রাজশাহীতে ৪৫৬ মন্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা, জোরতালে চলছে প্রস্তুতি
আমজাদ হোসেন শিমুল, (রাজশাহী ব্যুরো) :
করোনার প্রাদুর্ভাব অনেকটাই কেটেছে। সেই সঙ্গে কেটেছে ভয়-শঙ্কাও। অনেকটাই উৎসবমুখর পরিবেশে চলছে এবারের শারদীয় দুর্গাপূজার প্রস্তুতি। হিন্দু ধর্মাবলাম্বীদের সবচেয়ে বড় এ ধর্মীয় উৎসবের প্রস্তুতিপর্বে চিরচেনা সেই উৎসবের আমেজ কিছুটা হলেও ফিরে এসেছে। ম-প-মন্দিরে পূজার প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত ভাবও চোখে পড়ার মতো।
তবে করোনার সংক্রমণ এড়াতে গত বছরের মতো এবারও বাড়তি সতর্কতা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনেই দুর্গাপূজা উদযাপনের নির্দেশনা প্রশাসনের। রাজশাহীতে এবার ৪৫৬টি ম-পে এবার শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এর মধ্যে ৭৫টি পূজা মন্ডপে প্রস্তুত হচ্ছে রাজশাহী মহানগর এলাকায়। আর বাকি ৩৮১টি মন্ডপে রাজশাহীর ৯ উপজেলায়। দুর্গাপূজা নির্বিঘ্নে করতে এরই মধ্যে একটি প্রস্তুতিসভা করে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ইতোমধ্যে মন্ডপে সাজানোর কাজ শুরু হয়েছে। প্রতিমা শিল্পীরাও এখন রংতুলির আঁচড়ে দেবীদূর্গাকে সাজিয়ে তোলার কাজ করছেন। সময়মতো প্রতিমা সরবরাহ করতে দিনরাত এক করে কাজ করছেন তাঁরা। রাজশাহীতে এ বছর গতবারের চেয়ে ১০টি মন্ডপে পূজা কম হচ্ছে। তাও কাজের চাপ কমেনি বলে জানিয়েছেন প্রতিমা শিল্পীরা।
জেলা প্রশাসনের প্রস্তুতিসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পূজা অর্চনাতেও মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি। পুরোহিত ও পূজারিদের বাধ্যতামূলক মাস্ক পরতে হবে। মন্ডপে রাখতে হবে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও সাবান-পানি। প্রতিমা বিসর্জনের সময় শোভাযাত্রা করা যাবে না। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, মহানগর পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়, পুলিশ সুপারের (এসপি) কার্যালয় এবং প্রতিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে বসানো হবে একটি করে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। কোথাও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবণতি হলে এই কন্ট্রোল রুমকে তাৎক্ষণিক জানাবে পূজা মন্ডপে কমিটি। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাজশাহী মহানগর হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল কুমার ঘোষ সবাইকে শারদীয় শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছেন, তাঁরা সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিটি মন্ডপে পুলিশের পাশাপাশি আনসার বাহিনীর সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবকরা দায়িত্ব পালন করবেন।
জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল জানান, পূজা মন্ডপে ঘিরে বখাটেদের উৎপাত হলে পুলিশ কঠোর ব্যবস্থা নেবে। প্রতিটি পূজা মন্ডপে যাওয়া এবং বের হওয়ার জন্য নারী ও পুরুষের জন্য আলাদা আলাদা গেট থাকবে। এবার পূজা চলাকালে ভক্তি সংগীত ছাড়া অন্য কোন গান না বাজানোরও সিদ্ধান্ত হয়েছে প্রস্তুতিসভায়। পূজা ঘিরে কোথাও মেলা কিংবা অন্য অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা যাবে না।
গত ৬ অক্টোবর ছিলো শুভ মহালয়া। সেদিনই শারদীয় দুর্গোৎসবের পুণ্যলগ্নের দিন। পূরাণমতে, শুভ মহালয়াতেই দেবী দুর্গার আবির্ভাব ঘটে। সেদিনই দেবীর চক্ষুদান করা হয়। আগামীকাল সোমবার মহাষষ্ঠীতে মন্ডপে উঠবে দেবী দূর্গা। তারপর দশভুজা দেবী দুর্গার বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হবে মূল আনুষ্ঠানিকতা। এরপর মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) মহাসপ্তমী, বুধবার (১৩ অক্টোবর) মহাষ্টমী এবং বৃহস্পতিবার (১৪ অক্টোবর) মহানবমী অনুষ্ঠিত হবে। তারপর শুক্রবার (১৫ অক্টোবর) বিজয়া দশমী ও প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিনের শারদীয় দুর্গোৎসব।