শিরোনাম

South east bank ad

ঐতিহাসিক সূর্যদী গণহত্যা দিবস

 প্রকাশ: ২৪ নভেম্বর ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   অটোমোবাইল

শেখ সাঈদ আহাম্মেদ সাবাব, (শেরপুর):

শেরপুরের ঐতিহাসিক সূর্যদী গণহত্যা দিবস আজ (২৪ নভেম্বর বুধবার ২০২১)। ১৯৭১ সালের এই দিনে সদর উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়নের সূর্যদী গ্রাম ও তার আশপাশের এলাকায় পাক হানাদার বাহিনী এবং আলবদর ও রাজাকাররা হামলা চালিয়ে বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। হত্যা করে দুইজন মুক্তিযোদ্ধাসহ ৪৯ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে। পুড়িয়ে ছাই করে দেয় প্রায় ২শ ঘরবাড়ি। বছর ঘুরে এ দিনটি এলেই স্বজন হারানোর বেদনায় ভারাক্রান্ত হন সূর্যদী গ্রামবাসী।

শেরপুরে ঐতিহাসিক সূর্যদী গণহত্যা দিবস আজ

এদিকে স্বাধীনতার ৫০ বছর পর হলেও সূর্যদী গণহত্যায় শহীদদের স্মরণে নির্মিত হয়েছে একটি স্মৃতিস্তম্ভ। তবে গণহত্যায় শহীদদের কবরগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো সংরক্ষণ করাসহ শহীদ পরিবারগুলোর রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয় গ্রামবাসী সূত্রে জানা যায়, (১৯৭১ সালের ২৪ নভেম্বর) সকাল ৮টা। শেরপুর সদর উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়নের সূর্যদী গ্রামের বাসিন্দারা কেউ বাড়ির উঠানে শীতের মিষ্টি রোদ পোহাচ্ছেন, আবার কেউ কৃষিকাজ নিয়ে মাঠে ব্যস্ত। এ সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত বৃহত্তর ময়মনসিংহের আলবদর প্রধান মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের নির্দেশে স্থানীয় রাজাকারদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে জিপ আর ট্রাক বোঝাই পাক হানাদার বাহিনী গ্রামটিতে হামলা চালায়। এলাকার লোকজন কিছু বুঝে ওঠার আগেই হানাদার বাহিনী ছুড়তে থাকে এলোপাতাড়ি গুলি।

হানাদার বাহিনীর হাত থেকে এলাকাবাসীকে রক্ষা করতে নিজেদের নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও আত্মগোপনে থাকা ওই গ্রামেরই বাসিন্দা মাত্র ৬ বীর মুক্তিযোদ্ধা ‘গিয়াস কোম্পানি’র মুক্তিযোদ্ধা সোহরাব আলী, আবদুল খালেক, ফজলুর রহমান, হাবীবুর রহমান, মমতাজ উদ্দিন ও আবুল হোসেন সামনে এগিয়ে যান। এদিকে স্কুল মাঠে লাইনে দাঁড় করানো নিরীহ গ্রামবাসীকে গুলি করে হত্যা করার নির্দেশ দেয় পকিস্তানি এক সেনা কর্মকর্তা। ওইসময় গ্রামের একটি ধানক্ষেতে লুকিয়ে থাকা পার্শ্ববর্তী খুনুয়া চরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা আফসার উদ্দিন দূর থেকেই ফাঁকা গুলি করতে থাকেন। গুলির আওয়াজ পেয়ে পাকবাহিনীরা লাইনে দাঁড় করানো লোকদের ফেলে রেখে ছুটে যায় তার সন্ধানে। পরে মুক্তিযোদ্ধা আফসার উদ্দিন ও সূর্যদী গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আক্তারুজ্জামানকে একটি ধানক্ষেতে নির্মমভাবে হত্যা করে পাকসেনারা। সেইসাথে শহীদ হয় গ্রামের মোট ৪৯ জন। এজন্য (২৪ নভেম্বর) শেরপুরবাসীর কাছে এক ঐতিহাসিক স্মরণীয় দিন।

এদিকে স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫০ বছর পর সূর্যদী এ আহমেদ উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে শহীদদের স্মরণে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। গত (১৮ মার্চ) শেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের সরকারদলীয় হুইপ আতিউর রহমান আতিক সেটির উদ্বোধন করেন। মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক স্থানগুলো সংরক্ষণ ও মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ৩৩ লাখ ২৪ হাজার টাকা ব্যয়ে স্মৃতিস্তম্ভটির নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করেছে শেরপুর এলজিইডি।

দিনটি উপলক্ষে নানা কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সূর্যদী যুদ্ধ ও গণহত্যা উদযাপন পরিষদের সভাপতি এম এ হাসেম। তিনি জানান, আজ বুধবার বেলা তিনটায় সূর্যদী শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। পরে গণহত্যায় শদীদদের স্মরণে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫০ বছর পর হলেও আমরা স্মৃতিস্তম্ভ পেয়েছি। তবে এখন শহীদদের গণকবর ও কবরগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো সংরক্ষণ এবং শহীদ পরিবারগুলোর রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি চাই আমরা।

BBS cable ad

অটোমোবাইল এর আরও খবর: