ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিতে দফায় দফায় নিষেধাজ্ঞা শুরু
এম.মিরাজ হোসাইন, (বরিশাল) :
নানা বিধিনিষেধের বেড়াজলে আটকে যাচ্ছে ইলিশ নিধন। রোববার দিবাগত মধ্যরাত থেকে আগামী বছরের ২৩ জুলাই পর্যন্ত টানা ৮ মাস ২৩ দিন ইলিশ আহোরনে নানা ধরনের বিধিনিষেধ পালিত হবে। ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য প্রতিবছর এসব পদক্ষেপ নেয়া হয়। এ পদক্ষেপের প্রথম ধাপ জাটকা নিধনে টানা ৮ মাসের নিষেধাজ্ঞা গতকাল রোববার মধ্যরাত ১২ টা থেকে (১ নভেম্বর) থেকে শুরু হবে।
মৎস্য অধিদপ্তরের বরিশাল দপ্তরের মৎস্য সম্প্রসারন কর্মকর্তা (ইলিশ) ড. বিমল চন্দ্র দাস বলেন, ২৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত আকারের (প্রায় ১০ ইঞ্চি) ইলিশকে জাটকা হিসাবে গণ্য করা হয়। নদ-নদীতে গত ৩-৪ মাসের মধ্যে যেসব মা ইলিশ ডিম ছেড়েছে, তা দিয়ে জন্ম নেয়া ইলিশের আকৃতি এখন ২৫ সেন্টিমিটারের মধ্যেই আছে। জন্মের পর থেকে একবছর বেঁচে থাকতে পারলে সেটি কমপক্ষে ১২ ইঞ্চি বা ১ ফুট আকৃতির বড় ইলিশে পরিনত হবে। এজন্য প্রতিবছর ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত জাটকা নিধনে ৮ মাসের নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। জাটকা নিধন বন্ধ করতে জেলেরা ৫ দশমিক ৬ সেন্টিমিটার কম ফাঁসের জাল ব্যবহার করলে তাদের জেল-জরিমানা করা হবে।
চাঁদপুর ইলিশ গবেষনা কেন্দ্রের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আনিছুর রহমান বলেন, মা ইলিশ সারাবছরই ডিম দেয়। তবে ৮০ ভাগ ইলিশ ডিম ছাড়ে আশ্বিনের পূর্ণিমায়। এজন্য প্রতিবছর আশ্বিনের পূর্ণিমা ও আমাবশ্যা মাঝে রেখে ২২ দিন ইলিশ নিধন বন্ধ রাখা হয়। এবছরের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে গত ২৫ অক্টোবর। ডিম ছাড়ার ৭০-৭২ ঘন্টার মধ্যে জন্ম নেয়া ইলিশের আকৃতির হয় এক সেন্টিমিটার। মা ইলিশ ও জাটকা ৬-৭ মাস পর্যন্ত নদীতে থাকে। তারমধ্যে ৩ মাস পর্যন্ত জাটকা মা ইলিশের সঙ্গে নদীতে ঘুরে বেড়ায়। আশ্বিনে প্রজনন হওয়া ইলিশ বাচ্চা মার্চ-এপ্রিলে ১২ থেকে ১৮ সেন্টিমিটারে পরিনত হবে। তখন এ ইলিশগুলো মা ত্যাগ করে অভ্যন্তরীন নদী-নদীতে স্বাধীনভাবে অস্বাভাবিক ছোটাছুটি করে। অপরদিকে মা ইলিশ বাচ্চা রেখে গভীর সাগরে চলে যায়। প্রজনের পর ইলিশের বাচ্চা নিয়মানুযায়ী বেড়ে ওঠা নিরাপদ করার জন্য প্রতিবছর ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত জাটকা নিধনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মৎস্য অধিদপ্তর।
আরও যেসব নিষেধাজ্ঞা থাকবে : অভ্যন্তরীন নদনদীতে শুধুমাত্র জাটকা নিধন নিষিদ্ধ হলেও পটুয়াখালীর আন্ধারমানিক নদীর ৪০ কিলোমিটারের অভায়শ্রমে রোববার মধ্যরাত থেকে আগামী বছরের ৩১ জানুয়ারী টানা ৩ মাস ইলিশ নিধন পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অন্যমাছ ধরার অজুহাতে ইলিশ নিধন করতে না পারে সেজন্য অভয়াশ্রমভূক্ত নদীতে নামতে পারবেন না জেলেরা। এ প্রসঙ্গে ড. আনিছুর রহমান বলেন, পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলা সংলগ্ন আন্ধারমানিক পয়েন্টের অভয়াশ্রমটি হচ্ছে বঙ্গোপসাগর লাগোয়া। অভ্যন্তরীন নদ-নদীর ইলিশের চেয়ে আগে এ পয়েন্টে মা ইলিশের প্রজনন হয়। যে কারনে এখানে তিনমাসের নিষেধাজ্ঞা পালিত হয় অন্যগুলোর চেয়ে আগে। আগামী মার্চ-এপ্রিল দুইমাস একই ধরনের নিষেধাজ্ঞা অপর ৫টি অভয়াশ্রমে পালিত হবে। এছাড়া অন্যান্য মৎস্য সম্পদের উৎপাদন বৃদ্ধিতে গভীর সাগরে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরা বন্ধ থাকবে আগামী বছরের ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত।
মৎস্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় দপ্তরের সহকারী পরিচালক নাজমুস সালেহিন বলেন, ৮ মাসের নিষেধাজ্ঞা পালনের জন্য জেলেদের প্রনোদনা হিসাবে প্রতিমাসে ৪০ কেজি করে চারমাসে ১৬০ কেজি চাল সহায়তা দেয়া হয়। বরিশাল বিভাগে তালিকাভূক্ত জেলে রয়েছে ৩ লাখ ৯৩ হাজার ১৯১ জন।
গতবছর চাল সহায়তা পেয়েছিল ২ লাখ ৩২ হাজার ৭১ জন জেলে। এবারও সমসংখ্যক কিম্বা কমবেশী পরিমান জেলে চাল সহায়তা পাবেন বলে দাবী করেন তিনি।