১৫ মিনিট দেরি হওয়ায় পরীক্ষা দিতে দেননি কেন্দ্রসচিব
বিডিএফএন টোয়েন্টিফোর.কম
নোয়াখালীর চৌমুহনী পৌরসভার গনিপুর গালর্স হাইস্কুলের বিজ্ঞান বিভাগের এসএসসি পরীক্ষার্থী সামিয়া সুলতানা শান্তা। চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। গত ৫ দিন ধরে সে অসুস্থ। অসুস্থ শরীর নিয়েই সে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে আসছে।
গত মঙ্গলবার সকালে ছিল রসায়ন পরীক্ষা। পরীক্ষায় অংশ নিতে নির্ধারিত সময়ে মায়ের সঙ্গে বেগমগঞ্জ উপজেলায় নরোত্তমপুর বাসা থেকে পরীক্ষা কেন্দ্রের উদ্দেশে রওনাও হয়েছেন। সকাল ৯টা থেকে ফেনী-চৌমুহনী আঞ্চলিক মহাসড়কে ছিল দীর্ঘ যানজট। ট্রাফিক জ্যামে পড়ে ১৫ মিনিট দেরিতে পরীক্ষার কেন্দ্রে ঢুকার অপরাধে পরীক্ষার্থী শান্তাকে পরীক্ষা দিতে না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কেন্দ্র সচিব আবদুল মান্নানের বিরুদ্ধে।
আবদুল মান্নান নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। কেন্দ্র সচিবের হাত-পা ধরে অনুরোধ করেও পরীক্ষা দিতে পারেনি ওই ছাত্রী।
গত মঙ্গলবার সকালে এসএসসি পরীক্ষার বেগমগঞ্জ সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে এই ঘটনা ঘটে। ছাত্রীটির অভিভাবক, তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক ও পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি এই ঘটনার জন্য কেন্দ্র সচিবকে দায়ী করে বিশেষ ব্যবস্থায় তার রসায়ন পরীক্ষা নেওয়ার জন্য দাবি জানিয়েছেন।
ওই ছাত্রীর মা রাবেয়া সুলতানা অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার মেয়ে অনেক মেধাবী। পরীক্ষার আগে সে অনেক পড়াশোনা করেছে। গত ৫ দিন ধরে সে জ্বর, সর্দি, কাশি ও বমিতে আক্রান্ত হলে তাকে গত সোমবার বেগমগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসা করাই। অসুস্থ শরীর নিয়েই সে ১৪ নভেম্বর পদার্থ বিজ্ঞান পরীক্ষা দিয়েছে। পরীক্ষায় সে সবগুলো উত্তর লিখেছে। অসুস্থ শরীর নিয়ে গত মঙ্গলবার সকালে তাকে নিয়ে রসায়ন পরীক্ষা দেওয়ার জন্য পরীক্ষার হলের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হই। কিন্তু চৌমুহনীতে দীর্ঘ যানজট থাকার কারণে পরীক্ষার কেন্দ্রে পৌঁছাতে ১৫ মিনিট দেরি হয়। কেন্দ্রে ঢুকার পর কেন্দ্র সচিব আবদুল মন্নান তাকে বিভিন্ন প্রশ্নবানে জর্জরিত করে একবার নিচতলা আরেকবার দ্বিতীয় তলায় নিয়ে যান। এভাবে আরও ১৫ মিনিট সময় নষ্ট করে আমার মেয়েকে পরীক্ষা দিতে দেবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন। এরপর আমি ও আমার মেয়ে কেন্দ্র সচিবের কাছে পরীক্ষা দিতে অনেক অনুরোধ করলেও তিনি কর্ণপাত করেননি। পরীক্ষা দিতে না পেরে এক পর্যায়ে আমার মেয়ে কান্নাকাটি করে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।’
তিনি বলেন, ‘এ দৃশ্য দেখে গনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নিজাম উদ্দিন ও ওই বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি গোলাম ফারুক ভূইয়া এগিয়ে এসে কেন্দ্র সচিবকে ছাত্রীটিকে পরীক্ষা দিতে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু তিনি কারও কথাই রাখেননি। পরীক্ষা দিতে না পেরে গত দুই দিন ধরে সে শুধুই কান্নাকাটি করছে। কোনো কিছুই খাচ্ছে না।’
ওই ছাত্রীর মা আরও বলেন, ‘করোনার কারণে সরকার শিক্ষার্থীদের প্রতি উদার মানসিকতার পরিচয় দিলেও কেন্দ্র সচিব কী কারণে আমার মেয়ের প্রতি এত কঠোর হলেন তা আমার বোধগম্য নয়। আগামী ২২ তারিখ তার জীব বিজ্ঞান পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সে ওই পরীক্ষায়ও অংশ নেবে।’ তাই বিশেষ ব্যবস্থায় তার মেয়ের রসায়ন পরীক্ষা গ্রহণ করা জন্য তিনি শিক্ষামন্ত্রী ও কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের প্রতি দাবি জানিয়েছেন।
গনিপুর গালর্স হাইস্কুলের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি গোলাম ফারুক ভূইয়া বলেন, ‘দীর্ঘ যানজটে পড়ে ছাত্রীটি কেন্দ্রে পৌছাতে ১৫-২০ মিনিট দেরি হয়েছে। কিন্তু তার তো পরীক্ষা দেওয়ার অধিকার রয়েছে। কিন্তু প্রধান শিক্ষককে আমি অনেক অনুরোধ করলেও তিনি আমার কথা রাখেননি। ছাত্রীটি অনেক মেধাবী। সে ৩০ মিনিট লেখার সুযোগ পেলেও ভাল ফলাফল করত। কিন্তু কেন্দ্র সচিব প্রতিহিংসার বশীভূত হয়ে ছাত্রীটিকে পরীক্ষা দিতে দেননি।’ তিনি এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, বিচার ও ছাত্রীটিকে বিশেষ ব্যবস্থায় পরীক্ষা নেওয়ার জন্য কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও নোয়াখালী জেলা প্রশাসকের কাছে দাবি জানিয়েছেন।
কেন্দ্র সচিব আবদুল মান্নান তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘মেয়েটি ৪০ মিনিট পর কেন্দ্রে প্রবেশ করেছে। তাই তাকে পরীক্ষা দিতে দেওয়া হয়নি।’
এ বিষয়ে নোয়াখালী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খান বলেন, ‘গতকাল মঙ্গলবার রাতে বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিষয়টি টেলিফোনে আমাকে অবগত করেছেন। ওই ছাত্রীটি নির্ধরিত সময়ের অনেক পরে কেন্দ্রে প্রবেশ করেছে। তাই তাকে পরীক্ষায় অংশ নিতে দেওয়া হয়নি।’