মাদ্রাসার কিশোরীকে জোর পূর্বক ধর্ষনের চেষ্টা
শেখ জাহান রনি, (হবিগঞ্জ):
হবিগঞ্জের মাধবপুরে এক মাদ্রাসায় কিশোরীকের জোর পূর্বক ধর্ষনের চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন কিশোরীর পিতা। ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে ও মাদ্রাসার হুজুর কে রক্ষা করতে নানা চেষ্টা করে যাচেছ প্রভাবশালীরা।
ঘটনার পর থেকে মাদ্রাসার হুজুর এলাকা ছেড়ে দেন। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার বুল্লা ইউনিয়নের রামপুর গ্রামে। রামপুর গ্রামের ইসলাম মিয়ার মেয়ে কিশোরী প্রতিদিনের ন্যায় গত ১৫ ফ্রেরুয়ারী রামপুর গ্রামের রামপুর নূরে মদিনা এবতেদীয়া সুন্নীয়া ক্যাডেট মাদ্রাসার হুজুর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলার কেনা গ্রামের বাসিন্দা শফিকুর রহমনের রুম ঝাড়– দিতে গেলে মাদ্রাসার হুজুর রুমের দরজা বন্ধ করে ওই কিশোরীকে জোর পূর্বক ধর্ষনের চেষ্টা করে।
এই সময় কিশোরী চিৎকার শুরু করলে হুজুর দরজা খোলে দেয়। তখন কিশোরী বাড়িতে গিয়ে তার মার কাছে ঘটনাটি বলে। পরে ঘটনাটি কিশোরীকে জোর পূর্বক ধর্ষনের চেষ্টার ঘটনাটি তার স্বামী ইসলাম মিয়া কে খোলে বলেন। হুজুরের এই রকম ঘটনা শুনে ইসলাম মিয়া অভাক হয়ে যায়।
ইসলাম মিয়া ওইদিনই গ্রামের মুরুব্বি ও মসজিদ কমিটিকে অবগত করেন। পরে গত শনিবার মসজিদ কমিটি বিষয়টি শালীসে শেষ করে দিবে বলে ইসলাম মিয়া কে আশ^স্ত করে। মসজিদ কমিটি ও বানেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক কাজী আজিজুর রহমান বিষয়টি কাউকে না বলতে ইসলাম মিয়া কে নির্দেশ দেন। শনিবার বিষয়টি নিয়ে বসার কথা থাকলেও মসজিদ কমিটিও কাজী আজিজুর রহমান তড়িগড়ি করে বৃহস্পতিবার রাতে শালীস বসে।
সেখানে ইসলাম মিয়া কে ডাকলে ইসলাম মিয়া সেখানে উপস্থিত হয়নি। মসজিদ কমিটি ও কাজী আজিজুর রহমান হুজুর শফিকুর রহমান কে নির্দেষ প্রদান করেন । মসজিদ কমিটি ও উপস্থিত লোকজন শফিকুর রহমানের ইমামতিতে নামাজ আদায় করেন।
গ্রামের মাতবরদের কাছে বিচার না পেয়ে পরদিন ইসলাম উদ্দিন বাদি হয়ে ওই হুজুর কে আসামী করে মাধবপুর থানায় একটি অভিযোগ করেন।
ইসলাম উদ্দিনের স্ত্রী সুলতানা জানান, ওইদিন তার মেয়ে ও পাশের বাড়ির একটি মেয়ে মাদ্রাসায় গেলে হুজুর তাদের ঘর ঝাড়– দিতে বলে। এক পর্যায়ে হুজুরের নির্দেশে তার মেয়ে হুজুরের রুমে ঝাড়– দিতে গেলে হুজুর দরজা আটকে দিয়ে তার মেয়ে কে জোর পূর্বক ধর্ষনের চেষ্টা করে। তখন তাদের মেয়ে চিৎকার শুরু করলে হুজুর মেয়ে কে ছেড়ে দেয়। পরে মেয়ে বাড়িতে এসে ঘটনাটি তার মা কে বলে।
তখন মেয়ের জামা ছিড়া ও শরীরে হাতের দাগের চিহৃ দেখা যায়। পরে তার বাবাকে ঘটনাটি বললে তার বাবা গ্রামের মাতবর ও মসজিদ কমিটি কে বিষয়টি বলে । তারা হুজুরের বিচার না করে উল্টো আমাদের বলে আমরা হুজুরের নামে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছি। গ্রামের মুরুব্বি ইসলাম উদ্দিনের চাচা মোঃ মিছির উদ্দিন জানান, তার নাতনি বাড়িতে এসে কান্নাকাটি শুরু করে। তার মাকে বিষয়টি বলে।
গ্রামের মাতবররা বিষয়টি দেখে দিবে বললেও তারা পরে হুজুরের পক্ষ নেয়। গ্রামের আমির উদ্দিনের স্ত্রী আছিরন খাতুন জানান, মেয়েটি বাড়িতে এসে বলে আমাকে বিষ দেও। আমি খেয়ে মরে যাব। তখন তার মা মেয়ে টি বিষ খাওয়ার কারন জানতে চাইলে মেয়ে পুরা ঘটনাটি তার মাকে বলে। মেয়েটি তার মাকে বলে আমার কথা বিশ্বাস না হলে আরেকটা মেয়ে আছিল তারে জিগান গিয়া।
এ ব্যাপারে বানেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আজিজুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান,আমরা ঘটনা শুনে শালীস করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেই। শনিবার বসার তারিখ করা হয়। কিন্তু গ্রামের মিজান নামে একজন শিক্ষক আছেন তিনি হবিগঞ্জের পানিউমদায় একটি বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা করেন। তার পরামর্শে বৃহস্পতিবার রাতেই আমরা বসি। তখন মেয়ের বাবা ইসলাম উদ্দিন কে ডাকা হলে সে আসেনি।পরে সে থানায় গিয়ে মামলা করেছে।
এ ব্যাপারে মাদ্রাসার হুজুর শফিকুর রহমানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, তিনি ৫/৬ বছর যাবত ওই মাদ্রাসায় আছেন। গ্রামে দুটি পক্ষ রয়েছে। তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে। তিনি আরো জানান, তিনি এলাকায় ছেড়ে যান নি। তিনি ছুটিতে আছেন।
এ ব্যাপারে স্থানীয় চেয়ারম্যান মিজান মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ঘটনাটি তিনি শুনেছেন। হুজুর ভাল লোক নয়। হুজুর কিছুদিন পূর্বে এক লোকের গাড়ি ভেঙ্গে ফেলে তখন তিনি বিষয়টি সমাধান করে দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে মাধবপুর থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক জানান, অভিযোগ পেয়েছেন তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।