ভারতীয় ট্রাক চালকদের ছুরিকাঘাত, ব্যাহত সীমান্ত বাণিজ্য
মো: জামাল হোসাইন, (বেনাপোল):
পণ্য নিয়ে বেনাপোল বন্দরে এসেছিলেন কয়েকজন ভারতীয় ট্রাক চালক। অভিযোগ রাতে বাংলাদেশি সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা বন্দরের মধ্যে ঢুকে মারধর করে, রাসায়নিক ছিটিয়ে চালকদের অজ্ঞান করে টাকা-মোবাইল ছিনিয়ে নিয়েছে।
তার দিন কয়েক আগেই বেনাপোল বন্দরে এক ভারতীয় ট্রাক চালককে মারধর করে টাকা, মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়ার সময় বাধা দেওয়ায় ছুরিকাঘাত করা হয়। হৃষিকেশ যাদব নামে উত্তরপ্রদেশের ওই ট্রাক চালকের শরীরে ১৯টি সেলাই দিতে হয়। এটা খুবই উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে দু’দেশের সীমান্ত বাণিজ্যে।
বেনাপোল বন্দরের নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনীর (পিমা) পাশাপাশি আমর্ড পুলিশ ও আনসার সদস্যরা নিরাপত্তার দায়িত্ব থাকার পরও বন্দরের অভ্যন্তরে কি ভাবে সন্ত্রাসীরা ঢুকে প্রতিনিয়ত ভারতীয় ট্রাক থেকে পণ্য চুরি ও চালকদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ক্যাশ টাকা, মোবাইল ছিনিয়ে নিচ্ছে। ভারতীয় চালক, ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি বেনাপোল বন্দর ব্যবহারকারীদের বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে। বন্দর কর্তৃপক্ষকে বার বার বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতীয় ব্যবসায়ীরা জানানোর পরও বন্দর কর্তৃপক্ষের দায়িত্বরত নিরাপত্তা কর্মীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় সীমান্ত বাণিজ্য ব্যাহত হওয়ার আশংকা করছে ব্যবসায়ীরা।
গত মঙ্গলবার রাতে এই ঘটনার প্রতিবাদে ভারতীয় ট্রাক চালক-খালাসিরা বুধবার সকাল থেকে পেট্রাপোল-বেনাপোল সীমান্তের নো-ম্যানস ল্যান্ডে জড়ো হয়ে অবস্থান-বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। তারা পণ্য নিয়ে বেনাপোল বন্দরে আসতে আপত্তি জানান। এর ফলে সকাল ১১টা পর্যন্ত বাণিজ্যের কাজ ব্যাহত হয়। ট্রাক চালক ও খালাসিদের সমর্থন জানিয়েছেন ওপারের বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন সংগঠনও।
বেনাপোলের বিপরীতে পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানানো হয়েছে, এদিন সকালে নো-ম্যানস ল্যান্ডে এসে ভারতীয় ট্রাক চালকদের নিরাপত্তার আশ্বাস দেন বেনাপোল বন্দরের সহকারী পরিচালক (ট্রাফিক) সঞ্জয় বারই। এরপরে অবস্থান-কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন চালকেরা।
ক্লিয়ারিং এজেন্ট সংগঠনের সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, বেনাপোল একটি সুসংহত পোর্ট। অথচ সেখানে কোন রকম নিরাপত্তা নেই বললেও কম বলা হবে। মঙ্গলবার রাতে বেনাপোল বন্দরে ১০ জন ভারতীয় ট্রাক চালককে শারীরিক নিগ্রহ করে টাকা, মোবাইল ছিনতাই করেছে বাংলাদেশি সন্ত্রাসীরা। বেনাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছেন, সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এ দেশ থেকে পণ্য নিয়ে যাওয়া ট্রাক দ্রুত খালি করার আশ্বাসও দিয়েছেন তারা।
আক্রান্ত ট্রাক চালক ফিরোজ সিংহ বলেন, “রাতে খাওয়া-দাওয়ার পরে ট্রাকে ঘুমিয়েছিলাম। ১০-১২ জন দৃষ্কৃতী বেনাপোল বন্দরে ঢুকে আমাকে ডেকে তোলে। ধারাল অস্ত্র দেখিয়ে মারধর করে। ৬ হাজার টাকা, মোবাইল কেড়ে নেয়। এখন আমার কাছে খাওয়ারও টাকা নেই।”
আক্রান্ত আরও এক ট্রাক চালক সন্তু রাও বলেন, “ওরা কিছু রাসায়নিক ছিটিয়েছিল। আমরা কয়েক জন বেহুঁশ হয়ে পড়ি। টাকা, মোবাইল ছিনতাই করে পালায় দুষ্কৃতীরা।”
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, আক্রান্ত চালকেরা সকলেই ভিন রাজ্যের বাসিন্দা। ঘটনার পরে তাঁরা বেনাপোলে ট্রাক রেখে পেট্রাপোল বন্দরে চলে যান।
ভারতীয় ট্রাক চালক ও খালাসিদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ, বেনাপোল বন্দরে পণ্য নিয়ে আসা ভারতীয় ট্রাক চালক ও খালাসিদের নিরাপত্তা নেই। অতীতেও বহুবার এ নিয়ে সরব হয়েছেন তাঁরা। তবে সমস্যার স্থায়ী সমাধান হয়নি।
বনগাঁ মহকুমা পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়নের সম্পাদক প্রভাস পাল জানান, নভেম্বর মাসেও বেনাপোল বন্দরে ভারতীয় এক ট্রাক চালককে মারধর করে টাকা, মোবাইল, ট্রাকের নথিপত্র, ঘড়ি ছিনতাই হয়েছিল। ডিসেম্বর মাসে পর পর চালকেরা আক্রান্ত হচ্ছেন। তিনি বলেন, বুধবার বেনাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষ আমাদের কাছে কয়েকদিনের সময় চেয়েছেন। দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করার আশ্বাস দিয়েছেন। জিরো পয়েন্টে একটি অভিযোগ জানানোর বাক্স রাখা হবে। আমাদের অভিযোগ থাকলে সেখানে জমা দেওয়া যাবে।
জনপথ পরিবহণ মজদুর ইউনিয়নের জেলা কমিটির সদস্য সন্তোষ মুখোপাধ্যায় বলেন, “ট্রাক চালকেরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। তাঁরা বেনাপোলে যেতে চাইছেন না। আমরা সরকারি হস্তক্ষেপ চাইছি।”