শিরোনাম

South east bank ad

রাবিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ছাত্র রাজনীতির বেহাল দশা

 প্রকাশ: ২৫ ডিসেম্বর ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   অটোমোবাইল

আমজাদ হোসেন শিমুল, (রাজশাহী):

বাংলাদেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ছাত্র রাজনীতির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে। ভাষা আন্দোলন থেকে নতুন প্রজন্মের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের প্রধান নেতৃত্বে ছিল শিক্ষার্থীরা। ছাত্র রাজনীতির তীর্থভূমি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে ধরা হয়। সেদিক থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের রাজনীতির অনেক অতীত-ঐতিহ্য রয়েছে।

এই ক্যাম্পাসের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা জাতীয় পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তবে বর্তমানে ক্রিয়াশীল দলগুলোর সেভাবে আর কোন জাতীয় ইস্যুতে আন্দোলন সংগ্রাম করতে দেখা যায় না। নিজেদের সাংগঠনিক কিছু কার্যক্রম ছাড়া আর তেমন কোনো কার্যক্রম নেই তাদের। প্রতিনিয়ত ঝিমিয়ে পড়ছে এই ক্যাম্পাসের রাজনীতি।

ছাত্র সংগঠনগুলোর এমন বেহাল দশায় সাধারণ শিক্ষার্থীরাও তাদের অধিকারের বিষয়ে কথা তুলতে পারছেন না। ফলে তারা বিভিন্ন সুবিধা ও ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বশেষ ২০১৪ সালে বাণিজ্যিক শিক্ষাবিরোধী আন্দোনের পর সেভাবে আর কোন বড় আন্দোলন দেখা যায়নি। ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগেরও নির্দিষ্ট কিছু দলীয় কার্যক্রম ও সাপ্তাহিক মিছিল ছাড়া উল্লেখযোগ্য কোন কর্মকান্ড চোখে পড়েনি বেশ কয়েক বছরে। অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়ার বিষয়ে সোচ্চার ক্যাম্পাসের বামপন্থী দলগুলোও যেন ঝিমিয়ে পড়েছে। সংগঠনগুলোতে কর্মী সংকট চরমে।

বছর দুয়েক আগে ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনকে ঘিরে ঝিমিয়ে পড়া এসব রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলো আড়মোড় ভাঙতে শুরু করে। সংগঠনগুলোর দলীয় টেন্টেও বাড়ে নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি। কিন্তু রাকসু নির্বাচন নিয়ে ধোয়াশার সৃষ্টি হলে আবারো নীরব হয়ে পড়ে এসব সংগঠন।

ক্যাম্পাসের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকেরা বলছেন, “ছাত্র সংগঠনগুলোতে আদর্শিক রাজনীতি চর্চার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বের গুণাবলীর বিকাশ ঘটে। এছাড়াও অতীতে বাংলাদেশের জাতীয় আন্দোলনে ছাত্র সমাজের ভূমিকা ছিল অসামান্য। বর্তমানে যারা ছাত্র রাজনীতির চর্চা করেন, তাদের অবশ্যই উচিত ছাত্র রাজনীতির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসকে ধারণ করে সামনে এগিয়ে যাওয়া। কিন্তু আমরা ক্যাম্পাসে এখন সেই আদর্শের রাজনীতির চর্চা দেখছি না। এটা আমাদের ভবিষ্যতের জন্য অবশ্যই উদ্বেগের।”

বড় কর্মসূচি আয়োজনে পিছিয়ে ছাত্রলীগ

২০১৬ সালের ১১ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে গোলাম কিবরিয়া ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ফয়সাল আহমেদ রুনু দায়িত্ব পান। এর প্রায় ছয়মাস পর পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ২০১৭ সালে এ কমিটির মেয়াদ শেষ হয়। বর্তমানে এই কমিটির ৭০ শতাংশ নেতা ক্যাম্পাস ছেড়েছেন।

নতুন কমিটি দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই নেতাকর্মীদের বিতর্কিত কর্মকান্ডে বারবার সমালোচনার শিকার হয়েছে সংগঠনটি। আবাসিক হলে দৌরাত্ম্য, নেতাকর্মীদের বেপরোয়া আচরণ, সাংবাদিক ও শিক্ষার্থী মারধর, পরীক্ষায় প্রক্সি জালিয়াতিসহ অন্যান্য বিতর্কিত কর্মকান্ডে মেয়াদজুড়ে সমালোচনায় ছিল সংগঠনটি।

এরপর গত বছরের ৫ই ফেব্রুয়ারি হল সম্মেলনের আয়োজন করার উদ্যোগ নিয়েও হঠাৎ করেই তা স্থগিত করা হয়।তবে বিভিন্ন দিবসের কর্মসূচি হিসেবে শোভাযাত্রা, বৃক্ষরোপণ, সাপ্তাহিক মিছিল, ভর্তি পরীক্ষার সময় ভর্তীচ্ছুদর সহায়তা এসব কর্মকান্ডে সরব ছিল সংগঠনটি।

