শহিদুল ইসলাম হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন মূল আসামী মোঃ আলমগীরকে গ্রেফতার করেছে: র্যাব-১
বিডিএফএন টোয়েন্টিফোর.কম
র্যাব-১ ঢাকা জেলার আশুলিয়া এলাকায় চাঞ্চল্যকর শহিদুল ইসলাম (৩২) হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন এবং হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত মূল পরিকল্পনাকারী মোঃ আলমগীর (২৯) সহ ০৭ জনকে টাঙ্গাইল, শেরপুর এবং ঢাকার বিভিন্ন এলাকা হতে গ্রেফতার করেছে ।
ভিকটিম শহিদুল ইসলাম ইসলাম দীর্ঘদিন যাবৎ ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানাধীন বাইপাল বুড়ির বাজার এলাকায় যৌথভাবে কর্ণফুলি শ্রমজীবি সমবায় সমিতি লিঃ পরিচালনা করে আসছিল। গত ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখ রাতে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি ভিকটিমের সঙ্গে থাকা মোবাইল থেকে তার ব্যবসায়ীক পার্টনার মাসুদকে ভিকটিম শহিদুল ইসলাম অসুস্থ্য হয়ে আশুলিয়ার নিরিবিলি এলাকায় পড়ে আছে বলে জানায়।
তখন মাসুদ উক্ত স্থানে ভিকটিম শহিদুলকে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি করে আনুমানিক রাত ২৩৩০ ঘটিকায় আশুলিয়ায় ডেন্ডাবর কাঠাল বাগান ফয়েজের মোড় এলাকায় তাকে অসুস্থ অবস্থায় অটোরিক্সার মধ্যে দেখতে পায়। তাৎক্ষণিক মাসুদ ভিকটিম’কে চিকিৎসার জন্য প্রথমে পলাশবাড়ীস্থ হাবিব হাসপাতাল, পরবর্তীতে ভিকটিমের অবস্থা গুরুতর দেখে মুজারমিল ল্যাব-১ হাসপাতালে এবং সেখান থেকে ভিকটিমের শারিরীক অবস্থার অবনতি হলে গত ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখ আনুমানিক রাত ০২০০ ঘটিকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। গত ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখ আনুমানিক বেলা ১২৪০ ঘটিকায় ভিকটিম শহিদুল ইসলাম চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে।
এ সংক্রান্তে ভিকটিমের ভাই মোঃ আবুল মনসুর (৫০) বাদী হয়ে ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু করেন, যার নম্বর-১৬, তারিখ ১৬/১২/২০২১ ইং, ধারা- ৩০২/৩৪ পেনাল কোড ১৮৬০। উক্ত হত্যাকান্ডের ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে এবং বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে গুরুত্বের সাথে প্রচারিত হয়। এই নির্মম হত্যাকান্ডের প্রেক্ষিতে র্যাব-১ বর্ণিত হত্যাকান্ডের রহস্য উদ্ঘাটন এবং হত্যাকারীকে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে দ্রুততার সাথে ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।
এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-১, উত্তরা, ঢাকার একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে টাঙ্গাইল, শেরপুর এবং ঢাকা জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে বর্ণিত হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ১) মোঃ আলমগীর (২৯), পিতা- মোঃ মোজাম্মেল হক, জেলা- জামালপুর, ২) ববিতা খাতুন ও আকলিমা (২৪), পিতা-ওবায়দুল হক, জেলা-গাইবান্ধা, ৩) মোঃ সাগর হোসেন বাবু @ কালা বাবু (২২), পিতা- মোঃ সাইদুর রহমান, জেলা-ঢাকা, ৪) মোঃ মাসুদ রানা ও মাসুদ (২০), পিতা- মোঃ বাবলু শেখ, জেলা- মানিকগঞ্জ, ৫) মোঃ আফজাল হোসেন (২৬), পিতা- মোঃ ওহেদুর রহামন, জেলা- ঢাকা, ৬) মোঃ রফিকুল ইসলাম খান ও সাগর (৩৯), পিতা- মোতাহার আলী খান, জেলা- বরিশাল এবং ৭) মোঃ রাকিব শেখ (২২), পিতা-মোঃ রেজাউল, জেলা-ঢাকাদের’কে গ্রেফতার করে।
