ব্যাংক খাতে ফরেনসিক অডিট প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ জরুরি

দীর্ঘদিন ধরে আর্থিক অনিয়মে ঘুরপাক খাচ্ছে বাংলাদেশের ব্যাংক খাত। জালিয়াতি, অর্থ আত্মসাৎ ও অব্যবস্থাপনার মতো সমস্যা এসব প্রতিষ্ঠানের স্থিতিশীলতা নষ্ট করে জনগণের আস্থা ক্ষুণ্ন ও সামগ্রিক অর্থনৈতিক কাঠামোর জন্য হুমকি তৈরি করছে। শুধু কার্যক্রমগত ত্রুটি নয় বরং দুর্বল শাসন ব্যবস্থা, সীমিত স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির ঘাটতির কারণেও এসব অনিয়ম সংঘটিত হয়েছে। দেশের ব্যাংক খাতের এসব সংকট মোকাবেলায় ফরেনসিক অডিট প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ দরকার বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। গতকাল রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) আয়োজিত ‘ইনস্টিটিউশনালাইজিং ফরেনসিক অডিট ইন ব্যাংকস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় এসব কথা বলেন বক্তারা।
অনুষ্ঠানে ব্যাংক খাতে ফরেনসিক অডিট প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ নিয়ে পরিচালিত একটি গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. শহীদ উল্লাহ, সহকারী অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ ও রাহাত বানু এবং ন্যাশনাল ব্যাংক পিএলসির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক ইমরান আহমেদ।
ব্যাংকার, শিক্ষাবিদ ও চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসহ ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তির ওপর পরিচালিত ওই গবেষণায় দেখা যায়, প্রায় ৯৪ শতাংশ ব্যক্তিই ফরেনসিক অডিটরদের সহায়তার জন্য ব্যাংকের একটি আলাদা অভ্যন্তরীণ টিম গঠনের পক্ষে মত দিয়েছেন। তারা মনে করেন, ফরেনসিক অডিট চালু হলে ব্যাংক খাতে স্বচ্ছতা বাড়ার পাশাপাশি অনিয়ম ও দুর্নীতি কমবে, যা সামগ্রিক অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ও বিআইবিএম নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান নুরুন নাহার। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের চলমান সংকট ফরেনসিক অডিটকে মূলধারার একটি হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করার জরুরি প্রয়োজনীয়তা স্পষ্ট করেছে। বারবার কেলেঙ্কারির কারণে জনআস্থা নষ্ট হচ্ছে, এ পরিস্থিতিতে ফরেনসিক অডিট একদিকে প্রতিরোধক, অন্যদিকে সমাধান হিসেবে কাজ করতে পারে। জবাবদিহির ঘাটতি পূরণ এবং উন্নত জালিয়াতি শনাক্তকরণ সক্ষমতা তৈরি করে ফরেনসিক অডিট ব্যাংকের স্থিতিশীলতা এবং বৃহত্তর অর্থনীতিকে সুরক্ষিত রাখার ভিত্তি হতে পারে।’
তিনি আরো বলেন, ‘দিন দিন আর্থিক কার্যক্রমের জটিলতা বাড়ছে এবং অনিয়মের প্রকোপও বাড়ছে। তাই অডিট প্রক্রিয়ায় মৌলিক পরিবর্তন আনা জরুরি। ফরেনসিক অডিট কেবল জালিয়াতি শনাক্ত ও প্রতিরোধই করবে না, বরং ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ শাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিও জোরদার করবে। দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা, সহনশীলতা ও জনআস্থা নিশ্চিত করতে ফরেনসিক অডিটের কার্যকর সংযুক্তি অপরিহার্য।’
বিআইবিএমের মহাপরিচালক এসএম আবদুল হাকিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন দুর্নীতি দমন কমিশনের পরিচালক এসএমএম আখতার হামিদ ভূঁইয়া, দ্য ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএবি) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. রুকনুজ্জামান, ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. হুমায়ুন কবির, এনআরবিসি ব্যাংক পিএলসির এমডি ও সিইও মো. তৌহিদুল আলম খান, বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংক রেজল্যুশন ডিপার্টমেন্টের পরিচালক মোহাম্মদ জহির হুসাইনসহ অনেকে।
অনুষ্ঠানে বক্তারা আরো বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ফরেনসিক অডিটের নীতিমালা ও নিয়ন্ত্রক পরিবেশ আলাদা, কারণ আইনি কাঠামো, তদারকি সংস্থা ও পেশাগত মানদণ্ড ভিন্ন। বিশেষ করে ব্যাংক খাতে ফরেনসিক অডিট আর্থিক জালিয়াতি, ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি, মানি লন্ডারিং ও সুশাসনের ব্যর্থতা শনাক্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।