নিষ্ক্রিয় ছাত্রদল
২০১৪ সালের পর থেকে ঝিমিয়ে থাকা ছাত্রদলের ঘুম ভাঙে চলতি বছর। গত ১৭ই জুন ৩১ সদস্য বিশিষ্ট ছাত্র দলের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। তবে দুই বছর মেয়াদী কমিটি গঠন করা হলেও ক্যাম্পাস রাজনীতির মাঠে নিষ্ক্রিয় ভূমিকায় ছিল সংগঠনটি। জাতীয় দিবসে সবার চোখের আড়ালে ঝটিকা মিছিল করেই শেষ সাংগঠনিক কার্যক্রম।

গতবছরের শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে মানববন্ধনের আয়োজন করে ছাত্রদল। কিন্তু কর্মসূচি শুরুর মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই প্রশাসনের বাঁধায় তাদের কর্মসূচি প- হয়ে যায়। গত কয়েক বছর যাবৎ সংগঠনটির কর্মকা- তো নেই-ই, বলতে গেলে ক্যাম্পাসে অস্তিত্ব সংকটে সংগঠনটি।

কর্মী সংকটে বামপন্থী দলগুলো
২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র মৈত্রীর ১৫ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। এক বছর মেয়াদী কমিটি দিয়ে চার বছর চলছে। মোটামুটি একই অবস্থা শাখা ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফেডারেশন ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের। ক্যাম্পাসের এই চারটি সংগঠন একত্রে প্রগতিশীল ছাত্রজোট নামে পরিচিত।

এক সময়কার সোচ্চার এসব সংগঠন সাংগঠনিক কার্যক্রম আয়োজনে আগের চেয়ে অনেক পিছিয়ে। আর যেসব কর্মসূচি আয়োজন করা হলেও সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ দুয়েকজন ছাড়া আর কারো উপস্থিতি নেই সংগঠনগুলোতে। সংগঠনগুলোর কর্মী সংখ্যাও একেবারেই কম। যার সার্বিক প্রভাব পড়ছে সাংগঠনিক কার্যক্রমেও।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, “বিভিন্ন অনুষদে পরীক্ষা ও একাডেমিক চাপ থাকায় এখনকার মিছিল-মিটিং এ নেতাকর্মীদের উপস্থিতি কম। অন্যান্য সময় আমাদের প্রতিটি প্রোগ্রামে বিভিন্ন হল ও অনুষদের নেতাকর্মীদের সরব উপস্থিতি ছিল। এছাড়া আমরা বিভিন্ন সময় কেন্দ্রীয় কর্মসূচির বাহিরেও কিছু প্রোগ্রাম করে থাকি। ”

ছাত্রদলের আহ্বায়ক সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, “কেন্দ্রীয়ভাবে কোন কমসূচি না দিলে আমরা সেভাবে কিছু করতে পারি না। বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সরকারের চাটুকার ও দালাল তাদের ব্যর্থতার কারণে ক্যাম্পাসে ক্ষমতাসীনদের বাইরের দলের সেভাবে সহাবস্থান নেই। ”

ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মোহব্বত হোসেন মিলিন বলেন, “সাম্প্রদায়িক হামলা, নিরাপদ সড়কের দাবিসহ কয়েকটি একক কর্মসূচি করেছি। তবে ক্ষমতাসীন দলের একক আধিপত্য ও অগণতান্ত্রিক পরিবেশ, রাজনীতিতে ভয়ের সংস্কৃতি এসব কঠিন পরিস্থিতিতে বিরোধী মতের সংগঠনগুলোর রাজনীতিতে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রায় একই কথা বলেন ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি শাকিলা খাতুন।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সুলতান মাহমুদ বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অধিকার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম দীর্ঘদিন ধরে অকার্যকর রয়েছে। বর্তমানে গণতান্ত্রিক ও প্রতিনিধিত্যমূলক তেমন কোন জায়গাও নেই। ফলে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সময় ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এছাড়া বর্তমানে ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনগুলোও সেভাবে শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে কাজ করছে না। ছাত্র সংগঠনগুলোর সম্মেলন দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় হওয়ায় তাদের সেভাবে নেতৃত্ব বিকাশ হচ্ছে না। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে আরো বেশি সাংগঠনিক, রাজনৈতিক ও প্রগতিশীলতার চর্চা হওয়া দরকার। এটির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ধারার শিক্ষকদের এগিয়ে আসতে হবে।”

এমএফ

BBS cable ad

অটোমোবাইল এর আরও খবর: