা। এ জন্য ব্যাংকিং মেলায় কোন ব্যাংকের সুদহার কেমন তা যাচাই করছেন। সহজ শর্তে ও কম সুদে অন্য কোনো ব্যাংকে ঋণ পেলে সেখান থেকে নতুন ঋণ নেবেন বলে জানান তিনি।
মেলায় আসা আরেকজন হলেন মতিঝিলের বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা পুরান ঢাকার বাসিন্দা আক্তারুজ্জামান। টিভি, ফ্রিজসহ বিভিন্ন সামগ্রী কিনতে ঋণ নিতে চান তিনি। ভোক্তা ঋণের আওতায় ব্যাংকগুলো এসব ঋণ দিয়ে থাকে। মেলায় ঘুরে দেখছেন কোন ব্যাংকের ঋণে কত সুদ। তিনি জানালেন, একই স্থানে সব ব্যাংকের তথ্য পাওয়া যাবে বলে মেলায় এসেছেন।
এমন দুই দর্শনার্থীর মতো আরও অনেকের উপস্থিতিতে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে প্রথমবারের মতো শুরু হওয়া ব্যাংকিং মেলা বেশ জমে উঠেছে। বর্ণিল সাজে সজ্জিত স্টলগুলোতে ব্যাংক ও অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের আর্থিক সেবা ও পণ্য প্রদর্শন করছে। প্রথম দিনের মেলায় আগতদের বেশিরভাগই ছিলেন আমন্ত্রিত অতিথি, বিভিন্ন ব্যাংক ও অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা। তবে ঋণের খোঁজ-খবর নিতেও এসেছেন অনেকে। তাদের বেশিরভাগই খোঁজ-খবর করছেন এসএমই ও ভোক্তা ঋণের বিষয়ে। স্টলে বসা ব্যাংক কর্মকর্তারা জবাব দিচ্ছেন তাদের প্রশ্নের। ধরিয়ে দিচ্ছেন এ বিষয়ে তৈরি নিজদের ব্রুশিয়ার।
বেসরকারি মেঘনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নূরুল আমিন সমকালকে বলেন, একটি স্থানে সব ব্যাংকের সব আর্থিক পণ্য ও সেবা প্রদর্শনের সুযোগ বাংলাদেশে এই প্রথম। খোলা মাঠে এ ধরনের আয়োজনের ফলে একদিকে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাংকিংভীতি দূর হবে। এতে ব্যাংকগুলোও একে-অপরের সেবা ও পণ্য সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ পাবে বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, সাধারণত অন্য মেলাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন পণ্যে ছাড়সহ আকর্ষণীয় অফার দেওয়া হয়। তবে ব্যাংকিং পণ্যে বিশেষ ছাড় দেওয়ার সুযোগ কম। শুধু নিজেদের পণ্যের বিষয়ে জানানোর সুযোগ থাকে।
ওয়ান ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম ফখরুল আলম বলেন, একটি শক্তিশালী অর্থনীতির জন্য প্রয়োজন শক্তিশালী ব্যাংকিং খাত। এ মেলায় ব্যাংকগুলো নিজেদের পণ্য ও সেবা সরাসরি সবার কাছে তুলে ধরতে পারছে। এ ধরনের মেলা ব্যাংকিং খাতে পারস্পরিক সহযোগিতা, সক্ষমতা ও সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা বাড়াতে সহায়ক হবে।
গতকাল মেলার উদ্বোধন শেষে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের স্টল ঘুরে দেখেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান। স্টলে বসে থাকা বিভিন্ন ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীসহ ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। উদ্বোধনী মঞ্চে মেলা উপলক্ষে বের হওয়া ম্যাগাজিন 'সুবর্ণভূমি'র উদ্বোধন করেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ড. এম আসলাম আলম, তথ্যচিত্র উদ্বোধন করেন এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান ও থিম সং উন্মোচন করেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মইনুল ইসলাম। এসব আনুষ্ঠানিকতা শেষে দশ টাকার হিসাবধারীদের জন্য স্বল্পসুদে ও সহজ শর্তে ঋণ বিষয়ে একটি আর্থিক শিক্ষা ক্যাম্পেইনমূলক অনুষ্ঠানে অংশ নেন অতিথিরা। এ প্রচারে বাংলাদেশ ব্যাংক গঠিত ২০০ কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল থেকে কৃষকরা স্বল্প সুদে ঋণ নেওয়ার সুযোগের বিষয়টি তুলে ধরা হয়।