নিজ প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীদের হাতে ব্যাংকের ঝুঁকি কম?
বিডিএফএন টোয়েন্টিফোর.কম
এতদিন দেশের বেসরকারি ব্যাংকগুলোর শীর্ষ নির্বাহী পদে দাপট ছিল স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, এএনজেড গ্রিন্ডলেজসহ বিদেশী ব্যাংক থেকে আসা ব্যাংকারদের। বেশি বেতনে অন্য ব্যাংক থেকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নিয়োগ দেয়া এক রকমের চল হয়ে উঠেছিল ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে।
আশির দশক থেকে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর গুরুত্বপূর্ণ এসব পদে বিদেশী ব্যাংকে চাকরি করা কর্মকর্তাদের চাহিদা ছিল উল্লেখ করার মতো। কিন্তু পরিস্থিতি পাল্টেছে। বিদেশী ব্যাংকের পরিবর্তে এখন বেসরকারি ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহী পদে নিজেদের ব্যাংকের কর্মীদের বেশি অগ্রাধিকার দিচ্ছেন উদ্যোক্তারা। নিজেদের কর্মীকে এমডি পদে নিয়োগ দেয়ার বিষয়টি কিছু বেসরকারি ব্যাংকের চর্চা হয়ে উঠেছে।
নিজ প্রতিষ্ঠানে শিক্ষানবিশ হিসেবে চাকরিজীবন শুরু করেছেন অথবা একই প্রতিষ্ঠানে প্রায় দুই দশক সময় অতিবাহিত করেছেন এমন ব্যাংকারদের মধ্যে যারা এরই মধ্যে এমডি-সিইও হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন, তাদেরই নিজ প্রতিষ্ঠানে বেড়ে ওঠা শীর্ষ নির্বাহী হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।
দেশের সবচেয়ে বড় ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের শীর্ষ নির্বাহী পদে নিজেদের কর্মীরা নিয়োগ পাচ্ছেন। একই সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে বেসরকারি খাতের দ্বিতীয় বৃহৎ ব্যাংক পূবালীতে। সব মিলিয়ে দেশের অন্তত নয়টি বেসরকারি ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহী পদে নিজেদের কর্মীরা দায়িত্ব পালন করছেন। এ তালিকায় থাকা শীর্ষ নির্বাহীদের মধ্যে রয়েছেন ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা, পূবালী ব্যাংকের এমডি শফিউল আলম খান চৌধুরী ও উত্তরা ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ রবিউল হোসেন। এ তিনজন শীর্ষ নির্বাহীর ব্যাংকিং ক্যারিয়ার শুরুই হয়েছিল নিজ নিজ ব্যাংকে। ৩৫ বছরের বেশি সময় ধরে তারা একই ব্যাংকে চাকরি করছেন।
আবার ব্যাংকের মধ্যম স্তরের কর্মী হিসেবে নিয়োগ পেয়ে শীর্ষ নির্বাহী পদে দায়িত্ব পেয়েছেন ব্যাংক এশিয়ার এমডি মো. আরফান আলী, ঢাকা ব্যাংকের এমডি এমরানুল হক, যমুনা ব্যাংকের এমডি মির্জা ইলিয়াছ উদ্দিন আহমেদ, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এমডি আবুল কাশেম মো. শিরিন, এক্সিম ব্যাংকের এমডি ড. মোহাম্মদ হায়দার আলী মিয়া ও মার্কেন্টাইল ব্যাংকের এমডি মো. কামরুল ইসলাম চৌধুরী। তারা প্রত্যেকেই নিজ নিজ ব্যাংকে ২০ বছরের বেশি সময় ধরে চাকরি করছেন। ব্যাংকের মাঝারি স্তরের কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দিয়ে শীর্ষ নির্বাহী হয়েছেন। শীর্ষ নির্বাহী হিসেবে তারা দায়িত্ব নেয়ার পর ব্যাংকগুলো উন্নতি করেছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অন্য ব্যাংক থেকে ধার নিয়ে আসা শীর্ষ নির্বাহীর চেয়ে নিজেদের ব্যাংকের কর্মকর্তাকে শীর্ষ নির্বাহী পদে নিয়োগ দেয়া যেকোনো প্রতিষ্ঠানের জন্যই মঙ্গলজনক। শীর্ষ নির্বাহী হিসেবে যাকে নিয়োগ দেয়া হয়, তিনি ব্যাংককে নিজের প্রতিষ্ঠান মনে করেন। আবার কর্মীরাও শীর্ষ নির্বাহীকে নিজেদের লোক মনে করে বেশি আনুগত্য দেখান। ব্যাংকের বিভিন্ন স্তরে নেতৃত্ব দেয়ার মতো যোগ্য লোকও তৈরি হয় বলে মনে করছেন তারা।