১৯ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী পৃথিবীর আলো দেখতে চায় দায়িত্ব নিলো পুনাক
প্রদীপ মোহন্ত, (বগুড়া):
বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার ছোট বালুয়া পূর্বপাড়া গ্রামে একই পরিবারের ১৯ দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর দায়িত্ব নিল পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি (পুনাক)। মানবিক উদ্যোগ নিয়ে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী পরিবারের কাছে ছুটে যাওয়ায় তারা আনন্দ প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশ পুনাক নারী কল্যাণ সমিতির সভানেত্রী আইজিপির জিশান মির্জা বৃহস্পতিবার বিকেলে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে এই দায়িত্ব নেওয়ার ঘোষণা দেন।
বাংলাদেশ পুনাক নারী কল্যাণ সমিতির সভানেত্রী জিশান মির্জা ভার্চুয়ালি বলেন, “দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের প্রথমে ভালো মানের চিকিৎসককে দেখানো হবে। যদি ওষুধ বা অপারেশনে সুস্থ হয় তাহলে সেই সকল দায়িত্ব নিবে পুনাক। পুনাক থেকে তাদের যাবতীয় চিকিৎসার ব্যয় বহন করা হবে। তাদের জন্য পুনাক আরো কিছু করবে।
পুনাক থেকে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের দায়িত্ব নেওয়ার কথা শুনে তারা সকলেই উচ্ছ্বাসিত হয়ে উঠেন। তারাও চোখের আলোয় পৃথিবী দেখার ইচ্ছে পোষণ করেন।”
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী পরিবারের সকল সদস্যরা বলেন, “দীর্ঘদিন পর হলেও পুলিশ সদস্যরা তাদের খোঁজ খবর নেওয়ায় তাদের আবার বাঁচার স্বপ্ন জেগে উঠেছে। পুলিশ সদস্যদের মঙ্গল কামনা করে তারা বলেন, এই পুলিশ সদস্যরা আরো মানবিক হয়ে উঠুক। দেশ ও জাতির কল্যাণে এগিয়ে গিয়ে আরো বড় স্বাক্ষর রাখবেন।”
পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি বগুড়ার সার্বিক ব্যবস্থাপনায় এসময় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পুনাক নারী কল্যাণ সমিতির সভানেত্রী জিশান মির্জা। এর আগে ১৯ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী পরিবারে গিয়ে খাবার, নগদ অর্থ ও শীতবস্ত্র বিতরণ করেন জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তি।
পুলিশ সুপার ছাড়াও এসময় বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অব্দুর রশীদ ও আলী হায়দার, সহকারী পুলিশ সুপার তানভীর হাসান, সোনাতলা থানার ওসি রেজাউল করিম রেজা, পরিদর্শক কামাল হোসেন, পুনাক বগুড়ার সহ সভানেত্রী দিল আকতার জাহান, মাহমুদা খানম, সাধারণ সম্পাদীকা মঞ্জুরী ইসলাম, কোষাধ্যক্ষ রওশন আরা মুন্নী। ভার্চুয়ালে পুনাক বগুড়ার সভাপতি ও জেলার এসপি সুনন্দা রায় বক্তব্য রাখেন।
দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী পরিবারের আসাদুজ্জামান (৮০) জানান, “তিনি একসময় ডাক্তার দেখিয়েছিলেন। ডাক্তাররা সে সময় বলেছিল তাদের জেনেটিক সমস্যার কারণে এই দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে। তিনি বলেন, প্রায় দুইশ বছর ধরে তাদের পরিবারে দৃষ্টি শক্তিহীন সদস্যদের জন্ম হচ্ছে। তাদের পরিবারের কেউ কেউ আবারো ডাক্তার দেখালেও তাদেরকেও একই কথা বলা হয়েছে। দৃষ্টি শক্তি ফিরে না পেয়ে তারা ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবন চালিয়ে যাচ্ছে। তারা একই পরিবারে থাকলেও এখন আটটি পরিবারে বিভক্ত হয়ে গেছেন। তাদের মধ্যে নিয়ামত হোসেনের দৃষ্টি শক্তি থাকায় সে কলেজে লেখাপড়া করছেন। তার একটা চাকুরি হলে সে আমাদের দেখভাল করতে পারতো বলে জানান।”
অজানা কারণে বংশ পরম্পরায় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হয়ে জন্মগ্রহণ করেছে পরিবারটির সদস্যরা। এই পরিবারের ১৯ সদস্যরা হলেন, মৃত তমির উদ্দিন ম-লের ছেলে আসাদুজামান (৮০), ইদ্রিস আলী (৫৫), ইউনুস আলী (৪৮), মৃত তমির উদ্দিন ম-লের মেয়ে এজেদা বেওয়া (৬০), মৃত মহির উদ্দিন ম-লের ছেলে নুরুল ইসলাম (৭০), আসাদজামানের ছেলে মোশারফ ম-ল (৪০), মিটুল (৩৪), আসাদজামানের মেয়ে মোর্শেদা (৩৬), ইদ্রিস আলীর মেয়ে আশিনুর বেগম (২৫), আশিনুর বেগমের ছেলে আজিজুর (১৬), ইউনুস আলীর মেয়ে সাবিনা বেগম (২৫), ফাতেমা (১০), সাবিনা বেগমের মেয়ে সুলতানা (৩), মৃত মুংলু ম-লের ছেলে সাহেব আলী (৩৫), সাহেব আলীর মেয়ে শারমিন (১৩), সাহেব আলীর ছেলে শহীদ (১০), নুরুল ইসলামের ছেলে শরিফুল ইসলাম (৩০), মিটুলের মেয়ে মিতু খাতুন (১৩) ও মিটুলের ছেলে ইনসান। এই ১৯ জনের পাশে দাঁড়ালো বাংলাদেশ নারী পুলিশ কল্যাণ সমিতি ও জেলা পুলিশ বিভাগ এবং জেলা পুনাক।