বন্ধের নির্দেশ দেয়ার পরও দিনভর চলে বগুড়ার পোড়াদহ মেলা
প্রদীপ মোহন্ত, (বগুড়া):
বগুড়ায় চারশ বছরের ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলা বসার পর তা এক ঘণ্টার মধ্যে বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন। কিন্তু জেলা প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মেলা চলেছে দিনব্যাপী।
গতকাল (৯ ফেব্রুয়ারি) বুধবার বেলা ১১ টার দিকে মেলাতে গিয়ে তা এক ঘণ্টার মধ্যে বন্ধ করতে বলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সালাহউদ্দিন। তিনি ঘোষণা দিয়ে মেলার স্থান ত্যাগ করার পরপরই আবারো মেলার কার্যক্রম শুরু করা হয়।
বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার পূর্বে ইছামতীর তীরে পোড়াদহ এলাকায় এ মেলা বসে। ফলে মেলাটি সবার কাছে ‘পোড়াদহ’ মেলা নামেই সর্বাধিক পরিচিত। প্রায় ৪০০ বছর আগের ঘটনা। মেলাস্থলে ছিল একটি বিশাল বটবৃক্ষ। সেখানে একদিন হঠাৎ এক সন্ন্যাসীর আবির্ভাব ঘটে। পরে সেখানে আশ্রম তৈরি করেন সন্ন্যাসীরা। একপর্যায়ে স্থানটি পুণ্যস্থানে পরিণত হয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে।

প্রতিবছর মাঘের শেষ বুধবার ওই স্থানে সন্ন্যাসীপূজার আয়োজন করে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। সমাগত হয় দূর-দূরান্তের ভক্তরা। কালের আবর্তে স্থানটিতে লোকজনের উপস্থিতি বাড়তেই থাকে। এভাবে গোড়াপত্তন ঘটে পোড়াদহ মেলার।
মেলাটি বসে সাধারণত একদিনের। কিন্তু মেলার পরের দিনে ‘বউ’ মেলাও বসে। এ সময় সাধারণত নারীরা তাদের হরেক রকেমর পণ্য কিনে থাকেন। মেলায় প্রতিবছরই কয়েক মনে ওজনের বাঘাইড় থাকলেও এবার নেই।
মেলায় আসা ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাগাড় বিক্রি বিষয়ে সরকারি নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েই তারা মেলায় মাছ নিয়ে এসেছেন।
তবে এবার করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় এবার এ মেলার অনুমতি দেয়নি জেলা প্রশাসন। অনুমতি ছাড়াই আয়োজকরা মেলা বসিয়েছেন।
বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সালাহউদ্দিন, গাবতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রওনক জাহানসহ আরও অনেক কর্মকর্তা মেলা বন্ধের জন্য মেলার স্থানে গিয়েছিলেন। পরে ব্যাপক জনগণ সমাগমের কারণে তাৎক্ষণিকভাবে তা হয়ে ওঠেনি।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সালাহউদ্দিন বলেন, ‘বগুড়ায় করোনা সংক্রমণ উদ্বেগজনক। এই কারণে জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে মেলার অনুমতি দেওয়া হয়নি। তাই এক ঘণ্টার মধ্যে দোকানের মালামাল নিয়ে আপনারা (দোকানী) মেলা ত্যাগ করতে বলা হয়।’
জানতে চাইলে গাবতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রওনক জাহান বলেন, করোনা সংক্রমণের কারণে এবার মেলার কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। অনুমিত উপেক্ষা করেই সাধারণ জনগণ এই মেলায় আয়োজন করেছেন। আমরা মেলায় গিয়ে তাদের নিষেধ করেছি। এক ঘণ্টার মধ্যে দোকানপাট বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছে। করোনা সংক্রমণ রোধে মেলা বন্ধের বিষয়ে জেলা প্রশাসন সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এবার সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকায় মেলা বাগাড় মাছ নেই। তবে অন্যান্য মাছ রয়েছে।
জেলা প্রশাসন পোড়াদহ মেলা বন্ধের নির্দেশনা দিলেও তা মানেননি আয়োজকরা। বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সালাহউদ্দিন, গাবতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রওনক জাহান মেলার এসে এক ঘণ্টার মধ্যে বন্ধের নির্দেশ দেন। কিন্তু তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করার পরপরই মেলার কার্যক্রম আবারো স্বাভাবিক হয়ে যায়।