শিরোনাম

South east bank ad

চারদিনের চেষ্টায় লেগুনার হেলপার সেজে হত্যার রহস্য উদঘাটন

 প্রকাশ: ৩০ জানুয়ারী ২০২২, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   অটোমোবাইল

বিডিএফএন টোয়েন্টিফোর.কম

পুলিশ পরিচয় গোপন করে লেগুনাচালকের হেলপার সেজে ক্লু-লেস হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন ও আসামি ধরেছেন যাত্রাবাড়ী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) বিল্লাল আল আজাদ।

টানা চারদিন রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, সাইনবোর্ড, কোনাবাড়ী, ডেমরা, চিটাগাং রোড আর নারায়ণগঞ্জের জালকুড়ি লেগুনাস্ট্যান্ডে হেলপারি করে তিনি উদঘাটন করেন ক্লু-লেস হত্যাকাণ্ডের রহস্য। খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন লাল রঙের পাদানিওয়ালা একটি লেগুনা। যে লেগুনায় খুলতে পারে হত্যার জট।

গত (২২ জানুয়ারি) ভোরে রাজধানীর মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে অজ্ঞাতপরিচয়ে এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে পরিবারের সদস্যরা শনাক্ত করেন এটি মহির উদ্দিনের মরদেহ। তিনি পেশায় মাছ ব্যবসায়ী।

শনাক্ত করেন সেই লেগুনা এবং গ্রেফতারও করা হয় চারজনকে। লেগুনার হেলপারি করে আয় করেন প্রায় ৭০০ টাকা। তবে, একদিন যাত্রাবাড়ী থেকে সাইনবোর্ড হয়ে চিটাগাং রোড পর্যন্ত ১২ জন যাত্রী উঠলে চিটাগাং রোডে নামার সময় ভিড়ের মধ্যে চারজন ভাড়া না দিয়ে চলে যায়। চারজনের ভাড়া চালক এসআই বিলালের কাছ থেকে নিয়ে নেন বলেও জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।

জানা গেছে, চলন্ত লেগুনা থেকে এক মাছ ব্যবসায়ীকে মারধর করে সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে ফেলে যায় ছিনতাইকারীরা। পরে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। দুর্ঘটনায় অপমৃত্যু বলে মরদেহের ময়নাতদন্তও সম্পন্ন হয়। ঘটনার এক সপ্তাহ পর পুলিশ উদ্ঘাটন করেছে সেটি অপমৃত্যু নয়, হত্যা। এ ঘটনায় গত (২৩ জানুয়ারি) অজ্ঞাত আসামি করে যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা করেন তার ছেলে।

পুলিশ জানায়, গত ২২ জানুয়ারি ভোর পৌনে ৬টার দিকে গুলিস্তান ফ্লাইওভারের যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা বরাবর অংশ থেকে অচেতন অবস্থায় এক ব্যক্তিকে পড়ে থাকতে দেখে থানায় খবর দেন পথচারীরা। পরে তাকে উদ্ধার করে মিটফোর্ড হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ওই দিন বিকেলেই খাইরুল ইসলাম নামে এক যুবক যাত্রাবাড়ী থানায় অভিযোগ করেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই বিল্লাল আল আজাদ সংবাদমাধ্যমে বলেন, তদন্তভার পেয়েই গুলিস্তান ফ্লাইওভার সংলগ্ন বেশ কয়েকটি সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করি। সিসিটিভি ফুটেজে একটি লেগুনা শনাক্ত করা গেলেও নম্বর প্লেট দেখা যায়নি। কিন্তু লেগুনায় যাত্রী ওঠার সিঁড়িতে লাল রং ছিল। এটাকেই ক্লু হিসেবে ধরে খুনিদের শনাক্ত করার চেষ্টা করি।

টানা চারদিন বেশ কয়েকটি রুটের লেগুনার হেলপারি করি। যাত্রাবাড়ী থানার সামনে থেকে চিটাগাং রোড, নূর কমিউনিটি সেন্টার থেকে কোনাপাড়া হয়ে স্টাফ কোয়ার্টার, যাত্রাবাড়ী ইলিশ কাউন্টার থেকে পোস্তগোলা, শনির-আখড়া থেকে নিউমার্কেট সবশেষে সাইনবোর্ড থেকে নারায়ণগঞ্জের চাষাড়া জালকড়ি রুটে হেলপারি করি। প্রায় ৭০০ টাকা পারিশ্রমিক পাই।

বিল্লাল আল আজাদ বলেন, কখনো কখনো স্ট্যান্ডে স্ট্যান্ডে চাকরি খোঁজার নামে খুঁজতে থাকি সেই লাল রঙের লেগুনাটি। হেলপার সেজে ঘুমিয়ে ছিলাম গাড়ির ভেতরেই। এভাবে অন্তত ৩০০ লেগুনা যাচাই করেছি। লাল পা-দানির লেগুনা না পেয়ে যাত্রাবাড়ী স্ট্যান্ডে গিয়ে নিজেই লেগুনা চালানোর আগ্রহের কথা জানাই অন্য চালক সহকর্মীদের কাছে।

লাইনে কোনো লেগুনা বসে আছে কি না, তা খুঁজতে থাকি। শেষপর্যন্ত একজন জানান, একটি লেগুনা নষ্ট হয়ে কদমতলীর একটি গ্যারেজে পড়ে আছে। সেটি মেরামত করে চালানো যাবে। কারণ এর চালক অসুস্থ হয়ে গ্রামে চলে গেছেন। শেষ পর্যন্ত কদমতলীর ভুলুর গ্যারেজে গিয়ে পাই সেই লাল পা-দানির লেগুনা।

আমি বুঝতে পারছিলাম রহস্য উদঘাটনের কাছাকাছি পৌঁছে গেছি। এরপর সেই লেগুনার মালিককে খুঁজে বের করি। তার কাছে জানতে চাই, এর আগে কে চালিয়েছিল এ লেগুনা। ঠিকানা নিয়ে জানতে পারি, ফরহাদ নামে সেই চালক মাদারীপুর শ্বশুড়বাড়িতে রয়েছেন। এরপর ২৪ জানুয়ারি রাতে টিম নিয়ে চলে যাই মাদারীপুর।

পেয়েও যাই চালককে। কিন্তু চালক তথ্যপ্রমাণ দিয়ে বলতে থাকেন, ২১ জানুয়ারি তিনি লেগুনা জমা দিয়ে চলে এসেছিলেন। প্রযুক্তিগত তদন্তেও তার কথার প্রমাণ মেলে। এতে রহস্য উদঘাটনে হতাশ হয়ে যাই।

পুলিশের এ কর্মকর্তা জানান, তার ডিসি স্যার, এসি স্যার আর ওসি স্যার তাকে নানাভাবে দিকনির্দেশনা আর সাহস দিয়ে চলছিলেন। ফের লেগুনার হেলপার সেজে যান কদমতলীর ভুলুর গ্যারেজে। জানতে পারেন ২২ জানুয়ারি রাতে লেগুনাটি নিয়েছিলেন মঞ্জুর নামে এক চালক। তার হেলপার ছিলেন আবদুর রহমান।

BBS cable ad

অটোমোবাইল এর আরও খবর: