নিজেদের মন-মগজে অসাম্প্রদায়িকতা চর্চা করতে হবে : রাবি উপাচার্য

আমজাদ হোসেন শিমুল, (রাজশাহী ব্যুরো) :

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেছেন, ‘সাম্প্রদায়িকতার বীজ আমাদের মধ্যেই আছে। এটির নিরাময়ের জন্য বক্তৃতা ও আন্দোলন করে কোন কিছু হবে না। নিজেদের জীবনযাপনের মধ্যে অসাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মনিরপেক্ষতার চর্চা না করতে পারলে সাম্প্রদায়িকতা থেকে বের হওয়া সম্ভব নয়। তাই নিজেদের বাড়িতে, মননে ও পাঠ্যবইয়ে অসাম্প্রদায়িকতার চর্চা করতে হবে।

সারাদেশে সনাতনী হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির ভাঙচুর ও সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদ এবং বিচারের দাবিতে আয়োজিত এক মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করে উপাচার্য এসব কথা বলেন। বৃহস্পতিবার (২১ অক্টোবর) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ’ এর ব্যানারে মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

কর্মসূচিতে উপাচার্য বলেন, ‘মধ্যযুগের যখন চার্চ থেকে ধর্ম আলাদা হয়ে গেছে তখন আলোকায়নের যুগ শুরু হয়েছে। ধর্ম যার যার এটি ব্যক্তির কাছে থাকবে। রাষ্ট্রের সাথে ধর্মের মিল করা যাবে না। ধর্মীয় উগ্রবাদ যত আসবে, প্রগতির চাকা তত উল্টো দিকে ঘুরবে।’

উপাচার্য আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতির জনকের কন্যার যে উন্নয়ন ও অগ্রগতি সেটিকে পিছিয়ে ফেলতেই কিছু দুষ্কৃতিকারী মাঝেমধ্যে জেগে উঠে। কেন তারা সুযোগ পায়? সেটি নিয়ে আরো সতর্ক হতে হবে। শুধু রাষ্ট্রের উপর নির্ভর করবো না। আমরা সকলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হলেই এই অপশক্তিকে দূর করা সম্ভব হবে। এছাড়া ক্যাম্পাসে মধ্যে কোন ধরনের সাম্প্রদায়িকতা ছড়ালে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কর্মসূচিতে বাংলা একাডেমির পুরস্কার প্রাপ্ত ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক মলয় ভৌমিক বলেন, এই একবিংশ শতাব্দীতে আমরা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবনে এক ভিন্ন উপসর্গ লক্ষ করছি। আমরা বলছি আমরা এগোচ্ছি, কিন্তু না। ভারত উপমহাদেশসহ বিশ্বের উন্নত দেশেও ধর্ম, বর্ণ, জাতি, আঞ্চলিকতা এসব বিষয়কে উসকে দিয়ে ফায়দা লোটার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমাদের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা আমরা আমাদের তরুণ যুব সমাজকে তৈরি করতে পারছি না। সম্প্রতি যে ঘটনাগুলো ঘটেছে তাতে শুধু স্থানীয়ভাবে যারা জড়িত তাদের হাতই নেই। এর সাথে সম্পৃক্ত আন্তর্জাতিক ব্যবসা বাণিজ্য, ভূ-রাজনৈতিক অবস্থা। এই যায়গাগুলোতে যদি আমরা উন্নতি করতে না পারি তাহলে এমন ঘটনা কিন্তু বারংবার ঘটতেই থাকবে।

গণযোগাযোগ ও সংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পা-ের সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়া ও অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম, সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমারা সাহা, মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক শাহ আজম শান্তুনু প্রমুখ। এছাড়া বিভিন্ন বিভাগের শতাধিক শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে, একই দাবিতে ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে মনববন্ধন কর্মসূচ পালন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি।