সহকর্মীদের উদ্দেশ্যে পূবালী ব্যাংক এমডির বার্তা

সম্প্রতি নিয়োগ প্রাপ্ত পূবালী ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শফিউল আলম খান চৌধুরী তার সহকর্মীদের উদ্দেশ্যে গত বুধবার (৫ মে, ২০২১) এক শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছেন।
উক্ত বার্তায় তিনি বলেন, সুপ্রিয় সহকর্মীবৃন্দ, আসসালামু আলাইকুম। আপনাদের সবাইকে জানাচ্ছি পবিত্র রমজান মাসের মােবারকবাদ এবং পবিত্র ঈদুল ফিতরের অগ্রিম শুভেচ্ছা। আমাদের চলমান ও আসন্ন দিনগুলি সুন্দর হােক এটি আমাদের সকলের প্রত্যাশা।
আপনারা জানেন আমি গত ১১ই এপ্রিল ২০২১ তারিখে পূবালী ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। ব্যাংকের সম্মানিত পরিচালনা পর্ষদ কর্তৃক আমার প্রতি আস্থার নিদর্শন স্বরূপ এই গুরু দায়িত্ব অর্পন করায় আমি সম্মানিত চেয়ারম্যান মহােদয় এবং সকল সুযােগ্য পরিচালকবৃন্দের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
১৯৮৩ সালে প্রবেশনারী সিনিয়র অফিসার হিসেবে আমি অত্র ব্যাংকে যােগদান করি। রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংক থেকে বেসরকারীকরণের সন্ধিক্ষণে পূবালী ব্যাংকের অভিযাত্রায় আমি একজন নবীন হিসেবে যুক্ত হয়েছিলাম। সময়ের অগ্রযাত্রার সাথে সাথে অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে দেশের ব্যাংকিং জগতে প্রিয় এই প্রতিষ্ঠানের অন্যতম শীর্ষস্থান অর্জনের চ্যালেঞ্জিং প্রতিটি স্তরেই আমি নিজের মেধা এবং যােগ্যতার সর্বোচ্চটুকু দেয়ার চেষ্টা করেছি। আমার এই ব্যষ্টিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি অসংখ্য যোগ্য এবং মেধাবী সিনিয়র ও জুনিয়র সহকর্মীদের সামগ্রিক চেষ্টার ফল আজকের পূবালী ব্যাংক।
এই প্রাণান্তকর প্রচেষ্টায় সাবেক ও বর্তমান সকল অগ্রজ এবং অনুজপ্রতিম সহকর্মীদের প্রতিটি উদ্যোগকে আমি শ্রদ্ধা এবং কৃতজ্ঞতাভরে স্মরণ করি। একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মজীবন শুরু করে চাকুরী জীবনের শেষ অবধি সেই প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত থাকার যে আনন্দ কেবল আমার মতাে এই ব্যাংকের সহকর্মীরাই বােধ হয় সবচেয়ে বেশি অনুধাবন করে থাকবেন। এই সুখকর অভিজ্ঞতার মানদন্ড বিশ্লেষন করলে নিশ্চয়ই এখানকার একটি সুযােগ্য পরিচালনা পর্ষদ, সুষ্ঠু কর্মপরিবেশ, প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা, সুদৃঢ় ও বিচক্ষণ ব্যবস্থাপনা নীতিমালা, কর্মীবান্ধব সিদ্ধান্ত, সহকর্মীদের আন্তঃহৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক, পারস্পরিক সহযােগিতামূলক দৃষ্টিভঙ্গি সর্বোপরি একটি সমৃদ্ধ, বিস্তৃত ও বিশ্বস্ত গ্রাহক নেটওয়ার্ককেই প্রতিভাত করে।
পূবালী ব্যাংকের ইতিহাস- সাফল্যের ইতিহাস। অতীতের কোন চ্যালেঞ্জই আমাদেরকে পরাজিত করতে পারেনি। এটি একদিকে যেমন অভ্যন্তরীণ নীতি-নৈতিকতার যথার্থ পরিপালনের ক্ষেত্রে অর্জিত হয়েছে তেমনি প্রতিষ্ঠানের কর্পোরেট সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রেও সফলভাবে অর্জিত হয়েছে। আজ তাই পূবালী ব্যাংক কেবল বৃহত্তম বেসরকারী ব্যাংক-ই নয়, রাষ্ট্রীয় অবকাঠামাের গর্ভ থেকে জন্ম নিয়ে অনেক সমস্যা সঙ্কুল পরিবেশে আজ বেসরকারী খাতে এ ব্যাংক একটি আদর্শ উদাহরণ তৈরি করেছে। এ অর্জন আমাদের সকলের।
