শিরোনাম

South east bank ad

এবি ব্যাংক ছাড়লেন মোহাম্মদ এ (রুমী) আলী

 প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২২, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   ব্যাংক

এবি ব্যাংক ছাড়লেন মোহাম্মদ এ (রুমী) আলী

বিডিএফএন টোয়েন্টিফোর.কম

তিন বছর আগে এবি ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েছিলেন মোহাম্মদ এ (রুমী) আলী। ওই সময় গভীর সংকটে ছিল দেশের বেসরকারি খাতের প্রথম ব্যাংকটি। এরপর গত তিন বছরে এবি ব্যাংকের আর্থিক সূচকগুলোয় বেশ ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু গতকাল হঠাৎ করেই এবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন রুমী আলী।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নরসহ দেশের বেশ কয়েকটি স্বনামধন্য ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা রয়েছে রুমী আলীর। অভিজ্ঞ এ ব্যাংকার যে এবি ব্যাংক ছাড়ছেন, তা অনুমিতই ছিল। বেশ কিছুদিন ধরেই ব্যাংকটির মূল উদ্যোক্তা ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপড়েনে ছিলেন তিনি। ব্যাংকের অভ্যন্তরে আগেই ঘোষণা দিয়ে রেখেছিলেন বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) তিনি পদত্যাগ করবেন। গতকাল রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে ব্যাংকটির এজিএম অনুষ্ঠিত হয়। সে অনুষ্ঠানেই এবি ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে লেখা একটি চিঠিতে রুমী আলী পদত্যাগের ঘোষণা দেন।

চিঠিতে রুমী আলী বলেন, আমাদের নতুন পরিচালনা পর্ষদ তিন বছর আগে নতুন উদ্যমে ব্যাংক পরিচালনা কার্যক্রম শুরু করে। পরিচালনা পর্ষদের পাশাপাশি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষও ঢেলে সাজানো হয়। বিগত তিন বছরের দুর্গম পথ পাড়ি দেয়া আমাদের জন্য সহজ ছিল না। তিন বছর আগে ব্যাংকের অবস্থান অনেক নড়বড়ে ছিল। অনেক চড়াই-উতরাই পার হয়ে ব্যাংকটির হারানো গৌরব ফিরে পেতে নিরলসভাবে কাজ করেছি।

তিনি লিখেছেন, ‘আমি মনে করি, একটি ব্যাংকের উন্নয়নের মূলমন্ত্র হচ্ছে সুশাসন। আর সুশাসনের মূলনীতি হচ্ছে জবাবদিহিতা বা দায়বদ্ধতা। এটি প্রতিষ্ঠা করা না গেলে সুশাসন আসবে না। আমি ব্যক্তিগত কারণে এবি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ থেকে পদত্যাগ করার আবেদন করেছি। তাই আপনাদের ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে এটাই আমার শেষ পর্ষদ সভা এবং এজিএম।’

এবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদ কেন ছাড়লেন? এমন প্রশ্নের জবাবে রুমী আলী বলেন, তিন বছর আগে যখন এবি ব্যাংক চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েছিলাম, তখন ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের হার ছিল ৩০ শতাংশের বেশি। ব্যাংকের অন্যান্য আর্থিক সূচকের অবস্থাও অনেক খারাপ ছিল। গত তিন বছরে এবি ব্যাংকের সব সূচকে উন্নতি হয়েছে। ২০২১ সাল শেষে খেলাপি ঋণের হার ১৪ শতাংশে নেমে এসেছে। তিন বছরের জন্য আমি এবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান হয়েছিলাম। মেয়াদ শেষ, তাই চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেছি।

রুমী আলী আরো বলেন, আমার জ্ঞাতসারে গত তিন বছরে এবি ব্যাংক পর্ষদে কোনো বিতর্কিত সিদ্ধান্ত হয়নি। আমার অজ্ঞাতে যদি ব্যাংকের জন্য ক্ষতিকর কোনো কাজ হয়, তার দায়ভার আমার নয়। এবি ব্যাংকের মূলধন কাঠামো দুর্বল। মূলধন না বাড়ালে ঋণ বিতরণ করা যাবে না। আর নতুন ঋণ না দিলে ব্যাংকের মুনাফা বাড়বে না। সামগ্রিক পরিস্থিতিতে মনে হয়েছে, ব্যাংকটির জন্য যতটুকু করা দরকার, সেটি আমি করেছি।

দেশের প্রথম বেসরকারি ব্যাংক হিসাবে ১৯৮১ সালের ৩১ ডিসেম্বর আরব বাংলাদেশ (এবি) ব্যাংক গঠিত হয়। ব্যাংকটির কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৮২ সালের ১২ এপ্রিল। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সমৃদ্ধির পথে হেঁটেছিল এবি ব্যাংক। কিন্তু উদ্যোক্তাদের যোগসাজশে ব্যাংকটির ঋণের একটি অংশ লোপাট হয়ে যায়। এ নিয়েই ২০১৫ সাল-পরবর্তী সময়ে বিপদে পড়ে এবি ব্যাংক। ২০২১ সাল শেষে এবি ব্যাংকের আমানতের পরিমাণ ছিল ২৯ হাজার ৮৩৭ কোটি টাকা। একই সময়ে ২৯ হাজার ৪৬ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করে ব্যাংকটি। ২০২১ সালে ৬৪ কোটি টাকা নিট মুনাফা করতে পেরেছে এবি ব্যাংক। ব্যাংকটির এডি রেশিও ৮৬ দশমিক ২৭ শতাংশ।

এদিকে গতকাল এবি ব্যাংক থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ব্যাংকটির ৪০তম এজিএমে ২০২১ সালের জন্য ২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ এবং ৩ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড অনুমোদন করা হয়। ব্যাংকের পরিচালক হিসেবে মোহাম্মদ এ (রুমী) আলী ও সাজির আহমেদ তাদের মেয়াদ পূর্ণ করেছেন। এর মধ্যে মোহাম্মদ এ (রুমী) আলী পুনরায় নির্বাচনের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেননি। সভায় সাজির আহমেদকে পরিচালক হিসেবে পুনর্নিয়োগ দেয়া হয়। শেয়ারহোল্ডাররা ২০২২ সালের জন্য ব্যাংকের নিরীক্ষক হিসেবে একনাবিন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসকে বিধিবদ্ধ নিরীক্ষক হিসেবে এবং মেসার্স এসএফ আহমেদ অ্যান্ড কোংকে করপোরেট গভর্ন্যান্স কমপ্লায়েন্স নিরীক্ষক হিসেবে পুনর্নিয়োগ দিয়েছেন। এবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এ (রুমী) আলী সভায় সভাপতিত্ব করেন। এ সময় ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আফজাল, পরিচালকরা ছাড়াও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শেয়ারহোল্ডার ডিজিটাল প্লাটফর্মের মাধ্যমে সভায় অংশগ্রহণ করেন।

BBS cable ad

ব্যাংক এর আরও খবর: