ওমিক্রন মোকাবিলায় নানা প্রস্তুতি
মো. নজরুল ইসলাম, (ময়মনসসিংহ):
বৃহত্তর ময়মনসিংহের সর্ববৃহৎ ও প্রধান সরকারি চিকিৎসালয় ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটসহ জেলায় ওমিক্রন মোকাবিলায় নানা প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। মমেকহা করোনা ইউনিটে ৪০২ বেড এবং জেলার ১১টি উপজেলার প্রত্যেকটি হাসপাতালে ১০টি করে মোট ১১০টি বেড প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (মমেকহা) উপ-পরিচালক ডাঃ ওয়াইজ উদ্দিন ফরাজী জানান, ওমিক্রন মোকাবিলায় ইতোমধ্যেই ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) ২২টি শয্যাসহ করোনা ইউনিটে মোট ৪০২টি বেড প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বর্তমানে ১০০ বেড চালু রয়েছে। রোগী বৃদ্ধি পেলে পর্যায়ক্রমে আরো বেড বাড়ানো হবে। রোগী বাড়লে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক সরবরাহ দেয়ার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং ময়মনসিংহ বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালককে চাহিদা পত্র পাঠানো হয়েছে।
মমেকহা উপ-পরিচালক আরো জানান, ১০ হাজার লিটার ধারণক্ষমতা সম্পন্ন সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্টটির স্থলে ২০ হাজার লিটার সম্পন্ন ট্যাংক বসানোর জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পত্র দেয়া হয়েছে।
মমেক হাসপাতালের ইমাজেন্সী কাউন্টারে করোনা এবং ওমিক্রন সন্দেহজনক রোগীদের নমুনা সংগ্রহ করে প্রথমে এন্টিজেন টেস্ট করা হচ্ছে। যাদের নেগেটিভ রেজাল্ট আসছে তাদের নমুনা ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ এর স্থাপিত আরটিপিসিআর এ প্রেরণ করা হচ্ছে।
উপ-পরিচালক ডাঃ ওয়াইজ উদ্দিন ফরাজী আরো জানান, ওমিক্রন ও করোনা মোকাবেলায় সকলকে মাস্ক পড়তে হবে। মাস্ক পড়া নিশ্চিত করতে প্রশসনকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। সেইসাথে জনগণকেও মাস্ক পড়াসহ করোনা মোকাবেলায় আরো সচেতন হতে হবে।
ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে করোনা ইউনিটের ফোকাল পারসন ডাঃ মহিউদ্দিন খান মুন জানান, গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে করোনাকালে রোগীদের চাহিদার তুলনায় অক্সিজেন সংকট দেখা দিয়েছিল। এবারও সেই বিষয়টিকেই তারা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। এবার যেন কোনও সংকট না হয় সে জন্য আগেভাগেই তারা ঢাকায় যোগাযোগ রাখছেন।
আশার কথা শুনিয়ে তিনি আরও জানান, একটি অক্সিজেন জেনারেটর বসানোর কাজ চলছে। এর মাধ্যমে প্রাকৃতিক বাতাস থেকে অক্সিজেন তৈরি করা হবে। এটি তৈরির কাজ শেষ হলে সংকট কিছুটা কাটবে।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) পর্যন্ত আবুল কালাম (৭০) নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। তিনি করোনার উপসর্গ নিয়ে ইউনিটটিতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। মারা যাওয়া আবুল কালাম ময়মনসিংহ সদরের বাসিন্দা।
ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে করোনা ইউনিটের ফোকাল পারসন ডাঃ মহিউদ্দিন খান মুন জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ইউনিটটিতে নতুন করে ১৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে মমেকের করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৬ জনে। এর মধ্যে করোনা পজিটিভ রোগী ছয়জন। এছাড়া বর্তমানে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৪ জন। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় ৮ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
এদিকে ময়মনসিংহ জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পিসিআর ল্যাব ও অ্যান্টিজেন টেস্টে ১৫১ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ২১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
জেলা সিভিল সার্জন জেলার ১১টি উপজেলার প্রত্যেকটি হাসপাতালে ১০টি করে মোট ১১০টি বেড প্রস্তুত রাখা হয়েছে। রোগী বৃদ্ধি পেলে উপজেলা হাসপাতালগুলোতে আরো ১০টি করে শয্যা বৃদ্ধি করা হবে। তাছাড়া উদ্বোধনের অপেক্ষায় ৫০ শয্যা বিশিষ্ট তারাকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১০০ শয্যা বৃদ্ধি করার একটি পরিকল্পনাও রয়েছে।
ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক জানান, ১২ জানুয়ারি ২০২২ জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। দেশব্যাপি করোনার প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কর্তৃক নতুন নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে নির্দেশনাসমূহ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এ সভা আয়োজন করা হয়। কমিটির সকল সদস্য সভায় সংযুক্ত ছিলেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কর্তৃক জারিকৃত নির্দেশনা কঠোরভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সভায় বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। এছাড়া আগামী ১৩ তারিখ ২০২২ সকাল হতে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে ভ্রাম্যমান আদালত ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে থাকবে।