গ্রাহক কম, শাখার প্রধান ফটক বন্ধ রেখেছে অনেক ব্যাংক

অসহযোগ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রাজধানীর ব্যাংক পাড়া নামে পরিচিত মতিঝিলে
এলাকায় মানুষের উপস্থিতি অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেক কম। লেনদেনের
পাশাপাশি ব্যাংকের শাখা গুলোতে কমেছে গ্রাহকের উপস্থিতিও। নিরাপত্তার
স্বার্থে কিছু কিছু ব্যাংকের শাখা বন্ধ রাখতেও দেখা গেছে। রোববার রাজধানীর
মতিঝিল, পল্টন, ফকিরাপুল ও গুলিস্তান এলাকা সরজমিন পরিদর্শনে এসব তথ্য উঠে
এসেছে। মতিঝিলের শাপলা চত্বরের পাশেই অবস্থিত সোনালী ব্যাংকের লোকাল অফিস।
কিন্তু আজ ব্যাংকের প্রধান দরজা বন্ধ রাখতে দেখা যায়।
সোনালী ব্যাংকের
লোকাল অফিসের ম্যানেজার শফিকুল ইসলাম জানান, নিরাপত্তার স্বার্থে প্রধান
দরজা বন্ধ রাখা হয়েছে। কিন্তু অপর পাশে একটি ছোট দরজা আছে সে দিক দিয়ে
গ্রাহক আসা-যাওয়া করতে পারছেন। ছাত্র আন্দোলনের কারণে অন্যান্য দিনের
তুলনায় গ্রাহক সংখ্যার উপস্থিতি অনেক কম। এ কারণে লেনদেনের পরিমাণও কমে
গেছে শাখায়। তাছাড়া শাঁখার নিরাপত্তার জন্য আমাদের নিয়োগকৃত নিরাপত্তা
রক্ষী বাহিনী রয়েছে। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে পার্শ্ববর্তী থানাতেও
অবহিত করে রেখেছি।
এদিকে প্রিমিয়ার ব্যাংকের বৈদেশিক বিনিময়ে শাখা
পুরোপুরি বন্ধ রাখা হয়েছে। একই কারণে বন্ধ সে বিষয়ে জানাতে পারেননি
দায়িত্ব রত কর্মচারীরা। মাহিদুল ইসলাম নামের একজন ব্যবসায়ী শাখাটিতে এসে
অনেকক্ষণ থেকে ঘোরাঘুরি করছেন। কিন্তু প্রয়োজনীয় ব্যাংকিং সম্পন্ন করতে
পারেননি। তিনি জানান কোন নোটিশ ছাড়াই এভাবে শাখা বন্ধ করে দেওয়া ঠিক
হয়নি। অন্যান্য ব্যাংকের মতো একটি বিকল্প দরোজা রাখলেও পারতো। কিন্তু এই
শাখাটি পুরোপুরি বন্ধ রাখা হয়েছে।
এদিকে কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলোন,
ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের বৈদেশিক বাণিজ্য শাখার দরজার আংশিক,
দিলকুশার ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংকের প্রধান দরজা
বন্ধ দেখা গেছে আজ।
বক চত্বরে অবস্থিত সাউথইস্ট ব্যাংকের প্রিন্সিপাল
ব্রাঞ্চের কাউন্টারগুলো ছিল লোকশুন্য। মাঝেমধ্যে দুই একজন গ্রাহক আসছেন এবং
তাদের প্রয়োজনীয় কাজ সেরে খুব দ্রুত চলে যাচ্ছেন। রবিউল পাটোয়ারী নামের
একজন গ্রাহক জানান, জরুরি প্রয়োজনে কিছু টাকা দরকার সেজন্য উঠাতে এসেছি।
তা না হলে এই পরিস্থিতির মধ্যে ব্যাংকে আসতাম না। এসে দেখি ভালই হয়েছে।
অন্যান্য দিনের মতো লাইন ধরতে হয়নি। সরাসরি কাউন্টার থেকে টাকা তুলতে
পেরেছি।
ব্যাংক এশিয়ার মতিঝিল শাখার দায়িত্বরত কর্মকর্তা জানান, মাঝে
মাঝে আশেপাশে মিছিলের শব্দ শোনা যাচ্ছে। তাই নিরাপত্তার স্বার্থে কখনো
শাটার বন্ধ রাখছি আবার কখনো খুলছি। আমার কাছে শাখার নিরাপত্তা সবার আগে।
গ্রাহকরা যাতে নির্বিঘ্নে লেনদেন করতে পারে সেই ব্যবস্থাও রেখেছি আমরা।
বিকল্প গেটও আছে প্রধান গেটও খুলে দিচ্ছি মাঝে মাঝে। মতিঝিল এলাকা ঘুরে আরো
দেখা যায়, চলাচলের প্রধান বাহন এখন রিকশা, সিএনজি এবং প্রাইভেট কার।
এদিকে দক্ষিণবঙ্গের গুরুত্বপূর্ণ ফকিরাপুল বাসস্ট্যান্ডে কোনো বাস দেখা
যায়নি।
ফকিরাপুলের জনতা ব্যাংকের লেনদেনের চিত্রেও ফুটে উঠেছে ছাত্র
আন্দোলনের প্রভাব। গ্রাহক উপস্থিতি একেবারেই কম। তবে ব্যাংক কর্মকর্তারা
বলছেন লেনদেন স্বাভাবিক। তারা জানান, এই শাখাতে মূলত বিমানের টিকিট
কেনাবেচা কারী গ্রাহকরা টাকা জমা দিয়ে থাকেন। এখন বারোটা বাজছে। দুইটার পর
থেকে চাপ তৈরি হবে লেনদেনের। প্রতিদিনই এই সময় অল্প গ্রাহক দেখা যায়।
ছাত্র আন্দোলনকে লেনদেনের জন্য কোন সমস্যা মনে করছে না তিনি। তাছাড়া
পার্শ্ববর্তী থানা তে অবহিত করে রাখা হয়েছে।
নটরডেম কলেজ এর বিপরীত
পাশে অবস্থিত এটিএম গুলোতে কোন গ্ৰাহক দেখা যায়নি। নির্বিঘ্নে লেনদেন করা
যাচ্ছে। মাঝেমধ্যে দুই একজন করে এসে টাকা উঠাচ্ছেন। তবে অন্যান্য দিনের মতো
চাপ নেই বলে জানা গেছে।আজ নেটওয়ার্কেও কোন সমস্যা নেই বলে জানিয়েছেন
দায়িত্বরত কর্মীরা।
দিলকুশা এলাকার সবচেয়ে বেশি লেনদেন হওয়া শাখা
ইসলামী ব্যাংকের লোকাল অফিস। সেখানেও ফুটে উঠেছে অসহযোগ আন্দোলনের ছাপ।
গতকাল বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এর পক্ষ থেকে অসহযোগ আন্দোলন কর্মসূচি
ঘোষণা করার কারণে পুরো এলাকা প্রায় ফাঁকা। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া ইসলামী
ব্যাংকের লোকাল অফিসে লেনদেন করতে আসতে কাউকে দেখা যায়নি। ব্যাংকের একজন
কর্মকর্তা জানান, অন্যান্য দিনের তুলনায় লেনদেনের পরিমাণ একেবারেই কম।
স্বাভাবিক দিনে যেখানে সাপের মতো লাইন হয়ে থাকে, আজকে প্রতিটি কাউন্টারে
একজন দুইজন এর উপস্থিতি।