নিষিদ্ধ পিরানহা মাছ জব্দ করেও আড়তদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেননি মৎস্য কর্মকর্তারা
মশিউর রহমান কাউসার, (ময়মনসিংহ):
মাছের আড়তে বিক্রির সময় অভিযান চালিয়ে নিষিদ্ধ ২১টি পিরানহা মাছ হাতেনাতে জব্দ করা হলেও রহস্যজনক কারনে ঘটনার সাথে জড়িত জনৈক আড়তদারে বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা না নিয়ে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ ওঠেছে মৎস্য কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। পরে সেই জব্দকৃত মাছ স্থানীয় দুটি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের জন্য বিতরণ করা হয়। মাছ বিতরণের বিষয়টি উপজেলার মৎস্য দপ্তরের একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসে নিশ্চিত করার পর সচেতন মহলে এ নিয়ে চলছে নানা সমালোচনা। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ সড়কের পাশে অবস্থিত ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার গাজীপুর বাজার এলাকায় অবৈধ মাছের আড়তে এ ঘটনাটি ঘটেছে।
স্থানীয় কয়েকজন জানান, মৎস্য সংরক্ষণ আইনে ঘটনারদিন উল্লেখিত গাজীপুর এলাকার বৃহৎ অবৈধ পাইকারী মাছের আড়তে অভিযান পরিচালনা করা হয়। ময়মনসিংহ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা দীলিপ কুমার সাহার নেতৃত্বে এ অভিযানে ছিলেন গৌরীপুর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জান্নাত-এ-হুর ও মোজাম্মেল হোসেন ভূইয়া। অভিযানকালে জনৈক ব্যক্তির একটি মাছের আড়তে পাইকারীভাবে পিরানহা মাছ বিক্রি করতে দেখেন মৎস্য কর্মকর্তরা। এসময় ওই আড়ত থেকে ২১টি বড় সাইজের পিরানহা মাছ জব্দ করেন তাঁরা। রহস্যজনক কারনে নিষিদ্ধ মাছ বিক্রির ঘটনায় জড়িত আড়তদারের বিরুদ্ধে কোন আইনানুগ পদক্ষেপ না নিয়েই জব্দকৃত মাছ স্থানীয় দুটি মাদ্রাসায় বিতরণ করে চলে যান মৎস্য কর্মকর্তারা।
ঘটনাটি এদিন উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোজাম্মেল হোসেন ভূইয়া তাঁর ফেসবুক আইডিতে পোস্ট দেয়ার পর স্থানীয় সচেতন মহলে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জান্নাত-এ-হুর জানান, উল্লেখিত মাছের আড়তে পিরানহা মাছ জব্দকালে আড়তদার পালিয়ে যাওয়ায় তার বিরুদ্ধে কোন আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহন করতে পারেনি তাঁরা। এসময় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পিরানহা মাছ মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণের ক্ষেত্রে কোন আইনগত বাঁধা নেই। তাছাড়া এ মাছ খাওয়ার ক্ষেত্রে মানুষের শরীরে কোন সমস্যা হয়না বলে তিনি দাবি করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাসান মারুফ জানান, উল্লেখিত মাছের আড়তে পিরানহা মাছ জব্দ করার বিষয়ে তিনি অবগত নন। যদি এ বিষয়ে তাঁকে অবগত করা হতো তাহলে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘটনার সাথে জড়িত আড়তদারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন পারতেন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
নাম প্রকাশে স্থানীয় কয়েকজন জানান, এ এলাকার বিভিন্ন পুকুরে দীর্ঘদিন ধরে গোপনে নিষিদ্ধ পিরানহা মাছের চাষ হয়ে আসছে। আর এ নিষিদ্ধ মাছ বিক্রি হয়ে থাকে গাজীপুর বাজারে অবৈধ মাছের আড়তে। এর আগে একাধিকবার এ মাছের আড়তে অভিযান চালিয়ে পিরানহা মাছ জব্দ করা হলেও বন্ধ হচ্ছেনা এ নিষিদ্ধ মাছের বিক্রি।
বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের মতে, পিরানহা মাছের এমন কিছু বিষক্রিয়া আছে যা মানুষের দেহে পাকস্থলি বিনষ্ট করার প্রধান হাতিয়ার। এক বোতল অ্যালকোহলের চাইতেও এ মাছের ৫০ গ্রাম ওজনের একটি অংশ বেশি ক্ষতিকর। পিরানহা মাছের চর্বি মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করে। এ মাছে থাকা ফসফেট মানুষের মূত্র প্রদাহ সৃষ্টি করে, নব বিবাহিত নারীর বন্ধ্যত্ব সৃষ্টির অন্যতম কারণ। পস্রাবের সঙ্গে শরীর থেকে অতিরিক্ত মাত্রায় ক্যালসিয়াম ও রক্ত বের করে দেয়। পিরানহা মাছ খেলে মানুষিক সমস্যাসহ মানুষের দেহে নানান রোগের সৃষ্টি হয়ে থাকে।