এ সময় ধৃত আসামী মাসুদের নিকট হতে তার ব্যবহৃত রক্তমাখা জ্যাকেট (যা পরবর্তীতে ধুয়ে ফেলা হয়েছে), তাদের ব্যবহৃত ১০ টি এবং ভিকটিমের সাথে থাকা ০১ টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামীরা ভিকটিম শহিদুল ইসলাম (৩২)’কে হত্যার কথা স্বীকার করে। আসামীদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী আলমগীর ভিকটিমের সমিতির পার্টনার। সে অপহরণের মাধ্যমে মুক্তিপণ প্রাপ্তির লোভে, অর্থের বিনিময়ে তার পূর্ব পরিচিত একটি মেয়ে (ববিতা) কে রাজি করায় এবং পরবর্তীতে মেয়েটি অত্যন্ত সুকৌশলে প্রেমের সর্ম্পক তৈরী করে ভিকটিমকে ঘটনাস্থলে নিয়ে আসে।
প্রকাশ করা যেতে পারে যে, ধৃত আসামী আলমগীর অল্প সময়ে অধিক অর্থ লোভের আশায় ০১ মাস পূর্বে ববিতা’কে ভিকটিম শহিদুল ইসলাম এর মোবাইল নম্বর দেয় এবং প্রেমের সম্পর্ক তৈরির মাধ্যমে ববিতাকে দেওয়া ঠিকানায় ভিকটিম শহিদুল ইসলাম কে নিয়ে আসতে বলে। আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায় যে, গত ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখে ধৃত আসামী ববিতা ভিকটিম শহিদুল ইসলাম’কে আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় ফোনের মাধ্যমে ডেকে নিয়ে আসে।
ববিতা পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ভিকটিমকে নিয়ে ঘটনাস্থল আশুলিয়া পলাশবাড়ী তালতলা মাঠে পৌঁছামাত্রই পূর্ব থেকেই অবস্থান নেওয়া ধৃত আসামীগণ যথাক্রমে আফজাল, সাগর হোসেন বাবু ও কালা বাবু, মাসুদ, রাকিব, রফিকুল ইসলামসহ পলাতক আসামী মিলন, পিন্টু ও ধলা বাবু ভিকটিমকে হাত-পা ও চোখ বেঁধে মুক্তিপণের উদ্দেশ্যে হাতুড়ী এবং লাঠি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে।
এক পর্যায়ে ধৃত আসামীরা ভিকটিম শহিদুল ইসলামকে দিয়ে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তার সমিতির পার্টনার দিদারুল ইসলামের নিকট হতে মুক্তিপণ বাবদ ১,০০,০০০/- (এক লক্ষ টাকা) বিকাশ করে দেওয়ার জন্য বলে। মুক্তিপণের টাকা না পাওয়ায় আসামীরা পুণরায় হাতুড়ী এবং লাঠি দিয়ে ভিকটিমের শরীরের বিভিন্ন অংশে বেধড়ক মারধর করতে থাকে।
ভিকটিম গুরুত্বর অসুস্থ হয়ে পড়লে ধৃত আসামী আফজাল ভিকটিমকে আশুলিয়ার নিরিবিলি বাসস্ট্যান্ড হতে নিয়ে যাওয়ার জন্য সমিতির পার্টনার মাসুদকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জানায়। ধৃত আসামীরা ভিকটিমকে অচেতন অবস্থায় আশুলিয়ার নিরিবিলি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় একটি অটোরিক্সায় রেখে পালিয়ে যায়। ঘটনার পর ধৃত আসামীরা বিভিন্ন জেলায় আত্মগোপনে অবস্থান করতে থাকে মর্মে স্বীকার করে। গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।