শেষ হলো গারো পাহাড়ে ২দিনব্যাপী ক্যাথলিক খ্রীষ্টানদের সর্ব বৃহৎ উৎসব তীর্থ যাত্রা
শেখ সাঈদ আহম্মেদ সাবাব, (শেরপুর) :
দুই বছর পর ক্যাথলিকদের আলোক মিছিলে আলোকিত হয়েছে শেরপুরের গারো পাহাড়। শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার গারো পাহাড়ের বারোমারী সাধু লিওর খ্রিস্টধর্ম পল্লীতে ক্যাথলিক খ্রীষ্টানদের সর্ব বৃহৎ উৎসব তীর্থ যাত্রা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এ উৎসবের প্রধান আকর্ষন হচ্ছে মোমবাতি প্রজ্জলন করে আলোক মিছিল। তবে গত বছর করোনার কারণে সীমিত পরিসরে পালন করা হয় এ উৎসব। তাই অনুষ্ঠিত হয়নি আলোক মিছিল। এ বছর উৎসব মুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো তীর্থ উৎসব। স্বাস্থ্য বিধি মেনে পালন করা হয় তীর্থযাত্রা। এখানে মা মারিয়ার কাছে বিশ্বকে করোনা মুক্ত করতে প্রার্থনা করা হয়। দেশের ক্যাথলিক প্রধান বলেন এ উৎসব সবার।
‘ভ্রাতৃত্ব সমাজ গঠনে ফাতেমা রাণী মা মারিয়া’ এই মুলসুরের উপর ভিত্তি করে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার বারমারী সাধু লিওর খ্রিস্টধর্ম পল্লীতে দুই দিনব্যাপী ২৪তম বার্ষিক ফাতেমা রাণীর তীর্থ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেল ৪ টায় মহা খ্রিস্টযাগের মাধ্যমে তীর্থ উৎসব শুরু হয় ৷ খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করেন বাংলাদেশের কার্ডিনাল পেট্রিক ডি রোজারিও সিএসসি ৷ তাকে সহযোগিতা করেন ময়মনসিংহ ধর্ম প্রদেশের বিশপ পনেন পৌল কুবি সিএসসি। রাত ৯ টায় অনুষ্ঠিত হয় বিশাল আলোক শোভাযাত্রা। তীর্থযাত্রায় অংশ নেয়া সারা দেশ থেকে আসা প্রায় ২০ হাজার রোমান ক্যাথলিক খ্রিস্ট ভক্ত তাদের হাতে মোমবাতি জালিয়ে আলোক শোভাযাত্রায়অংশ গ্রহণ করে। প্রায় তিন কিলোমিটার দীর্ঘ এ আলোক মিছিলে আলোকিত হয় গারো পাহাড়। এছাড়াও পাপ স্বীকার, নীশি জাগরণ অনুষ্ঠিত হয়।
আদিবাসী নেত্রী কেয়া নকরেক জানান, আমাদের বারোমারী মিশনে সারা দেশ থেকে ক্যাথলিকসহ সকল খ্রীষ্ট ধর্মাবলম্বীরা এখানে আসেন। মা মারিয়ার কাছে সাহায্য চাইতে। পরিবারের শান্তির জন্য। আর এ বছর আমরা মা মারিয়ার কাছে প্রার্থনা করছি, সারা বিশ্ব যেনো করোনা থেকে মুক্ত হতে পারে।
পর্তুগালের তিব্বত শহরের ফাতেমা রাণীর তীর্থর আদলে গড়ে ওঠা বারোমারী লিওর খ্রিস্টধর্ম পল্লীতে ১৯৯৮ সাল থেকে শুরু হয় তীর্থ যাত্রা। এর পর থেকেই প্রতি বছরই অক্টোবর মাসের শেষ বৃহস্পতি ও শুক্রবার দু দিন ব্যাপী তীর্থ যাত্রা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এতে সারা দেশের ক্যাথলিক খ্রীষ্টানসহ বিশ্বের আরো বেশ কয়েকটি দেশ থেকেও ক্যাথলিকদের অংশ নিতে দেখা যায়। কিন্তু গত বছর মহামারী করোনার কারণে তীর্থ যাত্রা হয় সংক্ষিপ্ত। এ বছর করোনা নিয়ন্ত্রনে চলে আসায় স্বাস্থ্য বিধি মেনে তীর্থ উৎসবের আয়োজন করা হয়।
এদিকে তীর্থযাত্রা নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে আইন শৃঙ্খলা বিভাগের পক্ষ থেকে নেয়া হয় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। নিয়োজিত থাকে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ৩০০ সদস্য। তিন স্তরের নিরাপত্তা বিধানে সাদা পোষাকেও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত থাকে। এছাড়া পুরো এলাকা সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়।
এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার হাসান নাহিদ চৌধুরী জানান, আমরা এ তীর্থ উৎসবকে সফল করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছিলাম।
শেরপুরের জেলা প্রশাসক মো: মোমিনুর রশিদ জানান, ক্যাথলিক খ্রীষ্টানদের বৃহৎ এ উৎসব সম্পন্ন করতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও সার্বিক সহযোগিতা করা হয়েছে। আমরা সব সময় এর খোজ খবর রেখেছি। এ প্রস্তুতি নেয়া হয় আমাদের সবার সহযোগিতায় এ উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়।
এদিকে ক্যাথলিকদের সারা দেশের প্রধান বাংলাদেশের কার্ডিনাল পেট্রিক ডি রোজারিও সিএসসি সাংবাদিকদের জানান, এ উৎসব শুধু ক্যাথলিকদের নয় সবার। কারণ মা মারিয়া সবার মঙ্গল করে থাকেন। তিনি শেরপুরে সম্প্রীতি ও প্রশাসনিক সহযোগিতায় সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি সম্প্রিতি বজায় রাখতে সবার মনোভাব এমনই হওয়া উচিৎ বলে মনে করেন।
খ্রীষ্টযাগের মাধ্যমে তীর্থযাত্রা শুরু হয়ে শুক্রবার সকালে জীবন্ত ক্রুশের পথ ও মহা খ্রিস্টযাগের মাধ্যমে তীর্থ উৎসবের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
তীর্থ উৎসব-২০২১ সমন্বয়কারী রেভারেন্ড ফাদার তরুণ বানোয়ারী সবার সহযোগিতা করায় জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধি সবাইকে ধন্যবাদ জানান।