শিরোনাম

South east bank ad

ভারত থেকে ফেরত মানসিক ভারসাম্যহীন আলপনা দেখতে মানুষের ভীড়

 প্রকাশ: ২০ নভেম্বর ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   অটোমোবাইল

মো: আব্দুস ছাত্তার, (ফুলবাড়িয়া):

এক দশক আগে হারিয়ে যাওয়া মানসিক ভারসাম্যহীন ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার চরকালি বাজাইল গ্রামের আলপনা খাতুন আগের চেয়ে অনেকটাই সুস্থ বলে দাবী করেছে পরিবার। বৃহস্পতিবার (১৯ নভেম্বর ২০২১) রাত ১০টার দিকে গ্রামের বাড়িতে ফিরলে শত শত উৎসুক মানুষের ভীড় জমে যায় এক নজর তাকে দেখার জন্য। আলপনার চিন্তায় ইতিমধ্যে গর্ভধারীনি মা না ফেরার দেশে চলে গেছেন। বাবা হারিয়েছেন অনেক আগেই। বাড়িতে ফিরে আলপনা একটি টিভি’র দাবী করেন। সরেজমিনে আলপনা ও তার স্বজনের সাথে কথা বলে আজকের প্রতিবেদন।

আলপনা একটি সুন্দর নাম। তার রয়েছে রেজিয়া ও মনু আক্তার নামের আরও ২ বোন ও জিয়ারুল নামের একমাত্র ভাই। মায়ের গর্ভে থাকাকালীন বাবাকে হারিয়েছে সে। মা কয়েদ বানু ও বড় ভাই ও বোনদের আদরে বড় হচ্ছিল আলপনা। মানসিক ভারসাম্যহীন হলেও তাকে বেঁধে রাখতে হয়নি কখনো। প্রায় ১৪ /১৫ বছর আগে এক রাতে হঠাৎ উধাও হয় সে। তখন তার বয়স অনুমান ১০ বছর।

আলপনার মতে, ফুলবাড়িয়া বাজার ও হাসপাতালে গেছিল। পরে তাকে কেউ একজন গাড়ীতে তুলে দেয়। এভাবেই তার ভারতে চলে যাওয়া। ভারসাম্যহীন (পাগলী) মেয়ের চিন্তায় মায়ের চোখের পানিতে চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে যায়। নিকটাত্নীয়রা অনেক খোঁজাখুজি করেছে কিন্তু কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। শেষ পর্যন্ত আশা ছেড়ে দিয়েছিল পরিবার। কিন্তু নিয়তির খেলায় প্রায় ১ বছর আগে পুলিশের মাধ্যমে পরিবার জানতে পারে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় একটি মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে আলপনা। নাগরিকত্ব সনদ ও জন্মনিবন্ধন সহ আলপনার সকল তথ্য তারা নিয়ে যায় একটি এনজিও। এরপর বলে গেছে দীর্ঘ সময়। আবারও যোগাযোগ করে ঐ এনজিও। তাদের কথা মতো, গত ১৭ নভেম্বর আলপনা কে আনার জন্য হ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার উদ্দেশ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গমন করেন জেঠাতো ভাই (দুলাল) ও বোন মনু আক্তার। সেখানে এক বাড়িতে অনুনয় বিনয় করে রাত্রি যাপন করেন তারা। ১৮ নভেম্বর সকালে তারা আখাউড়া স্থলবন্দরে উপস্থিত হন। দুপুরের দিকে আলপনা সহ ৬ বাংলাদেশিকে হস্তান্তর করা হয়। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তাদের কে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়।

ত্রিপুরার বাংলাদেশ সহকারী কমিশনার কার্যালয় ও বাংলাদেশের পক্ষে আখাউড়া উপজেলার উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। হস্তান্তরের সময় আলপনার স্বজনের কাছে পাটের চট জাতীয় ব্র্যাকের স্টিকার লাগানো একটি ব্যাগ দেওয়া হয়। সেখানে কিছু ঔষধ পত্র দেওয়া হয়।

গতকাল শুক্রবার (১৯ নভেম্বর ২০২১) বিকালে আলপনার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, লাল রঙের সেলোয়ার কামিজ পড়া কিশোরীর চারদিকে প্রচুর মানুষের ভীড়। সাংবাদিক দেখে সালামু আলাইকুম (আচ্ছালামু আলাইকুম) বলে হাসিতে বাক বাকুম। পরিবার পরিজন পেয়ে অনেক খুশি। পরিবার-পরিজনদের সহজেই চিনছেন, অনেকের বলছেন নামও। মায়ের কথা জিজ্ঞাসা করতেই, ভাইকে বলছে, আম্মা কই (কোথায়)? সে এখনো বুঝেনি মা না ফেরার দেশে চলে গেছে। ভারতে দুধ, কলা, চিরা, ভাত, ডাল খেয়েছেন। এগুলো ই তার প্রিয় খাবার।

স্থানীয় প্রতিবেশিরা জানিয়েছেন, স্ব-স্ব আতত্নীয় স্বজনদের বাড়িতে অনেক তালাশ (খোজাখুজি) করেছেন কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি। এতদিন পর তাকে পাওয়া যাবে এটা প্রত্যাশাও করেনি। মহান আল্লাহ ই এনে দিয়েছেন।

আলপনার বড় ভাই জিয়ারুল বলেন, বাড়ীতে ২ শতক জমি ছাড়া আবাদী কোন জমা-জমি নেই। নিজে ভাঙ্গারি (পুরাতন জিনিস) মাল কিনেন এবং বিক্রি করেন। বোনকে পেয়ে অনেক খুশি কিন্তু পাগলি বোনকে কি খাওয়াবেন-পড়াবেন সেটা নিয়ে তার অনেক দু:চিন্তা।

আলপনাকে গ্রহণকারী দুলাল জানিয়েছেন, আমার চাচাতো বোন সে। কত্ত জাগাত (জায়গায়) খুুঁজেছি কিন্তু পাইনি। আগে এনজিও তথ্য মথ্য নিচ্ছে কিন্তু হেরা কোন কাম করতে পারে নাই। পরে পুলিশ তথ্য লইয়া কাম করছে। আবার আমারে ফোন কইরা নিছে ব্র্যাকের লোকজনেই। অনুকা (ঐখানে) কত ফটোমটো তুলছে, খালি খালি ক্যামেরা আর ক্যামেরা। তবে আলপনারা খুব অসহায়। এগর কোন ঘর দরজা নাই। একটা ছাপড়া। বাড়ী ভিটার জমি হানি আছে। বোনঢারে জিগাইছি, ও কইল হাসপাতালে টিভি আছিন।

উল্লেখ্য, ঐ দিন দেশে ফিরে আসা বাকি পাঁচজন হলেন- বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামের জিয়ারুল ইসলাম, জামালপুর সদরের নারিকেলি গ্রামের মানিক মিয়া, ঢাকার কেরানীগঞ্জের রিনা আক্তার, কিশোরগঞ্জ সদরের ভাস্কর টিলা গ্রামের হানিফা আক্তার ও মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার মো. শাহাজান মিয়া। ত্রিপুরায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের সহযোগিতায় ওই ছয়জনকে বাংলাদেশে ফেরত আনা সম্ভব হয়েছে।

BBS cable ad

অটোমোবাইল এর আরও খবর: