শিরোনাম

South east bank ad

রাবিতে কখনও কোন সাম্প্রদায়িক শক্তি মাথা চাড়া দিতে পারবে না: উপাচার্য

 প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   অটোমোবাইল

আমজাদ হোসেন শিমুল, (রাজশাহী ব্যুরো) :

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেছেন, ‘আমরা গোটা বিশ্বকে একটা মেসেজ দিতে চাই, শহীদ জোহার রক্তাক্ত এই বিশ্ববিদ্যালয় চিরদিনই অসাম্প্রদায়িক। আমরা সম্প্রীতির বন্ধনে একে অপরের সাথে জড়িত। আমরা চিরকাল থাকব এবং আমদের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কখনও কোন সাম্প্রদায়িক শক্তি মাথা চাড়া দিতে পারবে না।’

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূজামন্ডপ-ঘরবাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদ এবং বিচারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আয়োজনে এক মানববন্ধনে এসব কথা বলেন উপাচার্য। সোমবার (২৫ অক্টোবর) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায় সাম্প্রদায়িকতার ঠাঁই নাই’ স্লোগানে কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

উপাচার্য আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় এমন একটি যায়গা যেখান থেকে আমরা সম্প্রীতির বাণী ছড়িয়ে দিতে পারি। ধর্মের রাজনীতি ও ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতির মধ্যে ব্যাপক ফারাক আছে। রাজনীতির ধর্ম, রাষ্ট্রের ধর্ম এবং মানবিকতার ধর্ম আজ ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতির কাছে বিপন্ন। এটা কেন হলো যেটার সমাধান আমরা সেই ১৯৭১ এই করে ফেলেছি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে একটা স্বাধীন সার্বভৌম দেশ চার মূলনীতির ওপর দাড় করিয়ে যেখানে একটি ছিল অসাম্প্রদায়িকতা। আড়াইশ বছর পূর্বে সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি বিনাশের যে আগুন দেওয়া হয়েছিল তা আজ লেলিহান শিখায় পরিণত হয়েছে। পুড়ছে ঘরবাড়ি, পুড়ছে জনপদ, পুড়ছে মানুষ। পুড়ে অঙ্গার হয়ে যাচ্ছে আত্ম মানবিক সম্পর্ক। আমরা আবহমান বাংলায় সহস্র বছর ধরে সম্প্রীতির নিগূঢ় বন্ধনে ণিকন উঠান। যেখানে আমরা বড় হয়েছি অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ধারণ করে।’

তিনি বলেন, ‘৭৫ পরবর্তী উল্টোদিকে যাওয়ার যে নীতি গঠিত হয়েছিল, শিক্ষা কারিকুলামে যেখানে অযাচিত ধর্মকে ব্যবহার করা হয়েছিল বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যক্তির ফতোয়া, ওয়াজ, নারীদের প্রতি অসম্মান এ ধরনের যে চর্চা সেটারই ফল আজকের এই ঘটনা। আমরা যদিও বলি বাংলাদেশের অগণিত মানুষই অসাম্প্রদায়িক, কিন্তু কিছু নগণ্য মানুষ এই অগণিতদের মধ্যে আছে। আমাদের আজকের যে স্লোগান ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার ঠাঁই নেই’ এটিকে জাগরিত করতে হলে সম্প্রীতির বীজ বপন করতে হবে।

নাট্যজন ও ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক মলয় ভৌমিক বলেন, ‘দেশে কোনো অন্যায় হলে, অবিচার হলে সাধারণভাবে দেখা যায় যে, রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন বা পেশাজীবী সংগঠন মাঠে নেমে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বা প্রতিষ্ঠানের কাছে দাবি জানায়। তবে আমাদের আজকের এই কাজের একটি বড় ব্যতিক্রম হলো স্বয়ং প্রতিষ্ঠান এই অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে আজ মাঠে নেমেছে। অর্থাৎ এই প্রতিষ্ঠান বলতে চায় এই ইস্যুতে কোনো পক্ষ বিপক্ষ নেই, যেটা আমাদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন।’

তিনি বলেন, ‘আমরা শুনেছি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল এবং সংখ্যালঘু সুরক্ষা কমিশন করার কথা সরকারের রয়েছে। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল তখনই আসবে যদি তদন্তটি সময়মত হয়। ২০১৬ সালে নাসিরনগরে যে ঘটনা ঘটল সেটি এখনো সাধারণ বিচারালয়েই আসেনি, তাহলে বিচার হবে কী করে? কারণ তদন্তই হয়নি। তাই দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের সঙ্গে এমন একটি আইন করা হোক যে, সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় সর্বোচ্চ তিন
মাসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে হবে। এরকম একটি আইন না করলে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল করে কোনো লাভ নেই।’

মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক শাহ্ আজম বলেন, ‘দেশ যখন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করছে, অসাম্প্রদায়িক চেতনায় এগিয়ে যাচ্ছে, তখন অসাম্প্রদায়িক বাংলায় আবার দেখছি সাম্প্রদায়িক হায়েনার বিচরণ। কেন এই সম্প্রীতি বিনষ্টের ষড়যন্ত্র তা বুঝতে খুব বেশি শিক্ষিত হতে হয় না। বাংলাদেশ যখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনঃপ্রবর্তনের চেষ্টায় আছে, এই সংগ্রামে যখন প্রায় বিজয়ী বাংলাদেশ এবং অর্থনৈতিকভাবে তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছে তখন এটা দেখে বিশ্ববাসীর অনেকে হতবাক হয়েছেন এবং অনেকের ঈর্ষার কারণ হয়েছে।’

কর্মসূচিতে অন্যদের মধ্যে সহ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়া ও অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম, শিক্ষক সমিতির সহ-সভাপতি অধ্যাপক মো. সাইয়েদুজ্জামান, প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের পক্ষে অধ্যাপক আসাবুল হক, আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক হাসিবুল আলম প্রধান, অফিসার সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাব্বেল হোসেন, সহায়ক কর্মচারী সমিতির সভাপতি সাব্বির হোসেন, সাধারণ কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আজিজ, পরিবহন সমিতির সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন সেলিম বক্তব্য দেন। এ সময় প্রায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন।

BBS cable ad

অটোমোবাইল এর আরও খবর: