শিরোনাম

South east bank ad

মানবতার ডাকে সারা দিন ‘হৃদয়ের বন্ধন ব্লাড ব্যাংকে’ এসে রক্ত দিন

 প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০২১, ১২:০০ পূর্বাহ্ন   |   অটোমোবাইল

মোঃ জামাল হোসেন, (বেনাপোল) :

করোনাকালীন সময়ে তৈরি অনলাইন ভিত্তিক সামাজিক সংগঠন ‘হৃদয়ের বন্ধন ব্লাড ব্যাংক’ অসহায় রোগীদেরকে বিনামূল্যে রক্তদানের মাধ্যমে যশোরের শার্শার বাগআঁচড়া অঞ্চলের মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে।

যশোরের শার্শা, ঝিকরগাছা ও সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার সংযোগস্থল বাগআঁচড়া। এই বাগআঁচড়া অঞ্চলের স্কুল-কলেজে পড়াশুনা করে এমন কয়েক জন ছাত্র ঐক্যবদ্ধ হয়ে ‘রক্তের প্রয়োজন হয় জীবনের তরে, রক্তদাতা তৈরী হোক প্রতি ঘরে ঘরে’ এই শ্লোগানে ২০২০ সালের ৭ জুন প্রতিষ্ঠা করেন ‘হৃদয়ের বন্ধন ব্লাড ব্যাংক’ নামের অনলাইন ভিত্তিক এই সামাজিক সংগঠনটি। উদ্দেশ্য ছিল সাধারণ মানুষের কল্যানে কাজ করা, তাদের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসা।
বাগআঁচড়ায় অন্তত ১০টি বেসরকারি হাসপাতাল আছে। যেখানে কোন ব্লাড ব্যাংক নেই। রক্তের প্রয়োজনে ছুটতে হয় ৩৫ কিলোমিটার দুরের জেলা শহর যশোর কিম্বা সাতক্ষীরায়। রক্ত সংরক্ষণের কোন ব্যবস্থা না থাকায় তাৎক্ষণিক ‘রক্তের প্রয়োজন’ এরাই মিটিয়ে থাকে।সংগঠনটির সভাপতি মিছবাউল হক বলেন, যেদেশে ২৫০মিলি পানি ১৫ টাকা দিয়ে কিনে খেতে হয়, সেখানে ৪৫০ মিলি রক্ত বিনামূল্যে মানুষকে দিয়ে জীবন বাঁচাতে পারছি, এর থেকে বড় সফলতা আর হতে পারে না।

আমরা মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে ঘরে ঘরে রক্তদাতা তৈরির কাজটি করছি। ১৫ জন সদস্য নিয়ে সংগঠনটি দাঁড় করলেও আজ বছর যেতে না যেতেই রক্তদাতার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩০০ জনে।

ঝিকরগাছা উপজেলার কুলবাড়িয়া গ্রামের দিনমজুর মাসুম বিল্লার সাত বছরের মেয়ে তাহিয়া থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত। মাসে মাসে এক ব্যাগ এবি পজেটিভ রক্ত দিতে হয়।

তাহিয়ার মা রহিমা খাতুন বলেন, মেয়েটা জটিল রোগে আক্রান্ত। তার শরীলি রক্ত থাকে না। মাসে মাসে এক ব্যাগ করে রক্ত দিতি হয়। গরীব মানুষ রক্ত কিনার টাকা পাবো কনে? ছেলেগুলো আছে বলেই তো আমার মেয়েটা এখনো বেঁচে আছে।

ঝিকরগাছা উপজেলার কুলবাড়িয়া গ্রামের আব্দুল আজিজ (৫০) এই সংগঠনের হয়ে সবচেয়ে বেশি বার রক্ত দিয়েছেন।
আব্দুল আজিজ বলেন, মুমূর্ষু রোগীর রক্ত দেওয়া আমার নেশায় পরিনত হয়েছে। ছোটবেলা থেকেই রক্ত দিয়ে আসছি। রোগীর যখন যেখানে প্রয়োজন সেখানে স্ব-শরীরে হাজির হয়ে রক্তদান করি। এ পর্যন্ত আমি ২৬ বার রক্ত দিয়েছি।
বাগআঁচড়ার জোহরা মেডিকেল সেন্টারের পরিচালক অর্থপেডিক সার্জন ডা. হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, হৃদয়ের বন্ধন ব্লাড ব্যাংকের মাধ্যমে এই এলাকার সাধারণ রোগীদের রক্তের চাহিদা মিটে যায়। তারা কোন রকম খবর পেলেই ডোনার নিয়ে এসে মুমূর্ষু রোগীর পাশে দাঁড়ায়।

হৃদয়ের বন্ধন ব্লাড ব্যাংক এর সাধারণ সম্পাদক নয়ন মজুমদার বলেন, এই সংগঠনের ১৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি আছে। কিন্তু কাজ করছেন ২৭ জন স্বেচ্ছাসেবক। এ পর্যন্ত ৩০০ জনেরও বেশি ‘রক্তদাতা’ এই সংগঠনের ‘ডোনার’ সদস্য হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন। তবে এরা কেউ পেশাদার রক্তদাতা নন। এ পর্যন্ত সংগঠনের পক্ষ থেকে ৩২৫ জন রোগীকে রক্ত দিয়ে সুস্থ্য করে তুলেছি।সাতমাইল বাগআঁচড়ার বেসরকারি হাসপাতাল ‘রুবা ক্লিনিকের’ পরিচালক ডা. আহসান হাবিব রানা বলেন, এই ছেলেরা মানবতার সেবাই নিজেদেরকে যুক্ত রেখেছেন। তাদেরকে আর্থিক সহায়তা দিয়ে রক্ত সংরক্ষণের কোন ব্যবস্থা করা গেলে এলাকার উপকার হতো।

সংগঠনের সহ-সভাপতি কবিরুল ইসলাম বকুল বলেন, আমরা সবাই পড়াশোনা করি। পড়াশোনার ফাঁকে মানব কল্যানে কাজ করার চেষ্টা করছি। রক্ত কখনো টাকায় বিক্রি করি না। বিত্তবানরা যদি কেউ এগিয়ে এসে আমাদের পাশে দাঁড়ায় তবে আমরা আমাদের লক্ষে পৌঁছাতে সক্ষম হবো।

বাগআঁচড়া ইউপি চেয়ারম্যান ইলিয়াছ কবির বকুল বলেন, হৃদয়ের বন্ধন ব্লাড ব্যাংক এখন একটি পরিবার। অল্পদিনেই তাদের ব্যাপক পরিচিতি ও সুখ্যাতি হয়েছে। গ্রামের লোকজনের রক্তের প্রয়োজন হলে আগে হা-হুতাশ করত। এখন তারা বিনাপয়সাতে রক্ত পাচ্ছে। তবে এদের আগে থেকে রক্ত সংরক্ষণ করে রাখার কোন ব্যবস্থা না থাকায়, রোগীর প্রয়োজনে সেখানে ডোনার স্ব-শরীরে যেয়ে রক্তদান করেন।

BBS cable ad

অটোমোবাইল এর আরও খবর: