বাড়তি টাকা ছাড়া মিলছে না মনোনয়নপত্র!
প্রদীপ মোহন্ত, (বগুড়া) :
বগুড়ার শেরপুরে দ্বিতীয়দফায় অনুষ্ঠিতব্য ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে ঘুষ বাণিজ্যে মেতে উঠেছেন সংশ্লিষ্ট নির্বাচন অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। নির্বাচনে চেয়ারম্যান, সংরক্ষিত নারী ও সাধারণ সদস্য (মেম্বার) পদে ইচ্ছুক প্রার্থীদের নিকট থেকে মনোনয়নপত্র উত্তোলনের সময় বাড়তি টাকা নেওয়া হচ্ছে। অফিস খরচের নামে এই ঘুষের টাকা উত্তোলন করে চলেছেন তারা। অন্যথায় মিলছে না মনোনয়নপত্র। এমনকি তাদের দাবিকৃত টাকা দিতে অস্বীকার করলে মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় ভুল ধরাসহ নানা হয়রানী শিকার হতে হবে বলেও হুমকি-ধামকি দেওয়ার অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই তাদের দাবি অনুযায়ী টাকা দিচ্ছেন তারা।
সংশ্লিষ্ট অফিস সূত্রে জানা যায়, দ্বিতীয় দফায় আগামি ১১নভেম্বর এই উপজেলার দশটি ইউনিয়নের মধ্যে নয়টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। ঘোষিত তফশীল অনুযায়ী চলতি মাসের ১৭অক্টোবরের মধ্যে মনোনয়নপত্র দাখিল করতে হবে। তাই নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক প্রার্থীরা উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে মনোনয়ন পত্র উত্তোলন করছেন। রোববার ১০অক্টোবর পর্যন্ত নয়টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যানসহ তিনটি পদের বিপরীতে মোট ১৪০টি মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হয়েছে বলে জানায় সূত্রটি।
এদিকে নির্বাচন কমিশনের বিধি অনুযায়ী চেয়ারম্যান পদে পাঁচ হাজার টাকা, সিডি বাবদ পাঁচশ’ টাকা এবং সংরক্ষিত নারী ও সাধারণ সদস্য (মেম্বার) পদের জন্য এক হাজার টাকা এবং সিডি বাবদ পাঁচশ’ টাকা ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে পরিশোধ করতে হবে আগ্রহী প্রার্থীদের। এরপর নির্বাচন কর্মকর্তার অফিস থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতে পারবেন। এর বাইরে আর কোনো বাড়টি টাকার প্রয়োজন নেই বলে সূত্র জানায়। কিন্তু এসব প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করে নির্বাচন কর্মকর্তার অফিসে গিয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে না।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করতে গেলে বাড়তি টাকা গুণতে হচ্ছে তাদের। প্রত্যেক প্রার্থীর নিকট থেকে এক হাজার করে টাকা নিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট অফিসের প্রধান কর্তার নির্দেশে কর্মচারীরা। টাকা না দিলে মিলছে না মনোনয়ন ফরম। তাদের কাছ থেকে অনেকটা জোরপূর্বক এই টাকা আদায় করা হচ্ছে। এভাবে সংশ্লিষ্টরা আগামি ১৭অক্টোবর পর্যন্ত প্রার্থীদের নিকট থেকে এই মোটা অঙ্কের টাকা আদায়ের মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
চেয়ারম্যান পদে আসাদুল ইসলাম, সংরক্ষিত পদে মনোনয়নপত্র তুলতে আসা মাজেদা বিবি, সাধারণ সদস্য পদে বাবু মিয়া, আল আমিন মন্ডল, নুরুল ইসলামসহ একাধিক প্রার্থী অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচন অফিসের কর্মকর্তারা তাদের প্রত্যেকের নিকট থেকে বাড়তি এক হাজার করে টাকা নিয়েছেন। তবে এই বাড়তি টাকা নেওয়ার বিপরীতে কোনো রশিদ বা ডকুমেন্টস দেননি। হয়রানীসহ নানা হুমকি-ধামকিতে ভয়ে বাধ্য হয়েই টাকা দিয়েছেন। এভাবে অদ্যবধি প্রার্থীদের নিকট থেকে এক লাখ চল্লিশ হাজার টাকা আদায় করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তারা।
এ প্রসঙ্গে বক্তব্য জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোছা. আছিয়া খাতুন নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, তার দফতরের কর্মচারীরা এই ধরণের কাজ করেছেন কী-না তা আমার জানা নেই। তবে বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজখবর নেবেন। সেইসঙ্গে এমন কিছু করা হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে দাবি করেন তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ময়নুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, এ ধরণের বিষয় নিয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। তাই বিষয়টি আমার জানা নেই। তিনিও বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান এই নির্বাহী কর্মকর্তা।