লাখো ভক্তের পাদচারণায় অচ্যুতানন্দ ব্রহ্মচারীর তিরোধান উৎসব শুরু
এম, নুরুন্নবী, (ভোলা):
ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে ভোলার তজুমদ্দিনে শুরু হয়েছে প্রভুপাত শ্রী অচ্যুতানন্দ ব্রহ্মচারীর (অনিল বাবাজি) ২৩ তম তিরোধান উৎসব। উপজেলার তিনটি মন্দিরে লক্ষাধীক ভক্ত সমাগমে পালিত হচ্ছে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বৃহৎ এ নামযজ্ঞানুষ্ঠান।
আজ শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারী) ভোর থেকে অধিবাসের মধ্যদিয়ে ৫ দিনব্যাপী এ উৎসবের শুরু হয়। প্রতি বছরের ১০ ফাল্গুন সাধক প্রভুপাত শ্রী অচ্যুতানন্দ ব্রহ্মচারীর (অনিল বাবাজি) মৃত্যু দিবসে এই বিশেষ উৎসব পালিত হয় বলে আয়োজক কমিটি জানিয়েছে।
আয়োজকরা জানিয়েছেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বৃহৎ এ উৎসবকে ঘিরে ইতিমধ্যে পুণ্যার্থীদের ঢল নামতে শুরু করেছে। দেশের বিভিন্ন জেলা ছাড়াও নেপাল, ভুটান ও ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ থেকেও হাজার হাজার ভক্ত এসে ভিড় জমাচ্ছেন মন্দির প্রাঙ্গণে। এর মধ্যে সহস্রাধিক ভক্তের আবাসিক ব্যবস্থা করা হয়েছে।
দক্ষিণাঞ্চলের বৃহত্তম এ উৎসবকে কেন্দ্র করে তিনটি মন্দির প্রাঙ্গণ এখন লাখো ভক্তের পাদচারণায় মুখরিত। পাঁচ শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক মন্দিরে আগত ভক্তদের সেবায় দিন-রাত নিরলসভাবে কাজ করেছেন। ১২ টি তোড়ন নির্মাণের পাশাপাশি ব্যাপক আলোকসজ্জায় সাজানো হয়েছে তিনটি মন্দির প্রঙ্গন।
আড়ালিয়া গ্রামে প্রায় ১০ একরের প্রভুপাত শ্রী অচ্যুতানন্দ ব্রহ্মচারীর (অনিল বাবাজি) সমাধি মন্দির প্রাঙ্গণসহ পুরো চত্বর। জন্মস্থান শম্ভুপুর স্বরুপ আশ্রম মন্দিরে দীর্ঘ ৬ মাস অনাহারে থেকে ধ্যানরত প্রভুপাদ শ্রী অচ্যুতানন্দ’র মৃত্যুর এই দিনটিকে স্মরণ করতে ভক্ত সমাগমে মুখোরিত এখন। একই সাথে বৌ-বাজার শীবশক্তি মন্দিরেও ৩২ প্রহরে নামযজ্ঞনুষ্ঠানে ভক্তদের ভীড় রয়েছে।
উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের আড়ালিয়া গ্রামে প্রভুপাত শ্রী অচ্যুতানন্দ ব্রহ্মচারীর (অনিল বাবাজি) সমাধি মন্দির ও শম্ভুপুর ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের জন্মস্থানে স্বরুপ আশ্রম মন্দিরে তিরোধান উৎসব উপলক্ষে ৪০ প্রহরব্যাপী করে মহানাম যজ্ঞানুষ্ঠান হবে। তিনটি মন্দিরে বিভিন্ন জেলার ১৮ টি কীর্তনীয় দল এ যজ্ঞানুষ্ঠান পরিবেশন করবে।
বিগত বছরের ন্যায় এ বছরও ভক্তদের জন্য নান্দনিক দৃষ্টিনন্দন বৃন্দাবন নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে সত্য, দাপর, কলি ও ত্রেতা- এ চার যুগের নিদর্শনস্বরূপ শতাধিক বিগ্রহের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে মনীষীদের নানান প্রতিকৃতি। সেখানে ভক্তরা প্রার্থনা ও শ্রদ্ধা নিবেদন করে থাকেন।
এ ছাড়াও নির্মাণ করা হয়েছে মনোমুগ্ধকর কুণ্ডলী। বিগত বছরের মতো এ বছরও পুণ্যার্থীদের জন্য ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প ও চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করেছেন, উপজেলার ঐতিহ্যবাহী সংগঠন কুঞ্জের হাট হিন্দু যুবসংঘ। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে মন্দির চত্বরের চারপাশে তৈরি পোশাক, ফার্নিচার, কসমেটিকস, নিত্যপণ্য এবং কুটির শিল্প ছাড়াও অসংখ্য খাবার দোকানের স্টল বসছে।
মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি রুপন চন্দ্র মজুমদার বলেন, অনিল বাবাজির ২৩তম তিরোধান উৎসবে সারা দেশের মধ্যে অন্যতম একটি বৃহৎ উৎসব এখানে হচ্ছে। প্রতি বছরের মতো এ বছরও দেশ ও দেশের বাইরের লাখো ভক্তের আগমন ঘটবে। মন্দির প্রাঙ্গণে নতুন করে আরও কিছু ভবন নির্মাণ ও প্রবেশ সড়কের রাস্তাটি সংস্কার করা প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।
স্বরুপ আশ্রমের সাধক হরিহর দত্ত জানান, ভক্তদের জন্য প্রতিদিন প্রসাদ বিতরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রশাসনের সার্বিক সহযোগীতায় সু-শৃঙ্খলভাবে উৎসব চলছে। এ জন্য সবার সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।
থানার অফিসার ইনচার্জ জিয়াউল হক জানান, এই আয়োজনে ভক্ত ও দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশের দুটি টহল টিম মোতায়েন আছে। এছাড়াও অনুষ্ঠানস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।