ইউপি সদস্য নুহুর বিরুদ্ধে বালুঘাট জবর দখলের অভিযোগ
মো.আবু জুবায়ের উজ্জল, (টাঙ্গাইল):
টাঙ্গাইলের ভুয়াপুর উপজেলার নিকরাইল ইউনিয়নের যমুনা নদীর তীরবর্তী বাগান বাড়ী এলাকার বালুঘাট জবর দখলের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ইউপি সদস্য নুরে আলম নুহুর বিরুদ্ধে। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে সাধারন মানুষ এমন দাবী এলাকাবাসীর।
বঙ্গবন্ধু সেতু এলাকা থেকে ভূঞাপুরের গোবিন্দাসী পর্যন্ত যমুনা নদীর বাম তীর ঘেষে অন্তত ১৯টি অবৈধ বালু ঘাট চালানো হচ্ছে। এরমধ্যে বাগানবাড়ী এলাকায় দীর্ঘ ১৩ বছর যাবত নিকরাইল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল মতিন সরকার স্থানীয় ভূমি মালিকদের কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে বালুঘাট পরিচালনা করছেন।
চতুর্থ ধাপে অনুষ্ঠিত নিকরাইল ইউপি নির্বাচনের পর আব্দুল মতিন সরকার পরাজিত হন। কিন্তু ২ নং ওয়ার্ডে নুরে আলম মন্ডল নুহু ইউপি সদস্য পুননির্বাচিত হওয়ায় তিনি বালুঘাট দখলে বেপরোয়া হয়ে ওঠে। সম্প্রতি নুরে আলম নুহু দলবল নিয়ে নিকরাইল ইউনিয়ন আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি নয়ন সরকারের ‘ভাবীর ঘাট’ নামক বালুঘাটের কর্মচারীদের মারধর করে জবরদখল করে।
গত বুধবার(২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ইউপি সদস্য নুরে আলম নুহু তার দলবল ও বিভিন্ন এলাকা থেকে সন্ত্রাসী এনে বাগানবাড়ী বালুঘাট জবরদখলের জন্য দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আক্রমন করে। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ৭ রাউন্ড টিঢারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে উভয়পক্ষের ১০ জন আহত হয়।
ওই ঘটনায় ভূঞাপুর থানার এসআই মো. সাইফুল ইসলাম বাদি হয়ে ইউপি সদস্য নুরে আলম মন্ডল নুহুকে প্রধান ও আব্দুল করিমকে দ্বিতীয়সহ ৫৯জনের নামোল্লেখ করে চারটি গ্রামের অজ্ঞাত আরও ৭০০-৮০০ জনের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার(৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে মামলা দায়ের করেছেন।তবে এ পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
এদিকে, মামলা খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়ায় নিকরাইল ইউনিয়নের চারটি গ্রাম পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। গ্রামগুলোতে গ্রেপ্তার আতঙ্ক বিরাজ করছে। দিনের ওইসব এলাকায় দু-চারজন পুরুষের দেখা মিললেও রাতে কেউ বাড়িতে থাকছে না।
‘ভাবীর ঘাট’ নামক বালুঘাটের মালিক নয়ন সরকার জানান, তার ভাই সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে পরাজিত হওয়ার পর ২নং ইউপি সদস্য নুরে আলম নুহু দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র সহ দলবল নিয়ে তার বালুঘাট জবরদখল করে নিয়েছে। এ বিষয়ে তিনি সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেছেন।
নিকরাইল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মতিন সরকারের ব্যবসায়ীক অংশিদার আলহাজ্ব আব্দুল হালিম সরকার জানান, স্থানীয় ইউপি সদস্য নুরে আলম নুহু তার দলবল ও বিভিন্ন এলাকা থেকে সন্ত্রাসী এনে তাদের বাগানবাড়ী বালুঘাটের ক্যাশকাউণ্টারে আক্রমন করে।
এ সময় তারা কর্মচারীদের মারপিট করে এবং ক্যাশে থাকা নগদ প্রায় ৬ লাখ টাকা নিয়ে যায়। ক্যাশকাউণ্টারে থাকা শহিদুল ইসলামকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। খবর পেয়ে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
বাগানবাড়ী বালুঘাটের জমির মালিক হাজী বাছেদ সরকার, মো. মর্তুজ আলী, আব্দুল গনি, মো. আনোয়ার হোসেন, আব্দুর রাজ্জাক, মো. শহিদুল ইসলাম, মো. রুবেল মিয়া, রাজ্জাক সরকার, মুজাফ্ফর হোসেন, লিটন সরকার, মজিদ সরকারসহ অনেকেই জানান, সাবেক চেয়ারম্যান মতিন সরকার তাদের জমি ভাড়া নিয়ে চুক্তি অনুযায়ী ভাড়া পরিশোধের মাধ্যমে বালুঘাট পরিচালনা করছিলেন।
বুধবার হঠাৎ নুরে আলম নুহু মেম্বার দলবল নিয়ে ঘাটে আক্রমন চালায়। তারা আরও জানান, নুরে আলম নুহু মেম্বার তাদের জমি পুনরায় নিজে ভাড়া নিতে চাচ্ছেন- না দিলে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে।
ইউপি সদস্য নুরে আলম মন্ডল নুহুর মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার স্ত্রী জানান, মামলা হওয়ায় তিনি অন্যত্র রয়েছেন।
ভূঞাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মো. আব্দুল ওহাব জানান, বালু ঘাটে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের সময় গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণের কোন ঘটনা ঘটেছে কিনা তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
ওই সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য নুরে আলম মন্ডল নুহুকে প্রধান এবং অপর ইউপি সদস্য আব্দুল করিমকে দ্বিতীয় নম্বর আসামি করে ৫৯জনের নামোল্লেখ সহ উভয়পক্ষের অজ্ঞাত ৭০০-৮০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। সংঘর্ষের সময় ধারণ করা ভিডিও ফুটেজ দেখে আসামিদের সনাক্ত ও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
শান্তি বজায় রাখতে বাগানবাড়ী বালু ঘাট ও আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
প্রকাশ, বুধবার দুপুরে বাগানবাড়ী বালু ঘাটে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মো. আব্দুল মতিন সরকার ও নবনির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদুল হক মাসুদের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়।