South east bank ad

সিডরের ১৪ বছরেও আতঙ্কিত উপকূল: নড়বড়ে বেড়িবাঁধ

 প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   অটোমোবাইল

এম.এস রিয়াদ, (বরগুনা) :

২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর বরগুনাসহ উপকূলে আঘাত হেনেছিলো ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় সিডর। ১৪ বছর পর এসে আজও সেই দিনের দুঃসহ স্মৃতির কথা মনে পড়লে আঁতকে ওঠেন উপকূলের মানুষেরা। ভয়াবহ সিডর বরগুনাসহ উপকূলবাসীর জীবনযাত্রায় রেখে গেছে ভয়াবহ ক্ষতচিহ্ন। এক ঝড়ে প্রাণ হারিয়েছে কয়েক হাজার মানুষ। ১৪ বছরেও স্বাভাবিক হয়নি স্বজন ও সম্পদ হারানো মানুষের জীবন।

ঘড়ির কাটায় তখন রাত ৭ টা ৪০ মিনিট। মহাবিপদ সংকেতের কথা শুনে আতঙ্কিত বরগুনা উপকূলের মানুষ। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির সঙ্গে দমকা হাওয়া বইছে। সচেতন মানুষ যেতে শুরু করলো আশ্রয়কেন্দ্রে। তবে বেশিরভাগ মানুষই রয়ে গেলেন বাড়িতে। সিডরের ভযাবহতা সম্পর্কে তারা কিছুই ধারণা করতে পারেনি। সিডরের আঘাত শুরু হলে ঘর-বাড়ি উড়িয়ে নেওয়ার অবস্থার সৃষ্টি হয়। পাশাপাশি বাড়তে থাকে পানি।

রাত সাড়ে ১০ টার দিকে বঙ্গোপসাগরের সব পানি যেন জম দূতের মতো এসে মানুষগুলোকে ভাসিয়ে নিলো। মাত্র ১০ মিনিটের জলোচ্ছাসে উপকূলের কয়েক হাজার মানুষ প্রাণ হারালো। ঝড়ের তান্ডবে পুরো এলাকা হয়ে যায় লন্ডভন্ড। সকালে উপকূলের মানুষ দেখতে পেলো কেয়ামতের আলামত।

লাশের পর লাশ পড়েছিল উপকূল জুড়ে। কবর দেওয়ার জায়গা পাওয়া যায়নি। এক একটি কবরে ২-৩ জনের লাশ ফেলে মাটি চাপা দেওয়া হয়। সিডরের এত বছর পরেও নিহতের সঠিক সংখ্যা পাওয়া যায়নি। সরকারি তথ্য অনুযায়ী সিডরের আঘাতে বরগুনা জেলার এক হাজার ৩৪৫ জন মানুষ মারা গেছেন। নিখোঁজ ১৫৬ জন।

অন্যদিকে- ৩০ হাজার ৪ শ' ৯৯ টি গবাদি পশু ও ছয় লাখ ৫৮ হাজার ২ শ' ৫৯টি হাঁস-মুরগি মারা যায়। জেলার ২ লাখ ১৩ হাজার ৪ শ' ৬১ টি পরিবারের সবাই কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন। গৃহহীন হয় জেলার ৭৭ হাজার ৭ শ' ৫৪টি পরিবার।

তবে বেসরকারি হিসেবে নিহতের সংখ্যা বলা হয়েছে এক হাজার ৬ শ' জনের বেশি। সিডরে এত মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে জানা যায় ওই সময় আবহাওয়া বিভাগের সতর্কবাণী যথাযথ ছিল না। আবহাওয়া অফিস ৪ নম্বর সতর্ক সংকেত থেকে হঠাৎ করে ১০ নম্বর বিপদ সংকেতের কথা ঘোষণা করে। মোংলা সমুদ্র বন্দরকে কেন্দ্র করে যে সতর্ক সংকেত প্রচার করা হয়েছিল, তা বোঝার উপায় বরগুনার মানুষের ছিল না।

স্বেচ্ছাসেবকরাও ছিল প্রায় নিষ্ক্রিয়। দুই-এক জায়গায় তারা মাইকিং করলেও বেশিরভাগ জায়গায়ই কোনও সংকেত প্রচার করা হয়নি। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তথ্য অফিস মাইকিং করলেও তা ছিল শহর এলাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ। আবার যারা ঘূর্ণিঝড়ের সংকেত শুনেছেন, তারাও পর্যাপ্ত আশ্রয় কেন্দ্রের অভাবে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারেননি।

বরগুনাসহ সিডর বিধ্বস্ত উপকূলীয় জনপদে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে উন্নয়নে ব্যাপক কাজ হলেও তার অধিকাংশ চলে গেছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এনজিওদের পকেটে। তাই সিডর বিধ্বস্ত এই জনপদের মানুষের মধ্যে ত্রাণ কিংবা ঋণ বিতরণ করা হলেও সক্ষমতা বৃদ্ধিতে তেমন কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বরগুনা সদর উপজেলার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা নলটোনা। যেখানে সিডরের এক বছর আগে থেকেই বেড়িবাঁধ ছিল না। সিডরের সময় সেখানে ২০ ফুটের মতো পানি বৃদ্ধি পেয়েছিল। ঘূর্ণিঝড়ের পরের দিনই সেখানে অর্ধশতাধিক মানুষের লাশ পাওয়া যায়। তখনও এলাকাটি পানির নিচে হাবুডুবু খাচ্ছিলো। লাশ দাফনের জন্য কোনও জায়গা পাওয়া যায়নি। পরে লাশগুলো নিয়ে আসা হয় বরগুনা-নিশানবাড়িয়া সড়কের পাশে পশ্চিম গর্জনবুনিয়া গ্রামে। দাফনের কাপড় ছাড়াই ২৯ জনকে ১৯টি কবরে মাটি চাপা দেওয়া হয়। বর্তমানে সেখানে সিডর স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করেছেন জেলা প্রশাসন।সারিবদ্ধ কবর দেখে মানুষ এসে থমকে দাঁড়ায়। কেউ কেউ কান্না চেপে রাখতে পারেন না। সিডরের স্মৃতি হয়ে আছে কবরগুলো।

বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন- সিডর বাংলাদেশের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়গুলোর মধ্যে একটি। এই ঝড় কেড়ে নিয়েছে উপকূলের মানুষের সম্বল। কেড়ে নিয়েছে আপনজনদের। তাই এ ক্ষতি অপূরণীয়। তবুও সহায়তা দানকারী সংস্থাগুলো সক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাজ করলে উপকূলবাসী স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে। একইসঙ্গে পরবর্তী ভয়াবহতার হাত থেকেও রক্ষা পাবে।

BBS cable ad

অটোমোবাইল এর আরও খবর: