গফরগাঁওয়ে শব্দ দূষণে জনজীবন অতিষ্ঠ
এইচ কবীর টিটো, (গফরগাঁও):
ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলায় শব্দ দূষণে জনজীবন অতিষ্ঠ। সাথে আছে রাস্তায় জ্যাম। যানবাহনের উচ্চ হর্ন, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কারনে উচ্চ শব্দে মাইকিং, কারখানার শব্দ, আবাসিক এলাকায় ইট ভাঙার মেশিন চালানোসহ,গভীর রাতে কৃষি প্রযুক্তি হাল চাষ করার জন্য আমদানি করা ট্রাকট্ররের বিকট শব্দে শিশু ও ঘুমন্ত হার্টের রোগীর অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে পড়ছে। এই সব কারণে গফরগাঁও উপজেলায় শব্দদূষণের মাত্রা ক্রমেই বাড়ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাব ও পৌর আইনের প্রয়োগ বা অমান্য করার কারণে শব্দ দূষণে নাকাল হয়ে পড়েছে গফরগাঁও উপজেলাবাসী।
গফরগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মাইনুদ্দিন খান মানিক বলেন, ৩০ থেকে ৩৫ ডেসিবল শব্দ মাত্রায় বিচলিত হওয়া ও ঘুমের ব্যাঘাত, ৬৫ ডেসিবলের ওপর শব্দ মাত্রায় শ্রবন শক্তি হ্রাস এবং ১২০ ডেসিবলের ওপর শব্দ মাত্রায় স্থায়ী ভাবে শ্রবণ শক্তি লোপ পেতে পারে। শব্দ দূষণের কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে শিশুরা। তিন বছর বা তার কম বয়সী শিশুদের জন্য শব্দ দূষণ শিশুর মানসিক বিকাশের অন্তরায়। গফরগাঁও উপজেলায় শব্দ দূষণের সব মাত্রাকে ছাড়িয়ে গেছে। পৌর শহরের মধ্যে দিয়ে চলে যাওয়া খান বাহাদুর ইসমাইল সড়ক এবং এই সড়কের উভয় পাশে বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বানিজ্যিক কার্যালয় অবস্থিত। এ ছাড়া কয়েকটি ক্লিনিক, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও আবাসিক ভবন, এনজিও কার্যালয়, মসজিদ রয়েছে রাস্তার উভয় পাশে।গফরগাঁও সরকারি কলেজ,মহিলা কলেজ,আলতাফ গোলন্দাজ ডিগ্রি কলেজ, খায়রুল্লাহ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও ইসলামিয়া সরকারি হাই স্কুল, আদর্শ শিশু নিকেতন,খায়রুল্লাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইসলামিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান সড়কের ৬হাতের মধ্যেই অবস্থিত। শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা-২০০৬ অনুযায়ী হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস আদালত বা এ জাতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে নীরব এলাকা ঘোষনা করা হয়। এসব এলাকার চতুর্দিকে ১০০ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকায় কোনো প্রকার হর্ন বাজানো যাবে না। আবাসিক এলাকার ৫০০ মিটারের মধ্যে নির্মাণ কাজের জন্য ব্যবহত ইট ভাঙার মেশিন ব্যবহার করা যাবে না। কোনো উৎসব, সামাজিক বা রাজনৈতিক বা অনুষ্ঠানে লাউড স্পিকার,ডাক্তার ও ক্লিনিকের যন্ত্রণাদায়ক প্রচার, অ্যামপ্লিফায়ার বা শব্দের মাত্রা বর্ধণকারী অন্য কোনো যন্ত্র ব্যবহার করতে হলে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে। এসব কার্যক্রমে সর্বোচ্চ পাঁচ ঘন্টা এবং রাত ১০ টার পর কোনো ক্রমেই শব্দ দূষণকারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা যাবে না।
আলতাফ গোলন্দাজ ডিগ্রি কলেজের সহঃঅধ্যাপক আরশাদ আহমেদ আসাদ ও আদর্শ শিশু নিকেতনের শিক্ষক শ্রীকৃষ্ণ দেবনাথ বলেন, আমাদের স্কুল ও কলেজ সড়ক সংলগ্ন। ফলে যানবাহনের এবং উচ্চমাত্রার হর্নের শব্দে পাঠদান ব্যহত ও শিক্ষার্থীদের মনোযোগ নষ্ট হচ্ছে।
পৌর শহরের কয়েকজন শিক্ষক -বিশেষজ্ঞ মহল বলেন, পৌরসভার আইন অনুযায়ী বেলা দুইটা থেকে সন্ধা ছয়টা পর্যন্ত মাইকিং করার বিধান রয়েছে। কিন্তু এখানে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বিভিন্ন পণ্যের, প্রাইভেট ক্লিনিকের ডাক্তারদের সুচিকিৎসা সহ নানা কিছুর উচ্চ শব্দে মাইকিং করা হয়। শহরে নিদিষ্ট কোন বাস ষ্ট্যান্ড না থাকায় শহরের ওপর দিয়ে যাওয়া সড়কে ইচ্ছে মতো যাত্রী ওঠানো,যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং,সড়কের উপর গাড়ি দাঁড় করিয়ে মালামাল নামানোর সময় যানবাহনগুলোর উচ্চ হর্নের শব্দ দূষন সহ বিরক্তিকর জ্যাম লেগেই থাকে । এতে শহরের শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসি ভোগান্তির শিকার হচ্ছে মারাত্মক ভাবে।
গফরগাঁও দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ডাঃকেএম এহসান এডভোকেট বলেন, কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে উপজেলার বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্টান,সভা,মিটিং চলে গভীর রাত পর্যন্ত এবং উচ্চ শব্দের পরিবহন যেমন,ট্রাকটর,স্যালুমিশিনের তৈরি গাড়ি গুলো যে গর্জনে চলে তা আইনগত দণ্ডনীয় অপরাধ।এতে ছোট,বড় সব বয়সের মানুষ শ্রবণশক্তি সহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে মানসিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে মানুষ।এর প্রতিকারের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্টান, আবাসিক এলাকাসহ যেখানে-সেখানে ইট ভাঙার যন্ত্র দিয়ে দিনরাত বিকট শব্দে ইট ভাঙা হয়। এতে উপজেলাবাসী চরম শব্দ দূষণের শিকার হচ্ছে। এসবের কোনো মনিটরিং না হলে ভয়ংকর বিপদ ডেকে আনতে পারে মানুষের জন্য।