আ. লীগের সম্মেলনে দুই পক্ষের সংর্ঘষ চেয়ার ছোড়াছুড়ি
প্রদীপ মোহন্ত, (বগুড়া):
বগুড়ার শেরপুরে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলনে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ, চেয়ার ছোড়াছুড়ি ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এতে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীসহ উভয়পক্ষের অন্তত ১৫ জন নেতাকর্মী আহত হন। এর মধ্যে গুরুতর ছয়জনকে স্থানীয় সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আজ শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে উপজেলার বিশালপুর ইউনিয়নের শ্যামনগর প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আয়োজিত চার নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলনে এই ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে আহতরা হলেন-ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী আবু জাফর, তার ভাই জাহিদ হাসান, আ. লীগ কর্মী মামুনুর রশিদ, আবু শাফি, শাহ আলম, শাকিল আহম্মেদ, খোকা মিয়া ও শহিদ মিয়া।
এছাড়া বাকি আহতরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি চলে যাওয়ায় তাদের নাম পরিচয়-জানা সম্ভব হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শনিবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার বিশালপুর ইউনিয়নের চার নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলন শুরু হয়। প্রথম অধিবেশনে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা বক্তব্য রাখেন। এরপর বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে ওই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি গঠনের লক্ষ্যে শুরু হয় কাউন্সিল অধিবেশন।
একপর্যায়ে ওয়ার্ড সভাপতি হিসেবে প্রশান্ত কুমার ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে হাফিজুর রহমানের নাম ঘোষণা করা হয়। সম্মেলনে কাউন্সিলরদের মতামত ও ভোট ছাড়াই কমিটির সভাপতি-সম্পাদকের নাম ঘোষণা করার অভিযোগ তুলে আরেক সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী আবু জাফর প্রতিবাদ করেন। এসময় তার কর্মী-সমর্থকরা হৈচৈ শুরু করেন। একপর্যায়ে নবনির্বাচিত ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান ও তার কর্মী-সমর্থকরা তাদের হৈচৈ করতে নিষেধ করেন। এনিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে বাকবিতন্ডা শুরু হয়। সেই সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। এসময় সম্মেলনের চেয়ার ছোড়াছুড়ি ও ভাঙচুর করা হয়।
এ প্রসঙ্গে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী আবু জাফর অভিযোগ করে বলেন, সম্মেলনে কাউন্সিলরদের কোনো মতামত ও ভোট নেওয়া হয়নি। কিন্তু নতুন কমিটি ঘোষণা দেন দলের নেতারা। গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে কমিটির সভাপতি-সম্পাদকের নাম ঘোষণা করায় আমিসহ অধিবেশনে উপস্থিত কাউন্সিলররা প্রতিবাদ জানান। সেইসঙ্গে ঘোষিত ওই অবৈধ কমিটি প্রত্যাখান করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকেন। এসময় তার প্রতিদ্বন্দ্বী হাফিজুর রহমানসহ তার ভাড়াটে লোকজন দলের কাউন্সিলরদের ওপর অতর্কিতভাবে হামলা চালায়। এতে তার পক্ষের বেশকয়েকজন নেতাকর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি।
তবে নবনির্বাচিত ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান বলেন, সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে দলের গঠনতন্ত্র যথাযথ অনুসরণ করেই নতুন কমিটির সভাপতি-সম্পাদক নির্বাচন করে নাম ঘোষণা করা হয়। কিন্তু কাউন্সিলরদের মতামত অনুযায়ী কমিটি ঘোষণা দেওয়া মাত্রই আবু জাফর ও তার লোকজন হট্টগোল শুরু করেন। একপর্যায়ে উপস্থিত নেতাকর্মীদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। এসময় সামান্য মারামারির ঘটনা ঘটলেও তেমন কিছু হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।
বিশালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শাজাহান আলী সাজা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে সভাপতি-সম্পাদকের নাম ঘোষণা দেওয়াকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি শুরু হয়। এতে উভয়পক্ষের বেশকিছু নেতাকর্মী আহত হন। এরমধ্যে গুরুতর ছয়জনকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে স্বীকার করে তিনি।
শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম বলেন, এই ঘটনায় এখনও কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।