কিন্তু আমাদেরকে বুঝতে হবে, যে প্রতিযােগিতামূলক পরিবেশে আমাদের কর্মকান্ড ব্যাপৃত সেখানে নির্ভার হওয়ার কোন সুযােগ নেই। এ প্রতিযোগিতা যেমন অন্যান্য ব্যাংকের সঙ্গে তেমন নিজেদেরও সঙ্গে। নিজেকে প্রতিনিয়ত অতিক্রম করে যাওয়াটাই তো সাফল্য। এ সাফল্যের ধারাবাহিকতায় সমৃদ্ধ অতীতই কেবল নিয়ামক শক্তি হতে পারেনা। বর্তমানের কর্মদ্যোগ যদি সমৃদ্ধ না হয় তাহলে এ সাফল্যের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা কঠিন।
২০২০ সালের মার্চ মাসের কথা স্মরণে আনতে চাই। কোভিড- ১৯ মহামারী আমাদের জীবন এবং জীবিকার সকল নান্দনিকতা নষ্ট করার চ্যালেঞ্জ নিয়ে যখন আবির্ভূত হলাে তখন আমরা কী আত্মপ্রত্যয় নিয়েই না তা মােকাবেলা করেছি। অজানাকে ভয় করে আমরা কিন্তু আত্মবিশ্বাস হারাইনি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমরা কাজ করেছি। তা কেবল জীবিকা অর্জনের জন্যই ছিলনা। এটি ছিল আমাদের প্রিয় প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ধরে রাখার স্বপ্ন ঘেরা উদ্যোগ। আমাদের প্রিয় গ্রাহকদের সর্বোত্তম সেবা দিয়ে তাঁদের লালিত বিশ্বাসটুকু রক্ষা করার উদ্যোগ। আমরা সফল হয়েছি। মহান সৃষ্টিকর্তার প্রতি শুকরিয়া তিনি আমাদের আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান করেছেন। আমাদেরকে অনেকভাবে মহামারী থেকে রক্ষা করেছেন যদিও আমাদের কর্মীবাহিনী ১০% কোভিড আক্রান্ত হয়েছেন।
২০২১ সালে আমরা সেই চ্যালেঞ্জের ধারাবাহিকতা মােকাবিলা করছি। কিন্তু ইতােমধ্যে আমরা নিজেদেরকে পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে অনেকটাই অভিযােজিত করতে পেরেছি। আভিযােজন সবসময়ই অনিশ্চয়তা অতিক্রমনের অনুপূরক হয়। এই অভিযােজন যেমন প্রাত্যহিক গ্রাহক কেন্দ্রিক পরিবেশকে নিশ্চিত করেছে তেমনি লক্ষ্যণীয়ভাবে ডিজিটাল প্লাটফর্মের ব্যবহার সাবলীল হয়েছে। এটি আমাদের অনেক বড় অর্জন। প্রতিটি চ্যালেঞ্জের মধ্যেই সম্ভাবনা লুকিয়ে থাকে- এটি আমরা সহসাই দেখছি। কাজেই চ্যালেঞ্জ মােকাবিলায় হতােদ্যম হবার কোন কারণ নেই।
পরিশেষে, একটি প্রতিযােগিতামূলক বাজারে নিজেদের স্বকীয়তা ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণে অত্র ব্যাংকের সমৃদ্ধ অতীত ও বর্তমান সক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে সর্বোপরি সময়ের সাথে সাথে ইতিবাচক আশু পরিবর্তনকে ধাৱন করার মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়াই আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক মূলমন্ত্র। তাই, আসন্ন দিনগুলােতে সুযােগ্য ও পরীক্ষিত এই কর্মীবাহিনী কর্তৃক সকল চ্যালেঞ্জ মােকাবেলা করে নিজেদেরকে এবং প্রিয় এই প্রতিষ্ঠানকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়াই হােক আমাদের একনিষ্ঠ প্রত্যয়। সবাইকে ধন্যবাদ।