হাওর মন্ত্রনালয় গঠন দাবীতে প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে স্মারকলিপি
মোঃ নজরুল ইসলাম, (ময়মনসিংহ):
পরিকল্পিতভাবে দেশের মিঠা পানি ও মৎস্য ভান্ডারসহ প্রাকৃতিক সম্পদের উন্নয়নের লক্ষ্যে হাওর মন্ত্রনালয় গঠনের দাবীতে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন ময়মনসিংহস্থ নেত্রকোণা সমিতির নেতৃত্ববৃন্দ।
ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে আঝ বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) দুপুরে স্মারকলিপি গ্রহণ করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক।
স্মারকলিপিতে জানানো ১০টি উপজেলা নিয়ে নেত্রকোনা জেলার হাওর-বাওর-নদী-নালা-খাল-বিল বেষ্টিত বিস্তীর্ণ নিম্নভূমি ভাটি অঞ্চলে আমাদের শেকড়। সীমাহীন সমস্যা ও বৈরী আবাহাওয়া সত্ত্বেও দিনভর মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কৃষককুল হাওর অঞ্চলকে ‘ভাত ও মাছের ভান্ডার’ নামটি ধরে রেখেছেন। তাদের সমস্যা নিরসনে প্রশাসন, বিভিন্ন সংস্থা, সামাজিক সংগঠন কাজ করে গেলেও পরষ্পরের সাথে যোগসূত্রের অভাবে কোটি কোটি টাকার অনেক প্রকল্প বাস্তবায়নের মুখ দেখতে পায়না। ফলে একদিকে উৎপাদন ব্যাহত হয় অন্যদিকে উৎপাদন নির্ভর হাওরপাড়ের মানুষের দুর্দশা ক্রমাগত বাড়তে থাকে। তাই জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে হাওর ও জলাভূমি অঞ্চলের উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে একটি হাওর মন্ত্রণালয় গঠন নেত্রকোনাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবী।
দেশে ছোট-বড় প্রায় চারশতাধিক হাওর জলাশয় ও জলাভূমি রয়েছে যার আয়তন প্রায় ৮ লাখ হেক্টর। ভাটির দেশ হিসেবে পরিচিত সুনামগঞ্জে রয়েছে ১৩৩টি, সিলেটে ৪৩টি, হবিগঞ্জে ৩৮টি, মৌলভীবাজারে ৪টি, কিশোরগঞ্জে ১২২টি, নেত্রকোনায় ৮০টি এবং ব্রাহ্মণবাড়ি্যায় ৩টি হাওর। এসব এলাকা নিয়ে গঠিত হাওরাঞ্চল বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। হাওর অঞ্চলের জনসংখ্যা প্রায় ২ কোটি। তাদের প্রায় ৯০ ভাগ জনগোষ্টী কৃষির ওপর নির্ভরশীল। অথচ এই বিপুল পরিমাণ জনগোষ্টীর জীবনমান উন্নয়নে সরকারের সুদৃষ্টি কমই দৃশ্যমান হয়। এমনকি খাদ্য উৎপাদন নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প ও সমন্বয়ের অভাবে যথাসময়ে সম্পন্ন হয়না। ফলে ফি বছর বিপুল ফসল তলিয়ে যায়। মনে রাখতে হবে হাওর বাঁচলেই বাঁচবে হাওরের বিশাল জনগোষ্ঠী। বৃহত্তর সিলেট তথা হাওরাঞ্চলে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যতবারই এসেছেন ততবারই মুগ্ধ হয়েছেন। তাঁর সফর সঙ্গী থাকতেন সুনামগঞ্জের বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিম।
শুধু মাছ আর ভাতের ভান্ডার নয়, পরিযায়ী পাখির জন্যও হাওর অভয়ারণ্য এলাকা। খাদ্যের সন্ধানে শীতকালে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে কত জাতের পাখির আগমন ঘটে। সুনামগঞ্জের ৫১টি বিলের সমন্বয়ে গঠিত টাঙ্গুয়ার হাওরকে বিশ্ব ঐতিহ্যের সম্পদ ও সৌন্দর্যের রাণী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি ২০০০ সালে টাঙ্গুয়ার হাওরকে ‘রামসার সাইট’ নামে ঘোষণা করেছেন। বিশ্বের ৫৫২টি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্যের মধ্যে টাঙ্গুয়ার হাওরের নাম ওঠে আসে। বিশ্বে বিপন্ন প্রায় বিরল প্রজাতির ২ শতাধিক পাখির অভয়াশ্রম এবং বিপন্ন প্রায় ১৫০ প্রজাতির মাছের সমাগম এই টাঙ্গুয়ার হাওর। আছে দুর্লভ জলজ প্রাণি, আছে ২০০ প্রজাতির ও বেশি গাছগাছড়া, যা থেকে জ্বালানি কাঠ, আসবাবপত্র তৈরির মাধ্যমে গ্রামীণ জীবনে অর্থনৈতিক চাঞ্চল্য বজায় থাকে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন নেত্রকোনা সমিতির সভাপতির সভাপতি অধ্যক্ষ মোঃ আবদুল হক, অধ্যাপক মোঃ জহিরুল ইসলাম খান জামাল, সহ-সভাপতি মোঃ আবদুল হাফিজ ও বাবু জোতির্ময় সাহা প্রমূখ।