শেরপুরে দুইপ্রতিবন্ধীর যৌতুকবিহীন বিয়ে
প্রদীপ মোহন্ত, (বগুড়া) :
বেশ ধুমধাম করে গ্রাম-বাংলার ৮-১০টা বিয়ের মতই উভয় পরিবারের সম্মতিতে দুই প্রতিবন্ধী বর-কনের বিয়ে অনুষ্ঠিত হলো বগুড়ার শেরপুর উপজেলায়। আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষে শুক্রবার (৩ ডিসেম্বর) বিকেলে শেরপুর সার্বিক উন্নয়ন সংস্থা পরিচালিত কাদের সুফিয়া অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের উদ্যোগে এই বিয়ের আয়োজন করা হয়।
সম্পুর্ণ যৌতুকবিহীন দুই প্রতিবন্ধীর এক অন্যরকম বিয়ে অনেকেরই নজর কেড়েছে। তাই এই বিয়ে উৎসবে মেতে উঠেন নানা শ্রেণি পেশার প্রায় তিন শতাধিক মানুষ।
বরের সাজে মাথায় টুপি পড়ে বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী মনিরুজ্জামান (২৫) শতাধিক বরযাত্রী নিয়ে পৌর শহরের ঘোষ পাড়াস্থ ওই বিদ্যালয় প্রাঙণে আয়োজিত বিয়ের অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছেন। সেখানে স্থাপিত অস্থায়ী সংবর্ধনা মঞ্চে মাথায় টিকলি পড়ে কনের সাজে আগেই বসেছিলেন কনে রহিমা খাতুন (২২)। বরকে সাদরে গ্রহণ শেষে নির্ধারিত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। সেইসঙ্গে যথাযথ সম্মানের সহিত অতিথিদের আপ্যায়ণ করা হয়।
এরপর সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে ওই দুই বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধীর বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়েতে দেনমোহর ধার্য্য করা হয় সত্তর হাজার টাকা। পরে সন্ধ্যা ছয়টার দিকে কনেকে সঙ্গে নিয়ে বর তার নিজ বাড়িতে ফিরে যান।
বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী বর মনিরুজ্জামানের বাড়ি বগুড়া জেলার শাজাহানপুর উপজেলার নগরহাট গ্রামে। বাবার নাম আব্দুর রউফ। জন্ম থেকেই বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী। তিনি স্থানীয় মহিপুর দুগ্ধ ও প্রাণি উন্নয়ন খামারে চাকরি করেন।
কনে রহিমা খাতুন শেরপুর পৌরশহরের গোসাইপাড়া এলাকার শাহজাহান আলীর মেয়ে। পাশেই অবস্থিত প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। পাশাপাশি দর্জির কাজও শিখেছে। সেও জন্ম থেকেই বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধি।
অন্যান্য বিয়ের মত সাক্ষীদের উপস্থিতিতেই বিয়ে সম্পন্ন হয়। বর ও কনে বাক প্রতিবন্ধী হলেও মাথা ঝুঁকিয়ে ঝুঁকিয়ে বিয়ের কবুল সমান সম্মতি প্রকাশ করেন। এরপর বিয়ের পর অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাই সন্তোষ প্রকাশ করে বর-কনেকে দোয়া-আর্শিবাদ দেন।
বিবাহত্তোর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ময়নুল ইসলাম, শেরপুর পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব জানে আলম খোকা, শেরপুর সার্বিক উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি আলহাজ্ব মুনসী সাইফুল বারী ডাবলু, কাদের সুফিয়া অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা উম্মে সুফিয়া বিউটিসহ নানাশ্রেণি পেশার অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।
শেরপুর সার্বিক উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি আলহাজ্ব মুনসী সাইফুল বারী ডাবলু জানান, সম্পুর্ণ যৌতুকবিহীনভাবে এই দুই প্রতিবন্ধীর বিয়ে হয়েছে। বরযাত্রী ও অতিথিদের আপ্যায়ণসহ এই বিয়ের সব খরচ তার সংগঠনটির পক্ষ থেকেই করা হয়। এছাড়া ওই দম্পতির নতুন সংসারের যাবতীয় আসবাবপত্র দেওয়া হয়েছে।
এদিকে কাদের সুফিয়া অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা উম্মে সুফিয়া বিউটি নিজেও এই বিয়ে অনুষ্ঠানে ৭০ হাজার টাকা খরচ করেন। সেই সঙ্গে এই ধরণের অনুষ্ঠান আয়োজন করতে পেরে গর্ববোধ করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ময়নুল ইসলাম বলেন, প্রতিবন্ধীদের সমাজে বোঝা হিসাবে দেখা হয়। কিন্তু আসলে তারা বোঝা নয়। তাদেরকে ঠিকভাবে গড়ে তুলতে পারলে তারাও আমাদের সম্পদ। আর আজকের এই আয়োজন আরেকটি অনুপ্রেরণা। প্রতিবন্ধীরাই এভাবে একে অপরের প্রতি যদি হাত বাড়িয়ে দেয় তাহলে আমাদের সমাজের মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটবে বলেও মন্তব্য করেন এই নির্বাহী কর্মকর্তা।