South east bank ad

শিবালয়ে সারের কৃত্রিম সঙ্কট, বেশি দাম দিয়েও ভোগান্তীতে কৃষক

 প্রকাশ: ০৮ নভেম্বর ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   অটোমোবাইল

সাব্বির হোসেন সাইফুল, (মানিকগঞ্জ) :

মানিকগঞ্জ শিবালয় উপজেলার বরঙ্গাইল বাজারে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অধিক দাম দিয়েও সার পেতে ভোগান্তী পোহাতে হচ্ছে কৃষকদের। সারের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে কৃষকদের সার দিচ্ছেন না ডিলাররা। ফলে সারের জন্য এক দোকান থেকে আরেক দোকান ও এক বাজার থেকে আরেক বাজারে দৌঁড়াচ্ছেন কৃষক। তবে অতিরিক্ত দামে সার বিক্রি বন্ধে কিংবা কৃষকদের সার প্রাপ্তিতে কোনো ভূমিকা পালন করতে দেখা যাচ্ছে না কৃষি কর্মকর্তাদের। অভিযোগ রয়েছে, ডিলারদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে চুপ রয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা।

জানা যায়, শিবালয়ের অধিকাংশ সার ডিলাররা টিএসপি, ইউরিয়া, পটাশ ও ডিএপি সারের কৃত্রিম সঙ্কট তৈরী করে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অধিক দামে বিক্রি করছে। বস্তা প্রতি ১০০ টাকা থেকে শুরু করে ৬০০ টাকা পর্যন্ত বেশি দিতে হচ্ছে কৃষকদের। বেশি টাকা দিয়েও অনেক সময় সার পেতে হয়রানির শিকার হতে হয় কৃষকদের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার মহাদেবপুর, উথলী, তেওতা, শিমুলিয়াসহ সকল ইউনিয়নেই সারের কৃত্রিম সঙ্কট তৈরী করে অধিক মূল্য সার বিক্রি করছেন ডিলাররা। বিভিন্ন এলাকার ডিলাররা গোপনে একজনের সার আরেকজনের কাছে বিক্রি করছে। এভাবে সার লেনদেনের মাধ্যমে ডিলার কৃষকদের বলেন, আমার কাছে সার নেই, তাই আরেকজনের কাছ থেকে বেশি দাম দিয়ে সার এনে দিলাম। এভাবেই সারের কৃত্রিম সঙ্কট তৈরী করে কৃষকদের সর্বসান্ত করছে সারের ডিলাররা। এছাড়া অনুমোদিত ডিলার না হয়েও
সার বিক্রি করছে অনেকে।

সোমবার সরেজমিনে শিবালয়ের মহাদেবপুর ইউনিয়নের বরংগাইল বাজারে গিয়ে দেখা যায়, মেসার্স মিজান এন্টারপ্রাইজ নামক বিএডিসির সারের ডিলার মিজানুর রহমান সারের কৃত্রিম সঙ্কট তৈরী করে অতিরিক্ত দামে সার বিক্রি করছেন। তিনি প্রতি কেজি টিএসপি বিক্রি করছেন ৩০ টাকা করে আর প্রতি কেজি পটাশ বিক্রি করছেন ২২ টাকা করে। অর্থাৎ, পঞ্চাশ কেজির টিএসপিতে ৪০০ টাকা ও এমওপি(পটাশ) ৩৫০ টাকা বেশি নিচ্ছেন। তবে বিএডিসির ওই ডিলার অতিরিক্ত দামে সার বিক্রি করলেও কৃষকদের যে রশিদ দিচ্ছেন, সেখানে সরকার নির্ধারিত মূল্য লিখে দিচ্ছেন।

মহাদেবপুর ইউনিয়নের রামনগর গ্রামের কৃষক তাহাজ উদ্দিন জানান, মিজানের কাছ থেকে ৩০ কেজি টিএসপি ও ১৫ কেজি পটাশ সার কিনেছি। দুই প্রকার সারে এক হাজার ২২০ টাকা নিয়েছে। সাংবাদিকদের কাছে সারের দাম বেশি রাখার কথা বলার কারণে পরে আমার টাকা ফেরত দিয়ে দিয়েছে।

মেসার্স মিজান এন্টারপ্রাইজের ডিলার মিজানুর রহমানের সঙ্গে যখন এই প্রতিবেদকের কথা হয় তখন কৃষকদের ভিড় লেগে যায় দোকানে। তারা জানান, সার নিতে আসলে প্রথমেই সার নেই বলে জানিয়ে দেন ডিলার মিজানুর রহমান। এরপর অতিরিক্ত দামে সার পাওয়া গেলেও আমাদের যে রশিদ দেয়া হয়, সেখানে সঠিক মূল্য লেখা থাকে। অর্থাৎ অতিরিক্ত মূল্য নিলেও তার প্রমাণ রাখেন না তিনি। তবে এ বিষয়ে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কোনো কথা বলতে রাজি হননি ডিলার মিজানুর রহমান।

এদিকে, বেলা সাড়ে ১০টা পর্যন্ত মহাদেবপুর ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিবালয় উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. সাজ্জাত হোসেনের দেখা মেলেনি। পরে এই প্রতিবেদকের ফোন পেয়ে বরংগাইল হাটে আসেন তিনি। এ সময় তাকে ঘিরে ধরেন কৃষকেরা। করতে থাকেন নানা অভিযোগ। কৃষি কর্মকর্তা ডিলার মিজানুর রহমানের কাছে সারের তথ্য চাইলে নানা তালবাহানা করতে থাকে মিজান। পরে সার প্রাপ্তীর তথ্য দিলেও বিক্রির তথ্য দেননি তিনি। তবে জানা যায়, গতকাল রোববার বিএডিসি থেকে ১১৮ বস্তা টিএসপি সার উত্তোলন করেছেন ডিলার মিজানুর রহমান। আর রোববার ও সোমবার বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত বিক্রি করেছেন মাত্র ২৫ বস্তা টিএসপি সার। সে হিসেবে ৯৩ বস্তা টিএসপি স্টকে থাকার কথা। কিন্তু কৃষি কর্মকর্তা মেসার্স মিজান এন্টারপ্রাইজের স্টকে কোনো সার পাননি।
তবে আজ সোমবার মানিকগঞ্জের এক ডিলারের কাছ থেকে ৪০ বস্তা টিএসপি আনেন ডিলার মিজান। যেটা দেখে স্টক বুকে সাক্ষর করেন কৃষি কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে শিবালয় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ রিয়াজুর রহমান বলেন, বেশি দামে ও নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে সার বিক্রি করার নিয়ম নেই। কেউ যদি সার বিক্রিতে অনিয়ম করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন সুলতানা বলেন, আমি প্রশিক্ষণে ঢাকায় আছি। তবুও বিষয়টি দেখছি।

BBS cable ad

অটোমোবাইল এর আরও খবর: