শিরোনাম

South east bank ad

দ্বিতীয় দিনের পরিবহণ ধর্মঘটে বেনাপোলে আটকা পড়েছে ভারত ফেরত যাত্রীরা

 প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   অটোমোবাইল

মোঃ জামাল হোসেন, (বেনাপোল) :

জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে সারাদেশের সাথে শনিবার দ্বিতীয় দিনের মত বেনাপোলেও চলছে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট। বন্ধ রয়েছে আন্ত:জেলার সাথে বাস চলাচল। পরিবহন ধর্মঘটের কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। সকাল থেকে ছোট ছোট যান চলতে দেখা যায়। গণপরিবহন না চলার সুযোগে জরুরি কাজে বের হওয়া মানুষ পড়েছেন বিপদে। নিরুপায় হয়ে অনেকে বেশি ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন।

অঘোষিত গনপরিবহন ধর্মঘটে সব চেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে ভারত ফেরত পাসপোর্ট যাত্রীরা। শুক্রবার সকাল থেকে যাত্রীরা তাদের গন্তব্য পৌছাতে না পেরে ভিড় করছে পরিবহন কাউন্টারসহ হোটেলে। আবার অনেকে আত্মীয় স্বজনের বাড়িতেও যাচ্ছে। সব থেকে বেশী অসুবিধায় পড়েছে দুর দুরান্তর যাত্রীরা। অনেকে টাকা পয়সা না থাকায় পারছে না আবাসিক হোটেলে সীট নিতে।

বেনাপোল থেকে কোন পরিবহন ও বেনাপোল-যশোর সড়কে কোন বাস চলছে না। হুট করে দেওয়া এমন ধর্মঘটে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয় মানুষসহ ভারত ফেরত যাত্রীরা। আর এই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে অটোরিকশার, ভ্যান ও ইজিবাইক চালকরা। যে জায়গার ভাড়া সাধারণ সময়ে ১৫ টাকা ছিল সেই জায়গায় এদিনে তারা ২৫ থেকে শুরু করে ৩০ টাকা চাচ্ছেন।

তবে বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি স্বাভাবিক রয়েছে। দু‘দেশের মধ্যে পাসপোর্টযাত্রী চলাচল করলেও তার সংখ্যা কম।
এদিকে একটানা ধর্মঘট চললে বড় অসুবিধা হবে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে। বেনাপোল বন্দরের খালাসকৃত পণ্য গন্তব্য পৌছাতে না পারলে দেশের কলকারখানা পড়বে বিপাকে। কারন ভারত থেকে দেশের শিল্প কলকারখানার সিংহ ভাগ পণ্য আসে এ পথে। গতকাল শুক্রবার বন্ধ থাকার কারনে পণ্য খালাস বন্ধ ছিল। আজ শনিবার যদি এরকম ধর্মঘট থেকে যায় তবে আমদানিকৃত কাঁচা পণ্য ঢাকা, চট্রগ্রামহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যেতে না পারলে সেগুলো নস্ট হয়ে যাবে।

সাধারণ যাত্রীদের দাবি, দ্রুত যাতে এই ধর্মঘট প্রত্যাহার করে তাদের ভোগান্তি থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। বেনাপোল বাসস্ট্যান্ডে যাত্রী সোহেল রানা জানান, তিনি যশোর যাবেন ডাক্তার দেখাতে। সকালে বাস স্ট্যান্ডে এসে জানতে পারেন, পরিবহন ধর্মঘট। কোনো বাস চলছে না। বেনাপোল থেকে যশোর পর্যন্ত বাস ভাড়া ৫০ টাকা। বাস বন্ধ থাকায় ইজিবাইকে ভাড়া দাবি করছে দেড়শ‘ টাকা। কোনো উপায় না থাকায় ওই টাকা দিয়েই তাকে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে।

ইজিবাইক চালক বাবুল হোসেনকে ভাড়া বাড়িয়ে নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, পরিবহন বন্ধ থাকার কারণে তাদের আয় একটু বেশি হচ্ছে। তবে খরচও বাড়ছে। তাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বেশি ভাড়ায় যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দিচ্ছেন।

জ্বালানি তেলের দাম এক লাফে ১৫ টাকা বেড়ে যাওয়ার প্রতিবাদে গতকাল ৪ নভেম্বর ধর্মঘটের ডাক দেয় বিভিন্ন জেলার পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সংগঠন। তারা জানায়, জ্বালানি তেলের বর্ধিত দাম না কমানো ও বাস ভাড়া সমন্বয় না করা পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে।

ভারত থেকে আসা ঢাকার পাসপোর্ট যাত্রী আহসান হাবিব ইমন বলেন,আমি চিকিৎসা শেষে বেনাপোল এসে পড়েছি চরম দুর্ভোগে। আমি এবং আমার সাথে থাকা আমার এক ভাই দুইজন মিলে চেন্নাই থেকে ফিরে পরিবহন ধর্মঘট থাকায় বাড়ি যেতে পারছি না। এদিকে দেশের বাইরে প্রায় ১৫ দিন থাকায় টাকা পয়সাও ফুরিয়ে গেছে। এভাবে ধর্মঘট চললে আমাদের চরম সমস্যা হবে।

বরিশালের যাত্রী পারভিনা আক্তার সীমা বলেন, আমি একটি পরিবহন কাউন্টারে বসে আছি। যদি গাড়ি না ছাড়ে তবে কি ভাবে আমি বাড়ি যাব ভেবে পাচ্ছি না। ছোট ছেলে মেয়ে নিয়ে আমি চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে বিপদে পড়েছি।

বেনাপোল কুয়াকাটা এক্সপ্রেস কাউন্টারের ম্যানেজার জসিম উদ্দিন জানান, আকস্মিক ভাবে জ্বালানি তেলের মুল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় শুক্রবার ভাড়া সমন্বয় অথবা তেলের মুল্য কম না হওয়া পর্যন্ত চলবে অনির্দিষ্ট কালের জন্য পরিবহন ধর্মঘট। আমাদের দাবি তেলের মুল্য যখন বাড়ছে তখন ভাড়াও বাড়বে। নতুবা তেলের মুল্য কমাতে হবে। সরকার এই সিদ্ধান্তে না আসা পর্যন্ত দেশের সকল জেলায় চলবে পরিবহন ধর্মঘট।

শ্রমিক নেতারা বলেছেন, করোনা মহামারিতে সাধারণ মানুষের আয় ও জীবনযাপনে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। করোনার প্রকোপ কমে এলেও সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা এখনও স্বাভাবিক হয়নি। অধিকাংশ মানুষের আয় কমে গেছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ানোয় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বেড়ে যাবে। কারণ, ডিজেল-কেরোসিনের দাম বাড়ায় পরিবহন ও উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাবে। বাড়বে সব ধরনের পণ্যের মূল্যও।

যশোর জেলা পরিবহন সংস্থা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আজিজুল আলম মিন্টু জানান, করোনায় সবচেয়ে ক্ষতি হয়েছে পরিবহন খাতের। এমন সময়ে তেলের দাম এক লাখে ১৫ টাকা বৃদ্ধি এক প্রকার জুলুম। শ্রমিক ফেডারেশনের সারাদেশের দুইশ‘ শাখা ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ডিজেলের দাম না কমানো ও বাস ভাড়া সমন্বয় না করা পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে।

BBS cable ad

অটোমোবাইল এর আরও খবর: