হারাগাছ থানায় হামলার ঘটনায় অজ্ঞাত পরিচয়ের আসামি ৩০০
আমিনুল ইসলাম জুয়েল, (রংপুর) :
রংপুরের হারাগাছে আটকের পর পুলিশের নির্যাতনে তাজুল ইসলাম (৫৫) নামের এক ব্যক্তির মৃতুর অভিযোগে থানা ঘেরাও করে ভাঙচুর ও বিক্ষোভের ঘটনায় তিনটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে থানা ভাঙচুর, সরকারি কাজে বাধাসহ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির মামলায় অজ্ঞাত পরিচয়ের ৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। আরেকটিতে মাদক রাখার দায়ে নিহত তাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে এবং অপরটি অপমৃত্যুর(ইউডি) মামলা করা হয়।
বৃহস্পতিবার (৪ অক্টোবর) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেন হারাগাছ থানার ওসি শওকত আলী সরকার। তিনি জানান, থানা ভাঙচুর, সরকারি কাজে বাধাসহ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির মামলায় অজ্ঞাত পরিচয়ের ৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। হারাগাছ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল খালেক বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন। তবে এ মামলায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
নিহত তাজুল ইসলামের কাছে মাদক উদ্ধারের ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে হারাগাছ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রিয়াজুল ইসলাম বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। অপরটি নিহতের ছোট ভাই মর্তুজা রহমান আবু বাদী হয়ে হারাগাছ থানায় অপমৃত্যু (ইউডি) মামলা করেছেন।
এ ঘটনায় অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মেহেদুল করিমকে প্রধান করে গঠিত চার সদস্যের তদন্ত কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন উপপুলিশ কমিশনার আবু বকর সিদ্দীক ও কাজী মুত্তাকী ইবনু মিনান ও সহকারী পুলিশ কমিশনার আরিফুল ইসলাম।
এদিকে বুধবার বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আবদুল আলীম মাহমুদ (বিপিএম)। এ সময় নিহতের পরিবারের লোকজন, ঘটনার দিন প্রত্যক্ষদর্শী, স্থানীয় দোকানদার ও লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
পরিদর্শনকালে তার সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মেহেদুল করিম, উপপুলিশ কমিশনার (ডিবি) কাজী মুত্তাকি ইবনু মিনান, উপপুলিশ কমিশনার (সিটিএসবি) আবু বকর সিদ্দীক, উপপুলিশ কমিশনার (অপরাধ) আবু মারুফ হোসেন, উপপুলিশ কমিশনার (এস্টেট এন্ড ডেভেলপমেন্ট) আবু সায়েম, হারাগাছ থানা ওসি শওকত আলী সরকার ও পরিদর্শক তদন্ত ফিরোজ ওয়াহিদ।
প্রসঙ্গত, গত সোমবার সন্ধ্যায় রংপুরের হারাগাছ থানার পুলিশ নতুনবাজার বছি বানিয়ার তেপতিতে অভিযান চালায়। এ সময় হারাগাছের দালালহাট নয়াটারী এলাকার মৃত শওকত আলীর ছেলে তাজুল ইসলামকে মাদক সেবনের অভিযোগে আটক করে পুলিশ। এক পর্যায়ে ঘটনাস্থলে তাঁর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় পুলিশের নির্যাতনে তাজুলের মৃত্যুর অভিযোগ তোলে স্থানীয় লোকজন।
খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে হারাগাছ থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন। এ সময় ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ থানা ভবনে ভাঙচুর চালানো হয়। ভাঙচুর করা হয় ভবনের সামনে রাখা পুলিশ ভ্যান ও মোটরসাইকেল। পরে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
সোমবার রাতে তাজুলের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। ময়নাতদন্ত শেষে মঙ্গলবার বিকেলে তাজুল ইসলামের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হলে পারিবারিক কবর স্থানে দাফন করা হয়।